ORS আবিষ্কার করেছিলেন এই বাঙালি! আজও বাঁচিয়ে চলেছেন কোটি কোটি মানুষের প্রাণ - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Tuesday 28 May 2024

ORS আবিষ্কার করেছিলেন এই বাঙালি! আজও বাঁচিয়ে চলেছেন কোটি কোটি মানুষের প্রাণ

 


ORS আবিষ্কার করেছিলেন এই বাঙালি! আজও বাঁচিয়ে চলেছেন কোটি কোটি মানুষের প্রাণ


প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ২৮ মে: পেট খারাপ, বমি হলেই অবর্থ্য নুন-চিনির জল। ডিহাইড্রেশন হোক বা ডায়েরিয়া সবচেয়ে আগে ORS খাওয়ানোরই নিদান দেন ডাক্তারবাবুরা। হাসপাতালে ভর্তি, স্যালাইন ওয়াটার চালু অনেক পরের ব্যাপার--ধুঁকতে থাকা রোগীর কাছে মৃত সঞ্জীবনী হয়ে ওঠে ওআরএসই। এই ওআরএস যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত, সেই চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আবিষ্কারক ডা. দিলীপ মহলানবিশের জীবনাবসান হয় ১৬ই অক্টোবর ২০২২ সালে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।


১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে বনগাঁর একটি শরণার্থী শিবিরে কলেরা ভয়াবহ মহামারী হয়ে দেখা দেয়। সেই সময় স্যালাইন ওয়াটারের পর্যাপ্ত জোগান ছিল না। ডা. দিলীপ মহলানবিশ সেই সময় রিফিউজি ক্যাম্পে কলেরা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করতে যান। তিনি তখন জনস হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর মেডিকেল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ে গবেষণা করছেন। জন হপকিনস ইউনিভার্সিটির সাহায্যে ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট বা ORS তৈরি করেন তিনি। শরণার্থী শিবিরের রোগীদের এই নুন-জল খাওয়াতেই ম্যাজিকের মতো কাজ হয়। সেই ১৯৭১ সাল থেকে আজ অবধি বিশ্ব জুড়ে কম করেও ৭ কোটি মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে ডা. মহলানবিশের তৈরি ওআরএস।

এক লিটার জলে ৬ চামচ চিনি আর হাফ চামচ নুন--বাড়িতেই বানিয়ে ফেলা যায় ORS। ১৯৭৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO স্বীকৃতি দেয় এই আবিষ্কারকে।

১৯৫৯ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেন ডা. মহলানবিশ। ১৯৬০ সালে লন্ডনে চলে যান। ডিসিএইচ এবং এমআরসিপি করেন। কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্র্যাকটিস শুরু করেন। এরপরে গবেষণা জন হপকিনস ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর মেডিক্যাল রিসার্চে। ১৯৬৪ সালে দেশে ফেরেন তিনি। বেলেঘাটায় জন হপকিন্সেরই একটি সেন্টারে কাজ শুরু করেন।


১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভিটেমাটি হারিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ এ দেশে এসে শরণার্থী শিবিরগুলিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বনগাঁ সীমান্তের কাছে শরণার্থী শিবিরগুলিতে সেই সময় কলেরার প্রকোপ শুরু হয়। শয়ে শয়ে মানুষ মরতে থাকে। কলেরায় ভোগা রোগীদের চিকিৎসা করতে ছুটে আসেন ডা. মহলানবিশ। তখনও পর্যন্ত ডায়েরিয়ার একমাত্র চিকিৎসা ছিল তরল স্যালাইন দেওয়া ইনজেক্ট করা (ইনট্রাভেনাস)। কিন্তু, চাহিদা অনুযায়ী শিবিরে পর্যাপ্ত স্যালাইন ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে ডা. দিলীপ মহলানবিশ জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর মেডিকেল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের সহায়তায় ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপি বা ওআরটি করার ঝুঁকি নিয়েছিলেন। চার চা চামচ টেবিল সল্ট, তিন চা চামচ বেকিং সোডা এবং ২০ চা চামচ বাণিজ্যিক গ্লুকোজের মিশ্রণে ওআরএস তৈরি করেছিলেন তিনি। তাঁর ওষুধ কাজ করেছিল ম্যাজিকের মতো। উদ্বাস্ত শিবিরে কলেরায় মৃত্যুহার কমে গিয়েছিল। তাঁর এই আবিষ্কার আজও বহু মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছে। ঘরে ঘরে আর কোনও ওষুধ থাকুক না থাকুক, ওআরএস সকলেই মজুত করে রাখেন।


চিকিৎসাশাস্ত্রে অসামান্য অবদানের জন্য পোল্লিন ও মাহিডোল পুরস্কার পেলেও, নোবেল অধরাই থেকে গিয়েছিল এই বাঙালি বিজ্ঞানীর।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad