দেশে চতুর্থ দফার নির্বাচন শেষ; একাধিক জায়গায় সহিংসতা - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Monday 13 May 2024

দেশে চতুর্থ দফার নির্বাচন শেষ; একাধিক জায়গায় সহিংসতা


দেশে চতুর্থ দফার নির্বাচন শেষ; একাধিক জায়গায় সহিংসতা



কলকাতা: দেশ জুড়ে সাত দফা লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোট গ্ৰহণ সম্পন্ন হল সোমবার। এই ধাপে ১০টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জুড়ে ৯৬ টি সংসদীয় আসনে ভোট নেওয়া হয়। এই কেন্দ্রগুলি হল অন্ধ্রপ্রদেশের (২৫), তেলেঙ্গানা (১৭), উত্তরপ্রদেশ (১৩), মহারাষ্ট্র (১১), পশ্চিমবঙ্গ (৮), মধ্য প্রদেশ (৮), বিহার (৫), ঝাড়খন্ড (৪), ওড়িশা (৪) এবং জম্মু-কাশ্মীর (১)। 


এদিন ভোট শুরু হয় স্থানীয় সময় সকাল ৭টায়, কোনও রকম বিরতি ছাড়াই তা চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। কিন্তু ভোট শুরুর আগে বঙ্গে নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতায় প্রাণ যা এক তৃণমূল কর্মীর। বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত কেতুগ্রামের চেঁচুড়ি গ্রামে নৃশংসভাবে খুন হল এক ব্যক্তি। রবিবার রাতে মিন্টু শেখ নামে ৪৫ বছর বয়সি ওই ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর পাশাপাশি বোমা মেরে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রে খবর, মিন্টু শেখ যখন তাঁর এক সঙ্গীকে নিয়ে বাইকে চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন, সে সময় কয়েকজন দুষ্কৃতী তাঁর বাইক আটকায়৷ তিনি বাইক থামাতেই তাঁর শরীরে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপ মারা হয়, পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে দুষ্কৃতকারীরা বোমা মারে। 


এদিন সকালের দিকে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের মন্তেশ্বর ব্লকের টুললা এলাকায় বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় গ্রামবাসীরা। দিলীপ ঘোষের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন এক গ্রামবাসী, পরে জানা যায় তিনি তৃণমূল কর্মী। মুহূর্তের মধ্যেই উত্তেজনা ছড়িয়ে গোটা এলাকায়। এক সময় দিলীপ ঘোষকে ঘিরে ধরে 'গো ব্যাক' স্লোগানও দেওয়া হয়। এরপর দিলীপ ঘোষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীরা তৃণমূল কর্মীদের দিকে এগিয়ে যান। পরে লাঠির মারে ১ জন আহত হন বলে অভিযোগ। এই সংবাদসংগ্রহ করতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের গাড়িও ভাংচুর করা হয়। বেলা গড়াতেই বিকেলবেলা ফের দিলীপ ঘোষের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। বর্ধমান-উত্তর ২০৪ নম্বর বুথের দলীয় এজেন্টকে বের করে দেওয়ার খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান দিলীপ ঘোষ। এই হামলায় আহত হন দিলীপ ঘোষের দুই নিরাপত্তারক্ষী। এর মধ্যে একজনের মাথা ফেটে রক্ত বেরোতে থাকে। নিরাপত্তা রক্ষীদের গাড়ি বহরেও ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। 


দুর্গাপুর ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি কর্মীদের মারধর ও গাড়ি ভাঙচুর করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মী ও এলাকাবাসী রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বিশাল পুলিশ বাহিনী। ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। 


কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের তেহট্টের রামজীবনপুরের কয়েকটি বুথে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। ভোট দিতে আসার সময় বিজেপি কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বাঁশ-লাঠি দিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তৃণমুলের দাবী এটা বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। 


ভোট পরিদর্শনে গিয়ে গ্রামবাসীদের অভাব অভিযোগের মুখে পড়েন বীরভূমের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়। শতাব্দীর গাড়ি বহরের সামনে এসে এক বৃদ্ধা ক্ষোভ উগড়ে দেন। 


বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের নানুর বিধানসভার অধীন আট গ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি বুথে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ। এছাড়া একাধিক জায়গা থেকেই ইভিএম বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটে, ফলে সেইসব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হতে দেরী হয়, সেসব কেন্দ্রগুলিতে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। 


দুর্গাপুরে তানসেন রোডের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের ক্যাম্প অফিস ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, তারা যখন মধ্যাহ্ন ভোজনের জন্য গিয়েছিলেন সেই সুযোগে বিজেপির বহিরাগতরা বাইক বাহিনী নিয়ে এসে তাদের মহিলা সদস্যদের ওপর হামলা চালায় এবং ক্যাম্প অফিসে ভাঙচুর করে। এই ঘটনায় তৃণমূলের বেশ কয়েকজন মহিলা তৃণমূল কর্মী আহত হয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু'পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি লেগে গেলে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় বিশাল পুলিশ বাহিনী। 


অন্যদিকে অন্ধ্রপ্রদেশের পালনাডু, কাদাপা, আন্নামায়া জেলার একাধিক জায়গায় ওয়াই.এস.আর কংগ্রেস এবং টিডিপি নেতারা এক অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ এনেছেন। রাজ্যটির টেনালি এলাকায় ওয়াই.এস.আর কংগ্রেস বিধায়ক শিবকুমার, তাঁর সহযোগী ও অন্য ভোটাররা ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। সেসময় হঠাৎ করে ১ ভোটারকে চড় মারেন বলে অভিযোগ। পাল্টা ওই ভোটারকেও চড় মারতে দেখা যায়। এরপরই বিধায়কের অনুগামীরা তার ওপরে চড়াও হয়। 


ওয়াই.এস.আর কংগ্রেসের অভিযোগ, তাঁদের দলের সিনিয়র নেতা নন্দীগ্রাম সুরেশের গাড়িতে চড়াও হয় এবং চিতোরে তার বুথ এজেন্টকে মারধর করা হয়। টিডিপির অভিযোগ, মাইদুরুকু কেন্দ্রের তাদের প্রার্থীর এজেন্টকে মারধর করা হয়, এর ফলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। 


এদিকে একটি ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে বোরখা পরিহিত মহিলা ভোটারদের নিকাব খুলে যাচাই করার অভিযোগ উঠেছে হায়দরাবাদ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী মাধবীলতার বিরুদ্ধে। প্রার্থী যখন বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরছিলেন, তখনই একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে বেশ কিছু মুসলিম ভোটার ভোটের লাইনে অপেক্ষা করছিলেন। সে সময় নিকাব খুলে তাদের পরিচয় যাচাই করেন মাধবীলতা। এই ঘটনায় স্থানীয় মালাকপেট থানায় 'Representation of the people' আইনের বিভিন্ন ধারায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় মাধবীলতার বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে প্রার্থী বলেন, 'আমি একজন প্রার্থী। আমার অধিকার আছে ভোটার কার্ডের সাথে প্রার্থীর মুখমণ্ডল মিলিয়ে নেওয়া।' 

 

এই দফায় মোট ১৭১৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। দেশজুড়ে হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব, তিনি লড়াই করেছেন উত্তরপ্রদেশের কনৌজ আসন থেকে, এই আসনে তার প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির সুব্রত পাঠক। 



বঙ্গের বহরমপুর কেন্দ্র থেকে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেস প্রার্থী অধীর রঞ্জন চৌধুরী, ওই কেন্দ্রেই তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান, কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র, আসানসোল কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা, বীরভূম কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী শতাব্দী রায়, বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ, জম্মু-কাশ্মীর কেন্দ্রে রাজ্যটির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ন্যাশনাল কনফারেন্স প্রার্থী ওমর আব্দুল্লাহ, বিহারের বেগুসারাই কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং, ঝাড়খণ্ডের কুন্তী কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা, তেলেঙ্গানার হায়দ্রাবাদ কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী মাধবীলতা, ওই কেন্দ্র থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। 


এ দফায় বঙ্গের ৮টি আসনে ভোট নেওয়া হয়। এগুলি হল বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল, বোলপুর, বীরভূম। এর মধ্যে তৃণমূলের ৫টি, বিজেপি ২টি এবং কংগ্রেসের দখলে রয়েছে ১টি আসন।  


বহরমপুর কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী অধীর রঞ্জন চৌধুরী। এবার তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান। বিজেপি প্রার্থী ড. নির্মল কুমার সাহা। 


কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী মহুয়া মৈত্র। এই কেন্দ্রে তার প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি প্রার্থী রাজমাতা অমৃতা রায়। নির্বাচনের ঠিক আগে গত ২০ মার্চ বিজেপিতে যোগদান করেই টিকিট পান অমৃতা। সিপিআইএম প্রার্থী এস.এম সাদি। ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে নির্বাচনে এই কেন্দ্র তৃণমূলের দখলে ছিল। 


রানাঘাট কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার, তৃণমূলের রার্থী মুকুটমণি অধিকারী। সিপিআইএম প্রার্থী অলোকেশ দাস। 


বর্ধমান-পূর্ব কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী ডা: শর্মিলা সরকার, বিজেপির অসীম সরকার, সিপিআইএম প্রার্থী নীরব খাঁ। 


বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী করেছে প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ'কে, বিজেপির প্রার্থী দিলীপ ঘোষ, সিপিআইএম প্রার্থী সুকৃতি ঘোষাল। 


আসানসোল কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন হিন্দি ফিল্মে 'বিহারী বাবু' বলে পরিচিত শত্রুঘ্ন সিনহা, বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্রজিৎ সিং আলুওয়ালিয়া, সিপিআইএম প্রার্থী জাহানারা খান। 


বোলপুর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী অসিত কুমার মাল, বিজেপির পিয়া সাহা, সিপিআইএমের প্রার্থী শ্যামলী প্রধান। 


বীরভূম কেন্দ্রে গত তিনবারের সংসদ সদস্য অভিনেত্রী শতাব্দী রায়কে এবারও প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপির প্রার্থী দেবতনু ভট্টাচার্য, কংগ্রেস প্রার্থী মিল্টন রশিদ। 



উল্লেখ্য, মোট সাত দফায় দেশের ৫৪৩ টি লোকসভা আসনে ভোট নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে প্রথম চার দফার ভোটের মধ্যে ৩৭৯ আসনে ভোট নেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। 


কিন্তু এই নির্বাচনে যে বিজেপি ক্ষমতায় আসছে না তা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের পলতায় একটি নির্বাচন সভা থেকে দেশ থেকে মোদী হটানোর ডাক দিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন 'মোদী গ্যারান্টি আসছে না। ৩৪ বছর লড়াই করে যদি সিপিএমকে হারাতে পারি তবে বিজেপিকেও হারাতে পারব। এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ। ওরা বলছে ইসবার ৪০০ পার, আমি বলি এবার পগার পার। এবার বিরোধী দলের জোট 'ইন্ডিয়া'ই জিতবে।' 


প্রসঙ্গত ভোটের পরবর্তী ধাপে পঞ্চম দফা ২০ মে, ষষ্ঠ দফা ২৬ মে এবং সপ্তম ও শেষ দফার ভোট ১ জুন। গণনা আগামী ৪ জুন।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad