আদিবাসী মহিলাকে ডাইনি সন্দেহে মারধর! নাম জড়াল তৃণমূলের
নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা, ৩০ মে: আদিবাসী মহিলাকে ডাইনি সন্দেহে মারধরের অভিযোগ, তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যার মদতে বিচার, সালিশি সভায় ডাইনি নিদান, পুলিশ প্রশাসনের ভুমিকায় উঠছে প্রশ্ন, কটাক্ষ বিজেপির, পাল্টা তৃণমূল, তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা।
আদিবাসী গ্রামে কুসংস্কারের ছায়া! গ্রামের তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যা অসুস্থ বেশ কিছুদিন ধরে৷ কারণ খুঁজতে উঠে এসেছিল গ্রামেরই এক মহিলার নাম৷ এনিয়ে গ্রামে সভাও হয়৷ সভার নিদানে ওই মহিলাকে ডাইনি হিসাবে চিহ্নিত করে গ্রামের আদিবাসী সমাজ৷ অভিযোগ, এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন ওই পঞ্চায়েত সদস্যা ও তাঁর তৃণমূল নেতা স্বামী৷ লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে তাঁরা ওই মহিলাকে নিয়ে যান পাশের গ্রামের এক গুণিনের কাছে৷ সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিবেশী আরও এক মহিলাকে৷ অনেকটা সময় ধরে তুকতাকের পর গুণিণ-ওঝা ওই মহিলার দুই কানে লোহার শিকের খোঁচা দিয়ে তাঁকে আরও একবার ডাইনি ঘোষণা করেন৷ এরপরেই পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী ও দলের লোকজন ফুসকিন চিহ্নিত মহিলাকে বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ৷
আরও অভিযোগ, পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী ডাইনি ঘোষিত মহিলার গলা টিপে খুনের চেষ্টা করেন৷ তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে ব্যাপক মার খেতে হয় প্রতিবেশীকেও৷ পরদিন ফের তাঁদের দু’জনকে অর্ধনগ্ন করে মারধর করা হয়৷ অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁরা৷ শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে স্থানীয় গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায়৷ ঘটনাটি ঘটেছে পুরাতন মালদার ভাবুক অঞ্চলের একটি গ্রামে৷
পরের অভিযোগ আরও মারাত্মক৷ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়ে ডাইনি চিহ্নিতা নিগৃহীতা মালদা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে যান৷ কিন্তু কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার তাঁর সেই অভিযোগপত্র গ্রহণ করেননি৷ তিনি সাফ জানিয়ে দেন, অভিযোগপত্রে ‘ফুসকিন’ শব্দটি থাকা চলবে না৷ বাধ্য হয়ে পুলিশের কথামতো দ্বিতীয়বার অভিযোগপত্র লিখতে বাধ্য হন নিগৃহীতা৷ এই ঘটনায় গ্রামের গুণিণ-ওঝা সহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি৷
প্রশ্ন উঠেছে, এই ঘটনায় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যা জড়িয়ে থাকার জন্যই কি পুলিশ নির্যাতিতাকে অভিযোগপত্র বদল করতে বাধ্য করল? সেই কারণেই কি অভিযোগ দায়েরের ২৪ ঘন্টা পরেও কাউকে গ্রেফতার করা হল না? যদিও কেউ গ্রেফতার না হওয়ার পিছনে পুলিশের সাফাই, অভিযুক্তরা পলাতক৷ ওই নির্যাতিতা আদিবাসী মহিলার মেয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে আসল ঘটনা তুলে ধরেন।
এদিকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বিজেপির প্রধান এবং মালদা বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপির বিধায়ক গোপাল চন্দ্র সাহা। তাদের অভিযোগ, ঘটনায় তৃণমূল নেতা জড়িত রয়েছে বলেই তাঁকে আড়াল করার জন্যই পুলিশ এসব নোংরা খেলায় মেতেছে।
অন্যদিকে অভিযুক্ত ওই তৃণমূল সদস্যার স্বামী পুরো ঘটনা অস্বীকার করেছেন এবং এই ঘটনা সাজানো ঘটনা বলে দাবী করেন। এ ঘটনা নিয়ে ভাবুক অঞ্চলের তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি দিলীপ হেমব্রম জানান, এ ঘটনার সাথে তৃণমূল কোনও ভাবে জড়িত নয়। ডাইনি মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছিল তবে পুরোপুরি গ্রামবাসীরা মিলে করেছেন। এ ঘটনার সাথে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যা কোনও ভাবে জড়িত নয়, যদি জড়িত থাকে তাহলে দল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
No comments:
Post a Comment