মাছ রোগাক্রান্ত হলে প্রতিকারের উপায়
রিয়া ঘোষ, ০৬ জুন : মাছেও রয়েছে নানা ধরনের রোগ। মাছ চাষে এসব রোগ একটি বড় সমস্যা। মাছ বছরে কয়েকবার বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। বিভিন্ন কারণে খোলা পুকুরের তুলনায় বদ্ধ জলাশয়ে পালন করা মাছে রোগের প্রকোপ বেশি। তাই পুকুর ও পুকুরের মাছ প্রায়ই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।
আমাদের দেশে প্রায় ৩২ প্রজাতির মাছ ক্ষত রোগে আক্রান্ত। এ রোগের কারণে মাছে ব্যাপক হারে ক্ষত সৃষ্টি হয়। এ রোগে মাছের গায়ে ছোট ছোট লাল দাগ দেখা যায়। লাল দাগের জায়গায় একটি গভীর ক্ষত তৈরি হয়। মাছ দ্রুত মারা যায়। চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ক্ষতটি খুব খারাপ গন্ধ। মাছ খাদ্য গ্রহণ করে না।
ক্ষতের উপর চাপ দিলে দুর্গন্ধ ও পুঁজ হয়। মাছ দুর্বল এবং ভারসাম্যহীনভাবে চলাফেরা করে। সংক্রমণ গুরুতর হলে লেজ এবং পাখনা পচে যাবে।
সাধারণত শোল, গোজার, টাক্কি, পুঁটি, বেন, কই, মৃগাল, কার্প এবং দেশের পুকুরের তলদেশে বসবাসকারী অন্যান্য প্রজাতির মাছ ক্ষত রোগে আক্রান্ত হয়।
মাছের ক্ষত রোগ সম্পর্কে জেলেরা কমবেশি সচেতন। এই রোগ সম্পর্কে জানার একটি ভাল উপায় হল আক্রান্ত মাছের লাল দাগ। এই দাগের আকার ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। মাছের লেজের গোড়ায়, পিঠে ও মুখে ক্ষত বেশি হয়। এ রোগ দেখা মাত্রই মাছগুলোকে পুকুর থেকে ফেলে দিতে হবে। রোগাক্রান্ত মাছকে ১০ লিটার জলে ১০০ গ্রাম লবণ মিশিয়ে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট ডুবিয়ে পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে।
প্রতি বছর রোগের আক্রমণের আগে আশ্বিন মাসের শেষে বা কার্তিক মাসের শুরুতে পুকুরে ১ কেজি হারে চুন ও ১ কেজি লবণ মিশিয়ে দিতে হবে। তাহলে আগামী শীতে মাছ সাধারণত ক্ষত রোগ থেকে মুক্ত থাকবে।
রুই মাছ, শিং-মাগুর এবং পাঙ্গাস মাছ সাধারণত পেট ফাঁপা রোগে আক্রান্ত হয়। রোগাক্রান্ত মাছের গায়ের রং ফোলাসহ হলুদ হয়ে যায়। পেটে জল জমে পেট ফুলে যাওয়া। মাছগুলো ভারসাম্যহীনভাবে চলাফেরা করে।
বেশির ভাগ সময় জলের ওপর ভেসে থাকে এবং খাবি বখেতে থাকে। আক্রান্ত মাছ খুব দ্রুত মারা যেতে পারে। প্রতিকার হিসেবে প্রতি ১০০% পুকুরের জলে ১ কেজি হারে স্লেকড চুন যোগ করা যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে মাছের খাবারের পাশাপাশি মাছের খাবার ব্যবহার করা জরুরি। এ ছাড়া মাছকে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদিত পুকুরে খাওয়াতে হবে।
মাছে, পাখনা এবং লেজ পচা রোগ সাধারণত রুই মাছ, শিং-মাগুর এবং পাঙ্গাস মাছকে প্রভাবিত করে। এই রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে পেছনের পাখনা এবং ধীরে ধীরে অন্যান্য পাখনাও আক্রান্ত হয়। কিছু মাছ বিজ্ঞানীর মতে, এরোমোনাডস এবং মাইক্সোব্যাক্টর গ্রুপের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এই রোগ হয়। ক্ষারত্ব এবং জলের pH এর অভাবেও এই রোগ হতে পারে। পুকুর থেকে ইরোস আক্রান্ত মাছ সরিয়ে ফেলুন এবং আক্রান্ত মাছকে ০.৫ পিপিএম পটাশযুক্ত জলে ৩ থেকে ৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন। পুকুরে সার যোগ করা সাময়িকভাবে বন্ধ করতে হবে।
No comments:
Post a Comment