ফুল চাষে যেসব বিষয় নজরে রাখবেন
রিয়া ঘোষ, ২৬ জুন : ফুলের চাষ এখন শুধু সৌন্দর্যের জন্যই নয়, এর বাণিজ্যিক গুরুত্বও রয়েছে। বর্তমানে চাহিদা বিবেচনায় অনেকেই বিজ্ঞানসম্মতভাবে ফুল চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের ফুল জন্মে।
এই ফুলের মধ্যে রয়েছে- গোলাপ, গাঁদা, জুঁই, বেলি, চামেলি, শেফালি, গুলাবি গাঁদা, গন্ধরাজ, গ্লাডিওলাস, দোপাট্টি, হাসনা-মেহেদী, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, দোলনচাঁপা, কনকচাঁপা, অপরাজিতা, জবা, মালতি, কামিনি ইত্যাদি। কিছু ফুল দীর্ঘজীবী আবার কিছু মৌসুমী। সব ফুলই প্রায় সমান বাণিজ্যিক গুরুত্বের।
রোপণের সময়: অধিকাংশ ফুলের বীজ, চারা, কাটিং বা কন্দ রোপণের উপযুক্ত সময় হল আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ।
জমি নির্বাচন: পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পাওয়া যায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। উঁচু দোআঁশ মাটি ফুল চাষের উপযোগী। মনে রাখতে হবে ফুল চাষের জন্য জমি নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাপ উপযুক্ত হলে বাগান ভালো দেখায়।
বেড়া দেওয়া: গবাদি পশু বা অবাঞ্ছিত আক্রমণ থেকে ফুলের গাছকে রক্ষা করার জন্য শক্ত বাঁশ বা কাঁটাতার বা লোহার বেড়া দিতে হবে। গরু-ছাগল যেন বেড়া ভাঙতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
জমি তৈরি ও রোপণ: জমির পরিমাণ বেশি হলে বিভিন্ন ধরনের ফুলের জন্য বিভিন্ন এলাকা ভাগ করে পরিকল্পনা অনুযায়ী রোপণ করতে হবে। কন্দ, চারা বা কাটিং রোপণের ২০ থেকে ২৫ দিন আগে জমি ভালভাবে চাষ করতে হবে এবং উপযুক্ত ও পরিমিত সার প্রয়োগ করতে হবে।
এই সারগুলির মধ্যে রয়েছে, - পচা গোবর, টিএসপি, হাড়ের খাবার, এমপি। ইউরিয়া, মাটি, চায়ের অবশিষ্টাংশ, ছাই ইত্যাদি মিশিয়ে মাটি পরিষ্কার করতে হবে। সার ব্যবহারের ক্ষেত্রে জৈব সারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সবসময় সুস্থ ও রোগাক্রান্ত গাছ বা কন্দ লাগান। রোপণ করা গাছগুলিকে উপর থেকে চাপা দেওয়া উচিত নয়, তবে প্রান্তে মাটি চেপে শক্তভাবে চেপে প্রয়োজন অনুসারে জল দিতে হবে। খুঁটিগুলো গাছের মধ্যে পুঁতে দিতে হবে এবং গাছের সাথে বেঁধে দিতে হবে।
ফুলের চারা বা বীজ কোথায় পাবেন: ভালো মানের বীজ, কাটিং ও চারা এখন শহর ও গ্রামের ভালো নার্সারিতে পাওয়া যাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে যোগাযোগ করে চারা পাওয়া যাবে।
কীভাবে যত্ন নেবেন: আগাছা কুড়াল দিয়ে তুলে ফেলতে হবে এবং গোড়ার মাটি মাঝে মাঝে আলগা করে দিতে হবে। প্রয়োজনে জল সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। পিঁপড়া ও মাকড়সার আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষা করার জন্য Hyptaclon-40 পরিমাণে দেওয়া যেতে পারে। সাধারণ পোকামাকড়ের জন্য, মেলথিয়ান বা ডিমাইক্রন ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। রোগ অনুযায়ী প্রতিকার নিতে হবে।
সার ব্যবহারের কৌশল জেনে সুষম সার এবং চাহিদা অনুযায়ী কয়েক রাউন্ড সেচ দিতে হবে। ফুল তোলার জন্য প্রস্তুত হওয়ার অনেক আগেই বিশেষ যত্ন নিতে হবে। ফুলের পরিমাণ এবং গুণমান উভয়েরই যত্ন নেওয়া জরুরি। এক গাছ থেকে অন্য গাছে পুরাতন ও দুর্বল শাখা ছেঁটে দিতে হবে।
ফুল সংগ্রহ : ফুল ফোটার আগে ফুলসহ কান্ড কেটে ফুল সংগ্রহ করা যায়। কান্ডের নিচের অংশ জলে ডুবিয়ে রাখলে ফুল বেঁচে থাকে। ভালো মান বজায় রাখতে ডাঁটাযুক্ত ফুল ভালো করে বেঁধে কালো পলিথিনে মুড়ে বাজারে পাঠাতে হবে।
টবে ফুল চাষ: জমির অভাবে ভবনের ছাদে, বারান্দায় বা বাণিজ্যিকভাবে আনন্দের জন্য টবে বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে গোলাপ এবং গাঁদা ফুলের বিভিন্ন প্রকার বা রঙ। ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপী গাঁদা, বিভিন্ন অর্কিড, বিভিন্ন আকর্ষণীয় ক্যাকটাস এবং বনসাই ছাড়াও।
No comments:
Post a Comment