জিওল মাছ চাষের পদ্ধতি - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Sunday 9 June 2024

জিওল মাছ চাষের পদ্ধতি



জিওল মাছ চাষের পদ্ধতি


রিয়া ঘোষ, ০৯ জুন : জিওল মাছের শ্বাসযন্ত্রের ফুসফুসে একটি অতিরিক্ত ম্যান্টেল থাকে।   যার সাহায্যে এসব মাছ সরাসরি হাওয়া থেকে অক্সিজেন নিয়ে শ্বাস নিতে পারে।   ফলে জিওল মাছ জল ছাড়াই অনেকক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে।   অন্যান্য মাছের তুলনায় এই মাছের জীবনীশক্তি অনেক বেশি।



  জিওল মাছ কোথায় চাষ করা যায়?

  ছত্রাকজনিত পুকুর, পরিত্যক্ত পুকুর, ছোট পুকুর, নোংরা পুকুর, বর্ষাকালে ধানক্ষেতে জমে থাকা জল, ছোট অগভীর পুকুর, গ্রীষ্মকালে শুকিয়ে যাওয়া জলাশয় বা পুকুর যেগুলি থেকে কোনো আয় হয় না, কিন্তু নোংরা পুকুর পরিবেশকে দূষিত করে এবং জন্ম দেয় মশা  সেসব জলাশয়ে জিওল মাছ ধরা খুব ভালো হয়।   একটি  পুকুর বা ছায়াময় পুকুরের জলে সাধারণত কম অক্সিজেন এবং বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড থাকে। রুই, কাতলা প্রভৃতি মাছ এমন জলে জন্মায় না।   কিন্তু জিওল মাছের অতিরিক্ত শ্বাসতন্ত্রের কারণে পরিত্যক্ত জলাশয়ে জিওল মাছ পালনে কোনও অসুবিধা হয় না।


  

  বড় জলাশয়ে মাছ চাষ 

  বড় পুকুরে যেখানে রুই, কাতলা মাছ চাষ করা হয় সেখানে বাঁশ বা প্লাস্টিকের খাঁচায় জলে ডুবিয়ে জিওল মাছ পালন করা সম্ভব।   প্রয়োজন অনুযায়ী খাঁচা থেকে মাছ বের করে চাষ করা যায়।



  মাছ ধরার সময় জিওল

  আষাঢ় থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত।   মিশ্র পদ্ধতিতে মাগুর, শিঙ্গি ও কই চাষ করলে বেশি লাভ পাওয়া যায়।



  মাগুর বা শিঙ্গি পোনা বিঘা প্রতি ৬-৭ হাজার এবং কই মাছের জন্য ৫-৬ হাজার টাকা পাওয়া যাচ্ছে।   পুকুর তৈরির পদ্ধতিঃ

  

ভরাট পুকুর: জল ভরা পুকুরে ধ্বংসাবশেষ থাকলে তা অপসারণ করতে হবে।   মহুয়া ঝিনুক ছড়ানোর দরকার নেই। তবে, ২ থেকে ৩ বার জাল টানুন এবং সমস্ত রাক্ষসী মাছ যেমন: শোল, বোয়াল,  জলের সাপগুলি সরিয়ে ফেলুন এবং পুকুর থেকে জিওল মাছের পোনা ছেড়ে দিন।



খালি পুকুর : চৈত্র-বৈশাখ মাসে পুকুর শুকিয়ে তাতে সার দিতে হবে।   সেঞ্চুরি অনুযায়ী গোবর ২০০ কেজি, সরিষার খোসা ৮ কেজি, চুন ৬ কেজি, সুপার সেচ ৬ কেজি, ইউরিয়া ২ কেজি ও পশুখাদ্য ৫০০ গ্রাম।   সমস্ত সার শুকনো পুকুরের তলদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং কোদাল বা লাঙল দিয়ে চাষ করতে হবে।   এরপর পুকুরে জল ছেড়ে দিতে হবে।   পনেরো দিন পর দেখবেন পুকুরের জল হালকা সবুজ হয়ে গেছে।   কারণ এই জলে মাছের খাদ্য প্রচুর পরিমাণে জন্মে।   যেমন, শৈবাল, ছত্রাক, প্রোটোজোয়া, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি।   এই পুকুরে মাছের পোনা ছাড়ার এখনই উপযুক্ত সময়।   যেখানে মাছটিকে 'গেছো মাছ' বলা হয়।   তাই পুকুরের চারপাশে নাইলন জাল দিয়ে ঘেরা দিতে হবে।   বর্ষাকালে বাঁধ নির্মাণ করুন যাতে মাছ বের হতে না পারে।



  জিওল মাছ সর্বভুক।   পচা পাতা, মরা পোকা, ভাঙা শামুক, গুগলি,  শ্যাওলা ইত্যাদি খেতে পছন্দ করে।   তাই অনেকে জিওল মাছকে ঝাড়ুদার মাছও বলে থাকেন।   রাতে পুকুরের মাঝখানে বাঁশ পুঁতে ফানুস ঝুলিয়ে দিতে হবে।   পোকামাকড় আলোর দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে জলে পড়ে এবং মাছের খাদ্যে পরিণত হয়।   অন্যদিকে, ফসলের ক্ষেতে শত্রু পোকার কারণে ক্ষতি কম হবে।   মাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত খাবারও দিতে হবে।


  

  সপ্তাহে একবার পুকুরে জাল টানতে হবে অথবা সাঁতার কাটার জন্য গরুকে পুকুরে নামাতে হবে।   তাহলে মাছ চলবে এবং স্বাস্থ্য বাড়বে।   



  জিওল মাছ চাষে আয়

  জিওল মাছ অনেকদিন রাখা যায়।   এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া খুবই সুবিধাজনক।   কোন বরফ প্রয়োজন নেই। চড়া দামে বিক্রি হয় এই মাছ।   মাগুর মাছের পাশাপাশি শিঙ্গি ও কই মাছের ভালো চাষ করলে ৬ মাস পর বিঘা প্রতি প্রায় তিন হাজার কেজি মাছ পাওয়া যায়।   খরচ বাদে বড় অর্থ লাভ।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad