সিএএ সমর্থন করায় উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত, বিক্ষোভ - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Monday 1 July 2024

সিএএ সমর্থন করায় উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত, বিক্ষোভ


সিএএ সমর্থন করায় উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত, বিক্ষোভ 




নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, ০১ জুলাই: এনআরসি এবং সিএএকে সমর্থন করা, উদ্বাস্তু মতুয়া সম্প্রদায়ের বসবাস, উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত গ্ৰামবাসীরা। ব্যারাকপুর লোকসভার আমডাঙা বিধানসভার বেড়াবেরিয়া গ্ৰাম পঞ্চায়েতের ইন্দ্রপুর গ্রামে অনুন্নয়নের ছোঁয়া। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, উদ্বাস্তু মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস করায় তাদের সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের। জেলাশাসক থেকে শুরু করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে জানালেও মেলেনি কোনও সুরাহা। প্রতিবাদ সোমবার পথে নেমে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা। 


গ্ৰামবাসী বাপি বিশ্বাস বলেন, 'আমাদের মূল দাবী, শক্তি সংঘ ক্লাব থেকে অরবিন্দ বিশ্বাসের বাড়ি পর্যন্ত, দিব্য সুন্দর স্কুল থেকে জগদীশ বিশ্বাসের বাড়ি পর্যন্ত, হাবল বিশ্বাসের বাড়িতে থেকে ইন্দ্রপুর বাজার পর্যন্ত পিচ রাস্তা নির্মাণ করতে হবে জনস্বার্থে। এই রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থা, বড় বড় গর্ত হয়ে আছে। এই রাস্তা দিয়ে হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের পাশাপাশি যানবাহনও চলাচল করে।‌ শিক্ষার্থীদের যাতায়াত থেকে শুরু কৃষকরাও হাটেবাজারে ফসল নিয়ে যায় এই রাস্তা দিয়ে। তাদের সমস্যায় পড়তে হয়। একটা অ্যাম্বুলেন্স যাওয়ার পরিস্থিতি নেই। বর্ষাকালে রাস্তার গর্তগুলোতে জল জমে যায়। পুকুর না রাস্তা বোঝা মুশকিল।'


তিনি আরও বলেন, 'ইন্দ্রপুরের বেশ কিছু পরিবার পানীয় জলের কানেকশন পায়নি। জল সঙ্কটে ভুগছে। যারা কানেকশন পেয়েছেন তারাও পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান না। সরকারের কাছে রাস্তা, পাইপলাইন দেওয়ার আর্জি। যে সমস্ত পরিবারগুলো আর্সেনিকমুক্ত নলবাহী জলের জলের কানেকশন পায়নি, তা অবিলম্বে দেওয়া হোক।'


বাসিন্দাদের একাংশের দাবী সিএএ-কে সমর্থন করার জন্য এলাকায় সরকারি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বাসিন্দারা। প্রায় চার হাজার মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। অন্যদিকে চারপাশটি গ্রামের মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন। প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশা। একদিকে খানাখন্দে ভর্তি রাস্তা অন্যদিকে পানীয় জলের সমস্যা। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। পাশাপাশি লিখিতভাবে জেলাশাসক থেকে শুরু করে বিডিও অফিস এমনকি জানানো হয়েছে পঞ্চায়েত অফিসেও। কিন্তু কোনও সুরাহা মেলেনি বলে অভিযোগ। 


গ্ৰামের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ দাস বলেন, 'মানুষের মৌলিক অধিকার সঠিক রাস্তাঘাট, পানীয় জলের সুবিধা। এর কোনওটাই আমাদের দিচ্ছে না যেহেতু আমরা মতুয়া সম্প্রদায়ের লোক। আমাদের এলাকায় বেশিরভাগ ওপার বাংলার লোক, মতুয়া সম্প্রদায়ের লোক। আমরা যেহেতু সিএএ সমর্থন করে নিয়েছি, যা আমাদের দীর্ঘদিনের দাবী ছিল, সেজন্য একটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা শুরু হয়েছে আমাদের মধ্যে।' তিনি আরও বলেন, 'এখানকার বেশিরভাগ বুথে বিজেপি লিড পেয়েছে, এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সাধারণ মানুষকে ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক শিকার তারা করছে।'


তাঁর অভিযোগ, রাস্তার কাজ ১০-১৫ বছর থেকে হচ্ছে না। তিনি বলেন, রাস্তা করে দেবে না বলা হচ্ছে। বললেই বলছে, 'তোদের রাস্তা করা যাবে না, যাদের দিয়েছিস তাদের বলে দেখ'। তিনি বলেন, 'পানীয় জলেরও একই অবস্থা কারও বাড়িতে কল আছে জল নেই, কারও বাড়িতে কলও নেই। এই জন্যই আজ এই বিক্ষোভ। আমরা এই দাবীতেই আজ পথে নেমেছি।' তিনি আরও বলেন, 'জনগণের টাকায় সরকার চলে। সরকারের টাকায় জনগণ চলে না।' এই এলাকায় বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর সংযোজন, তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব পর্যন্ত জানুক, তাই এই পথে নামা। 


রবীন্দ্রনাথ বলেন, 'তৃণমূলের আমডাঙার বিধায়ক রফিকুর রহমান, মমতা বালা ঠাকুরের সামনে হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে এই রাস্তার নামকরণ করে গেলেও চার বছর পেরিয়ে গেলেও রাস্তা করে দেয়নি। এরা এতটাই আমাদের মতুয়াদের ঘৃণা করে।'


অপর এক বাসিন্দা কালীদাসী বিশ্বাস বলেন, 'তিনটি পরিবার জল পাইনি। রাস্তার হালও বেহাল। দূর থেকে জল টেনে আনতে হয়।'


এই প্রসঙ্গে স্থানীয় বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্য কল্যাণব্রত টিকাদার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এসব সমস্যার কথা এলাকাবাসী জানাচ্ছেন। কিন্তু কেন হচ্ছে না ঠিক জানিনা। আমি নবনির্বাচিত সদস্য, প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি বলেছেন দেখছি। দেখা যাক কী হয়। 


পঞ্চায়েত প্রধান জানান, ইতিমধ্যেই আমরা আবেদন পাঠিয়েছে খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাসের জন্য যে উন্নয়ন হচ্ছে না, এই তথ্য সম্পূর্ণ ভুল। বেড়াবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান হরিহর মণ্ডল বলেন, 'রাস্তাটা খারাপ দেখেছি, টাকা টাকা পয়সা ছিল না বলে হয়নি। পার্থ ভৌমিক কথা দিয়েছেন, উনি রাস্তাটা করে দেবেন কথা দিয়েছেন। দিন‌ কয়েক আগেই উনি বলেছেন রাস্তাটা করে দেবেন প্রোপোজাল পাঠাতে, আমরা পাঠিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ও রাস্তাটা নিয়ে অভিযোগ করেছিলাম। জেলা থেকে ইঞ্জিনিয়াররা এসে গত তিন দিন আগে রাস্তাটা মেপে গিয়েছে। রাস্তাটা আমরা তাড়াতাড়ি করে দেব।' 


তিনি আরও বলেন, 'মতুয়া সম্প্রদায়ের বলে উন্নয়ন হচ্ছে না, এটা ওনারা ভুল বলছেন। জনগণের যাতে ভালো হয় সেই দেখে আমরা কাজ করছি, ব্যক্তি দেখে নয়।'

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad