মোক্ষলাভের আশায় ৮৫ লক্ষ পুণ্যার্থী স্নান সেরেছেন গঙ্গাসাগরে।মন্ত্রী থেকে জনসাধারণ সবাই সমুদ্রে নেমে ডুব দিয়ে পুজো দিয়েছেন কপিলমুনির মন্দিরে।বুধবার সকালে শেষ হয়েছে তিথি অনুযায়ী পূন্যস্নান।
ঘড়ির কাঁটা মাহেন্দ্রক্ষণ ছুঁতেই সাগরসঙ্গমে মকর সংক্রান্তির পূণ্য তিথিতে শুধুই ডুব আর ডুব। লক্ষ লক্ষ পুন্যার্থীর মহামিলনে জমজমাট সাগরতীর্থ।
শীত উধাও গঙ্গাসাগরে। দিনের তাপমাত্রা ২০- ২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এর মধ্যেই ঘোরাফেরা করেছে। মাঝেমধ্যে বয়েছে হালকা উত্তুরে হাওয়া। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় এমনই মনোরম আবহাওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত সাগরজলে ডুব দিয়ে মকরসংক্রান্তির পূণ্যস্নান করেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী। সরকারি হিসেবে মঙ্গলবার বিকেল তিনটে পর্যন্ত গঙ্গাসাগরে স্নান সেরে কপিলমুনির মন্দিরে পুজো দিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছেন ৮৫ লক্ষ পুণ্যার্থী। বাবুঘাট, লট নম্বর আট ঘাট এবং কচুবেড়িয়াতে মঙ্গলবার সন্ধ্যের পরেও ভিন রাজ্য থেকে আসা প্রচুর পুন্যার্থী সাগর মেলায় আসার জন্য অপেক্ষায় করছেন বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে।
এদিন সকালেই সাগরস্নান সারেন পুরীর শংকরাচার্য নিশ্চলানন্দ সরস্বতী মহারাজ। সাগরে ডুব দিয়ে স্নান করেন মন্ত্রী সুজিত বসু ও রথীন ঘোষ। বেলা বাড়লে সাগরে ডুব দেন বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার।
এদিন সাগরস্নান সেরে কপিলমুনির মন্দিরে পূজো দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা লক্ষ্মী দেবী। সাগর মেলায় এসে রাজ্য সরকারের ব্যবস্থাপনায় আপ্লুত তিনি। তাঁর মতোই মেলায় রাজ্য সরকারের এত বিপুল আয়োজনের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের ৬৫ বছরের প্রবীণ পুন্যার্থী হীরা দেবীও।
মেলা অফিসে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানান, মকর সংক্রান্তির দিন মঙ্গলবার জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে গঙ্গাসাগর মেলা। ৩ হাজারের বেশি সৈকত প্রহরী সাগরসৈকত অবিরত পরিষ্কার করে চলেছেন। ১২০০০ স্থায়ী ও অস্থায়ী শৌচাগার সহ ৭৫টি ই - কার্ট আবর্জনা সংগ্রহের জন্য রাখা হয়েছে এবং সাতটি কঠিন বর্জ্য নিষ্কাশন ইউনিট করা হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, এ পর্যন্ত গঙ্গাসাগরে এসে মোট ৪৬৮৩ জন পুন্যার্থী হারিয়ে যান। তাঁদের মধ্যে ৪ হাজার ৬৬০ জনকে খুঁজে তাঁদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত ই - পরিচয় ও কিউআর কোড সম্বলিত রিস্টব্যান্ড মেলায় চালু করার জন্যই এমন অসাধ্য সাধন হয়েছে। তিনি জানান, মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা ৫৪ বছরের রামপ্রসাদ নন্দগিরির অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে মেলায় অসুস্থ হয়ে মৃতের মোট সংখ্যা দাঁড়ালো পাঁচ। এ পর্যন্ত মোট সাতজনকে অসুস্থ হয়ে পড়ায় এয়ার লিফটিং করে কলকাতার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এদিন যে দু'জনকে এয়ার লিফটিং করা হয়েছে তাঁরা হলেন মধ্যপ্রদেশের ৭৫ বছরের লখন সিং এবং ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা ৭৬ বছরের রামযশ দুবে। এ পর্যন্ত যে ২৭২ টি পকেটমারির ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে ২৬০ টি ক্ষেত্রেই খোয়া যাওয়া বস্তু উদ্ধার সম্ভব হয়েছে এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬৭২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী পুলক রায় জানিয়েছেন, এপর্যন্ত মোট ১ কোটি ৮৫ লক্ষ জলের পাউচ গঙ্গাসাগর মেলায় বিতরণ হয়েছে।
এদিন মেলা অফিসে সাংবাদিক সম্মেলনে বিদ্যুৎ মন্ত্রী ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী ছাড়াও
উপস্থিত ছিলেন দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু, সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা, সেচমন্ত্রী মানস ভূঁইয়া, খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী রথীন ঘোষ, পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী, জেলা পরিষদ সভাধিপতি নীলিমা মিস্ত্রি বিশাল, গঙ্গাসাগর -বকখালি উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শ্রীমন্ত মালি, প্রাক্তন রাজ্যসভা সদস্য শুভাশিস চক্রবর্তী, মথুরাপুরের সাংসদ বাপি হালদার, বিধায়ক মদন মিত্র, জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা, সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও এবং রাজ্য প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা।
No comments:
Post a Comment