নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, ২৮ জানুয়ারি: করোনার পর এখন নতুন আতঙ্ক বিরল স্নায়ুরোগ গুলেন বারি সিনড্রোম। এ উপসর্গ ক্রমেই চিন্তা বাড়াচ্ছে চিকিৎসকদের। মুম্বই এবং পুনে শহরে ইতিমধ্যেই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে কয়েকজন। এবার এই রাজ্যেও বিরল স্নায়ুরোগ গুলেন বারি সিনড্রোমে আক্রান্তের খবর মিলেছে। শুধু আক্রান্ত নয়, মৃত্যুও হয়েছে তার।
উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদর বারাসতের প্যারীচরণ সরকার রাষ্ট্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়া অরিত্র মণ্ডল গুলেন বারি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হয়ে সোমবার মৃত্যু খবরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মৃতের ডেথ সার্টিফিকেটেও গুলেন বারি সিন্ড্রোমের উল্লেখ রয়েছে।
আমডাঙা ব্লকের বেড়াবেরিয়া পঞ্চায়েতের তারাবেরিয়া গ্রামের বাসিন্দা সুশান্ত মণ্ডল। তিনি পেশায় একজন দিনমজুর। তাঁর স্ত্রী মালবিকা গৃহবধূ। দম্পতির একমাত্র ছেলে অরিত্র। দম্পতির স্বপ্ন ছিল, তাঁদের সন্তান ভবিষ্যতে একজন চিকিৎসক হবেন। সেই স্বপ্ন নিয়েই পেশায় দিনমজুর সুশান্ত ছেলেকে ভর্তি করিয়েছিলেন বারাসত সরকারি স্কুলে। সায়েন্স বিভাগেই ভর্তি হয়েছিলেন অরিত্র।মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পড়াশুনোয় বেশ পরিশ্রম করত সে। গভীর রাত পর্যন্ত পড়াশুনো করত। সুযোগ মতো দিনের বেলায় কিছুটা ঘুমিয়ে নিত সে। চলতি মাসের ২১ তারিখেও বেশি রাত পর্যন্ত পড়াশুনো করেছিলেন অরিত্র। ২২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ঘুম থেকে উঠে মায়ের কাছে গিয়ে গলা ব্যথার কথা জানিয়েছিল অরিত্র। শীতের জন্য গলায় সাধারণ ব্যথা হয়েছে ধরে নিয়ে পরিবারের লোকজন বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেননি।
২২ তারিখ রাতেই তাঁর জ্বর হয়েছিল। জ্বরের ওষুধও খেয়েছিলেন। ২৩ জানুয়ারি সকালে উঠে সেকথা মা-বাবাকেও জানিয়েছিল। এরপরেই অরিত্র দু'হাতে জোর পাচ্ছিলেন না। ছেলের মুখে একথা শুনেই স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন মা। চিকিৎসকের সামনে চেয়ারে বসা অবস্থায় আচমকাই অরিত্র পড়ে গিয়েছিলেন। তৎক্ষনাত ওই চিকিৎসকের পরামর্শেই অরিত্রকে নিয়ে আসা হয় বারাসত মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে। অরিত্রর শারীরিক পরিস্থিতির মাথায় রেখেই দ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করানো হয়। পরবর্তীতে অরিত্রকে কলকাতার নামী এক সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য পরিবারের লোকজনকে পরামর্শ দেন বারাসত হাসপাতালের ডাক্তারবাবুরা। চিকিৎসকের পরামর্শে অরিত্রকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সোজা কলকাতার এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, এরপর থেকে সময় যত গড়িয়েছে, অরিত্রর শরীর ততই অচল হতে শুরু করে। রাতের খাওয়ার ক্ষমতাটুকু ছিল না অরিত্রর । ২৪ জানুয়ারি অরিত্রর শরীর এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিল, যাতে শৌচকর্ম করার ক্ষমতাও ছিল না। এমনকি শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় অরিত্রকে ওই দিন দুপুরেই ভর্তি করানো হয় সিসিইউতে। তারপর থেকে ক্রমাগত শরীরের অবনতি হতে থাকে তাঁর। শেষে সোমবার সকালে মৃত্যু হয় অরিত্র মণ্ডলের।
মৃতের মা মালবিকা মণ্ডল বলেন, 'ছেলেকে একটা ইনজেকশন দেওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু ওই ইনজেকশন হাসপাতালে ছিল না। বাইরে থেকে বেশি টাকা খরচ করে ইনজেকশন আনিয়ে নেব বলেও জানিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু অনুমতি দেয়নি। ডায়ালিসিস করতে হবে জানিয়েও করেনি। শেষে প্লাজমা থেরাপি করার পরে জানিয়েছিল, ছেলে বিপদ মুক্ত। পরে হাসপাতাল থেকে আমরা জানতে পারি, গুলেন বারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে ছেলের। কিন্তু কোনও রিপোর্ট হাতে দেয়নি। শুধুমাত্র ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছে। তাতে ওই রোগের কোথাও উল্লেখ রয়েছে।'
No comments:
Post a Comment