প্রেসকার্ড নিউজ লাইফস্টাইল ডেস্ক, ১৩ জানুয়ারি: ভালোবেসে একসঙ্গে বাঁচার শপথ খায় দুজন মানুষ। লায়লা মজনু, রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েটের মতো প্রেমের গল্প আমরা শুনেছি। ভালোবাসার অনেক অমর গল্প আজও আমাদের মনে ভেসে বেড়াচ্ছে অনুভূতির প্রজাপতির মতো। কিন্তু এই পরিবর্তনশীল বিশ্বে সম্পর্কের রংও দ্রুত বদলে যাচ্ছে। মানুষ এখন একে অপরের সাথে সম্পর্কে জড়াচ্ছে কিন্তু এখন তারা আর সাত জন্মের প্রতিশ্রুতি চায় না। ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার জগতের উত্থানের সাথে সাথে সম্পর্কের অনেক নতুন ট্রেন্ডও আবির্ভূত হয়েছে। আজকাল, তরুণ প্রজন্মই এই ট্রেন্ড গা ভাসিয়ে দিচ্ছে এবং এগুলো এত দ্রুত ভাইরাল হয় যে অন্যান্যরাও এটির অংশ হয়ে যায়।
আজকাল সম্পর্কের একটি নতুন ট্রেন্ড চলছে। এই নতুন ট্রেন্ডের নাম ন্যানোশিপ। অনেক জায়গায় একে 'নো স্ট্রিং অ্যাটাচড' রিলেশনশিপও বলা হচ্ছে। আজকের যুবরা এই ন্যানোশিপকে খুব পছন্দ করছে। এই ট্রেন্ড সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ধরণের সম্পর্কের কিছু সুবিধা আছে আবার কিছু অসুবিধাও আছে। সুবিধা-অসুবিধা জানার আগে আসুন জেনে নেওয়া যাক ন্যানোশিপ ট্রেন্ড কী এবং কেন এই ধরনের সম্পর্ক যুবদের আকৃষ্ট করছে?
ন্যানোশিপ কী?
ন্যানোশিপ দুটি ইংরেজি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। প্রথম ন্যানো এবং দ্বিতীয় রিলেশনশিপ। ন্যানো মানে খুবই ছোট আর রিলেশনশিপ মানে সম্পর্ক। সুতরাং আমরা যদি এর আভিধানিক অর্থ নিই, ন্যানোশিপ মানে একটি ছোট্ট সম্পর্ক। এই সম্পর্ক কয়েক ঘন্টা, একদিন বা এক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে। এই ধরণের রোমান্টিক সম্পর্ক যা খুব অল্প সময়ের জন্য স্থায়ী হয় তাঁকে ইন্টারনেট এবং ডেটিং জগতে ন্যানোশিপ বলা হচ্ছে। ন্যানোশিপে সিরিয়াসনেস নেই। অনেক সময় দুইজন একে অপরের নামও জানেন না।
এই ধরণের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যা ঘটে তা হল মানুষ একে অপরের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা যেকোনও ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে দেখা করে। তারা কয়েকদিন একসাথে থাকেন, মজা করেন, তারপর তাদের পথ আলাদা হয়ে যায়। এই ধরণের রোমান্টিক সম্পর্কের মধ্যে কোনও মানসিক বন্ধন নেই। কিছু ন্যানোশিপ সম্পর্ক শুধুমাত্র কয়েক ঘন্টা বা এমনকি এক রাত পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সাধারণ ভাষায় এগুলোকে ওয়ান নাইট স্ট্যান্ডও বলা যেতে পারে। ডিজিটাল যুগের এই রোমান্সের নাম দেওয়া হয়েছে ন্যানোশিপ।
কেন যুবদের পছন্দ হয়ে উঠছে ন্যানোশিপ?
ইন্টারনেটে পাওয়া তথ্য অনুসারে, এই ন্যানোশিপ ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী যুবদের খুব আকর্ষণ করছে। এর মধ্যে ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই অন্তর্ভুক্ত। বিখ্যাত ডেটিং অ্যাপ টিন্ডার ২০২৪ সালের একটি প্রতিবেদনে বলেছে যে, যুবরা স্বল্পমেয়াদী সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে। আজকের যুবরা তাদের রোমান্টিক সম্পর্ক কতটা সংক্ষিপ্ত তা পরোয়া করে না। তাঁরা যতবার সম্ভব নতুন মানুষের সাথে ডেট করতে চান।
এই সম্পর্কের বিশেষত্বই এর জনপ্রিয়তার কারণ। আসলে, ন্যানোশিপ কোনও প্রতিশ্রুতি ছাড়াই সম্পর্কের মধ্যে থাকার স্বাধীনতা দেয়। এই ধরণের সম্পর্কের ক্ষেত্রে, সঙ্গীর পিতামাতার সাথে দেখা করার, আপনার সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করার বা ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করার দরকার নেই। এই সম্পর্ক শুধুমাত্র মজা এবং উপভোগে পূর্ণ। এ ছাড়া ন্যানোশিপ নিয়ে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা যুবদের এর দিকে আকৃষ্ট করছে।
এই ধরনের সম্পর্কের মধ্যে স্বাধীনতা যুবরা খুব পছন্দ করছে। তারা কোনও চাপ ছাড়াই কাছাকাছি আসেন এবং কিছু সময় পরে তারা কোনও ব্যথা ছাড়াই আলাদা হয়ে যায়। ন্যানোশিপে, যুবরা অনেক ধরণের লোকের সাথে দেখা করার এবং তাদের সাথে সম্পর্কের অভিজ্ঞতা অর্জন করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জগৎও এ ধরনের সম্পর্ককে জনপ্রিয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মানুষ সহজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে অপরের সাথে সংযোগ স্থাপন করে ফেলেন।
ন্যানোশিপ রিলেশনশিপের সুবিধা-
১. নতুন লোকেদের সাথে দেখা: যারা নতুন লোকেদের সাথে দেখা করতে চান তাদের জন্য ন্যানোশিপ খুব উপযুক্ত। এই ধরণের সম্পর্কের মধ্যে, আপনি আপনার সামাজিক বৃত্ত প্রসারিত করতে পারেন। যুবরা নতুন লোকের সাথে দেখা করে এবং যদি তারা তাদের পছন্দ করে তবে তারা তাদের সাথে আরও সম্পর্ক বজায় রাখে।
২. মানসিক চাপ থেকে মুক্তি: এই ধরণের সম্পর্কগুলি আজকের যুবদের মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতেও সাহায্য করছে। প্রকৃতপক্ষে, তাড়াহুড়ো এবং প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার এই সময়ে, যুবরা শান্তির মুহূর্তগুলি সন্ধান করে এবং কিছু মজা করে নিজেকে চাপমুক্ত রাখার চেষ্টা করে। ন্যানোশিপ এখানে তাদের অনেক সাহায্য করে।
৩. আত্মবিশ্বাস বাড়ায়: এই ধরণের সম্পর্ক আত্মবিশ্বাসও বাড়ায়। মানুষ মনে করেন তারা তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কোনও প্রতিশ্রুতি ছাড়াই সুখী হওয়ার আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে ন্যানোশিপ।
ন্যানোশিপের অসুবিধা-
সবকিছুরই যেমন কিছু সুবিধা থাকলে কিছু অসুবিধাও থাকবে। তেমনই ন্যানোশিপেরও কিছু অসুবিধা রয়েছে, যা যুবরা প্রথমে বুঝতে পারেন না। পরে তারা বুঝতে পারে ভুল করেছেন। এর ক্ষতি প্রধানত তিন প্রকার-
১. মানসিক ক্ষতি: কখনও কখনও ন্যানোশিপ আপনাকে মানসিকভাবে আঘাত করতে পারে। কখন এমন হয় যে আপনি মজা করার জন্য কারও সাথে সংযোগ স্থাপন করেন ঠিকই, তবে তার সাথে মানসিক সংযুক্তিও গড়ে ওঠে। কিন্তু এটা জরুরি নয় যে অন্য ব্যক্তিও একই রকম অনুভব করেন। এই পরিস্থিতিতে আপনি মানসিকভাবে আঘাত পান।
২. অপ্রয়োজনীয় চাপ: এই ধরণের সম্পর্ক আপনার জীবনে অপ্রয়োজনীয় চাপও আনতে পারে। আসলে, অনেক সময় এমন হয় যে আপনার সঙ্গী ন্যানোশিপের শর্ত ভুলে যান এবং আপনার পিছনে পড়ে যান। এই ধরণের জিনিস অপ্রয়োজনীয় মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
৩. সামাজিক স্বীকৃতি: অনেক জায়গায় এই ধরণের সম্পর্ককে এখনও ভুল ভাবে দেখা হয়। ভারতের মতো দেশে এই ধরণের সম্পর্ক খোলামেলাভাবে কেউ প্রকাশ করতে পারেন না। আজও, কোনও মেয়ে যদি কারও সাথে এই ধরণের সম্পর্ক করে তবে তাকে সঠিকভাবে দেখা হয় না।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
কার সঙ্গে কার কী ধরণের সম্পর্ক থাকা উচিৎ তা যদিও খুবই ব্যক্তিগত। কিন্তু তবুও সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা ন্যানোশিপের মতো সম্পর্কের প্রবণতাকে যুবদের জন্য বিপজ্জনক বলে অভিহিত করেছেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন যে, আজকের যুবরা খুব দ্রুত সবকিছু চায়; সেটা চাকরি হোক বা বাড়ি বা গাড়ি হোক। সম্পর্ক নিয়েও তাঁদের একই মত। এসব কারণে ন্যানোশিপের মতো রিলেশনশিপের ট্রেন্ড বাড়ছে। যেকোনও সম্পর্ক বিশ্বাস এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয় কিন্তু এই শব্দগুলি ন্যানোশিপে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। এই ধরণের লোকেরা সম্পর্কের কারণেই আজকের যুব সমাজ হতাশাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।
No comments:
Post a Comment