বিজেপিকে তুলোধনা মমতার - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Thursday, February 27, 2025

বিজেপিকে তুলোধনা মমতার


নিজস্ব প্রতিনিধি, ২৭ ফেব্রুয়ারি, কলকাতা: একুশের বিধানসভার নির্বাচনী প্রচারণায় ‘খেলা হবে’ স্লোগানই হয়ে উঠছিল রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তণমূল কংগ্রেসের প্রধান হাতিয়ার। নির্বাচনী প্রচারণায় বেরিয়ে মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রামে বাম পা'য় আঘাত পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা মুখ্যমন্ত্রী। ওই অবস্থায় প্রচারণায় দেখা দিয়েছিল মমতাকে। সেসময় তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, 'ভাঙ্গা পায়েই খেলা হবে।' এরপর ওই বছরের মে মাসে রাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করে তৃণমূল। 


বছর ঘুরতেই ২০২৬ সালে ফের রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন। এই নির্বাচনেও দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে চতুর্থ বারের জন্য রাজ্যের ক্ষমতায় আসতে চলেছে তৃণমূল। আগাম এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন দলনেত্রী। আর সেদিকটি মাথায় রেখে এখন থেকেই দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা 'খেলা আবার হবে। ২০২৬ এর খেলাটা আরেকটু জোরে হবে। ফুটবলটা, ক্রিকেট বলটা জোরে মারতে হবে, চু কিত কিত খেলা হবে। আর এক্ষেত্রে প্রথম কাজ হবে ভোটার তালিকা দিয়ে। এর পাশাপাশি মানুষের সাথে সংযোগ স্থাপন করা, দলের সংগঠনকে শক্তিশালী করা, এলাকা নজর রাখার কাজটাও করতে হবে।' 


বৃহস্পতিবার কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে দলীয় কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে এই বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। 


মমতা দাবী, 'আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃণমূল ফের ক্ষমতায় আসবে। বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম-এর জামানত বাজেয়াপ্ত করতে হবে। এবারে তাদের জামানাতে বাজেয়াপ্ত করার পালা। যারা বাংলা সংস্কৃতি, সম্মান নিয়ে যারা অপমান করে, তাদের জন্য এ রাজ্যে কোনও জায়গা নেই।' 


আত্মবিশ্বাসের সাথে মমতা ফের বলেন, 'আগামী নির্বাচনে আমরা ২১৫ আসন পার করব, তারপরে কথা হবে। তার থেকে বেশি হবে তো, কম হবে না। ওই নির্বাচনে বিজেপির হার হবে। ওদের এত গুরুত্ব বা দেওয়ার কোনও কারণ নেই। পশ্চিমবঙ্গে কেউ যদি টিকে থাকে সেটা তৃণমূল কংগ্রেস। আর কেউ নয়।' 


তাঁর অভিযোগ, '২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলার মানুষ যে রায় দিয়েছেন, তাতে আমরা ২৯ জন সাংসদ পেয়েছিলাম। ওই নির্বাচনে পাঁচটা আসনে কারচুপি হয়েছে না হলে আমরা ৩৪ টি আসনই পেতাম।' 


মমতার অভিযোগ, 'নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে এজেন্সির তৎপরতা বাড়বে। ওরা সব সংবাদমাধ্যমকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফেলেছে। সংবাদমাধ্যমের মালিকদের সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স, ইডি দিয়ে ভয় দেখানো হয়। নির্বাচন আসলে মনে পড়ে তৃণমূলের কাকে চার্জশিট দিতে হবে, কাকে চোর বলা হবে, কাকে কারাগারে পাঠাতে হবে। অনেকেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে কিন্তু আজ পর্যন্ত কয়টা প্রমাণ করতে পেরেছেন?' 


'ভুয়া ভোটার' প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন ও বিজেপিকে তুলোধোনা করেন তৃণমূল নেত্রীর বিস্ফোরক দাবী, ভোটার তালিকায় হরিয়ানা সহ অন্য রাজ্যের লোকেদের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন 'পশ্চিমবঙ্গের কোনও ভোটারের এপিক কার্ডে বাইরের লোকের নাম তোলা হচ্ছে। অর্থাৎ ভোটার কার্ডের নাম্বারে বাংলার ভোটারদের নামের জায়গায় পাঞ্জাব, রাজস্থান, হরিয়ানা, বিহার বাসিন্দাদের নাম ঢুকিয়েছে। তারা ট্রেনে করে করে এসে....। এরা (বিজেপি) দিল্লী থেকে এইসব করছে। এই কাজ করেই দিল্লী, মহারাষ্টকে হারিয়েছে। কিন্তু ওরা (বিরোধীরা) খেলাটা বুঝতে পারেনি।' গোটাটাই নির্বাচন কমিশনের আশীর্বাদে হচ্ছে বলে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর। আর তাই ভোটার তালিকা খতিয়ে দেখতে দলের রাজ্য সভাপতি নেতৃত্বে একটি কোর কমিটি গঠন করার কথাও জানিয়ে দেন দলনেত্রী। মমতার অভিমত 'ভোটার তালিকার স্বচ্ছ, পরিষ্কার করতে হবে। না হলে নির্বাচনে যাওয়ার কোন অর্থ হয় না।' 

 

মমতার আশঙ্কা '...আর এভাবেই কোনও একদিন 'জাতীয় নাগরিক পঞ্জি' (এনআরসি) বা 'সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন' (সিএএ) এর নাম করে, ছলচাতুরি করে আপনাদের নামটা ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেবে।' তাই রাজ্যের ভোটারদের ভোটার তালিকায় তাদের নামটা মিলিয়ে দেখে নেওয়ার পরামর্শ দেন মমতা। 


নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করে মমতার মন্তব্য, 'আমি নির্বাচন কমিশনকে খুব সম্মান করতাম। এখনও করি। যতদিন সম্মানের জায়গা থাকবে ততদিন করব। সম্প্রতি যিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হয়েছেন তিনি স্বরাষ্ট্র সচিব ছিলেন, পুরোটাই বিজেপির লোক দিয়ে করা। এই নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ যতদিন না হবে, ততদিন এই বদনাম থেকে যাবে। গণতন্ত্রের এরকম দুরাবস্থা আর দেখিনি। আমরা গর্ব করি যে গোটা বিশ্বে ভারত বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ কিন্তু সত্যি কি তাই? মহারাষ্ট্র, দিল্লীতে ওরা কি কায়দায় নির্বাচনে হারিয়েছে কেউ ধরতে পারিনি। এখন বাংলাতেও শুরু করেছে। বাংলায় আমরা ধরবো এবং যোগ্য জবাব দেব। এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ। আমরা দিল্লী বা মহারাষ্ট্র নই, আমরা পশ্চিমবঙ্গ। গণতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে আমরা কিন্তু নির্বাচন কমিশনের সামনে ধর্না দিতে পারি।'  


তৃণমূল নেত্রী বলেন, 'বিজেপির লক্ষ্য ভোটে বাংলাকে হারাতে হবে, বাংলার সংস্কৃতি দখল করতে হবে। কিন্তু এ জিনিস আমরা মানব না। প্রয়োজন হলে বাংলায় আর একটা জাগরণ হবে। বাংলার মানুষ বহিরাগতদের সম্মান জানায় কিন্তু বহিরাগতদের বাংলা দখল করতে দেব না।' তিনি আরও বলেন '২০২৭ থেকে ২০২৯- এর মধ্যে বিজেপির ক্ষমতা শেষ। ওরা আর দুই-তিন বছর যা পারে করবে, দুই-তিন বছরের বেশি আয়ু ওদের নেই। এখন ওরা বাংলাকে টার্গেট করেছে। কারণ অন্য কেউ লড়তে পারে না। বাংলা লড়াই করতে পারে। কারণ বাংলা রবীন্দ্র, নজরুল, নেতাজি সুভাষ চন্দ্রের দেশ।' 


তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপির তোলা 'অনুপ্রবেশ তত্ত্ব' নিয়েও নিশানা করতে ছাড়েননি মমতা। তিনি বলেন, 'ওরা (বিজেপি) খালি অনুপ্রবেশের অভিযোগ করে। আজকে অন্য দেশ অনুপ্রবেশকারী আখ্যা দিয়ে ভারতের লোকেদের হাতে পায়ে শেকল বেঁধে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আর আপনারা যখন মিটিং করছেন। আমার দেশের মানুষদের অনুপ্রবেশকারী বলে তাড়িয়ে দিচ্ছে সেটা আপনারাও একবারও দেখছেন না। আপনারা কি নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন?' তার প্রশ্ন, 'কেন ভারত সরকার প্লেন পাঠিয়ে বলছে না, আমাদের লোককে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে আনব এবং তাদের এখানে কাজ দেব?' 


দলীয় নেতাকর্মীদের আরও শৃঙ্খলাপরায়ণ হওয়ার নির্দেশ দিয়ে মমতার বার্তা, 'যারা ভালো কাজ করছেন তাদের পদোন্নতি করব। যারা কাজ করেন না, শুধু ভাষণ দেন, আর বিবৃতি দেন, দলের সমালোচনা করেন, বিজেপি, সিপিআইএম'-এর বিরুদ্ধে লড়াই করেন না বা মানুষের পাশে থাকেন না, তাদের জন্য কোনও দয়া-মায়া নেই।'

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad