শত্রু সিনেমার মাস্টার তাপু এখন কোথায়? - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Wednesday, February 26, 2025

শত্রু সিনেমার মাস্টার তাপু এখন কোথায়?




প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ২৬ ফেব্রুয়ারি : সুপারস্টার হওয়া আশীর্বাদ নয় অভিশাপ! শত্রু সিনেমার সেই মাস্টার তাপুর বর্তমান অবস্থা দেখে এমনটাই বলছেন নেটনাগরিকরা। কম বয়সে জনপ্রিয়তা, অভিনয়ে কোটি কোটি দর্শকদের মন জয় করা, সর্বোপরি রাতারাতি শিশু শিল্পী হিসেবে সুপারস্টার হয়ে যাওয়াও যে কতখানি ভয়ংকর হতে পারে তার উদাহরণ এই মাস্টার তাপু। আজ তার বর্তমান অবস্থা দেখে শিহরিত টলিউড, মানতেই পারছেন না ৯০ দশকের বাংলা সিনেমার দর্শকরা। কোথায় কেমন আছেন মাস্টার তাপু? শুনলে বিশ্বাস হবে না আপনারও।


মাস্টার তাপু, যার ভালো নাম শুভজিৎ দে। নামটা শুনলেই মনে পড়ে যাবে শত্রু, একান্ত আপন, আশা ভালবাসা, প্রতিকারের মত সিনেমাগুলোর নাম, যেখানে একটি মিষ্টি চেহারার ছোট্ট ছেলে তার সাবলীল অভিনয় দিয়ে কখনও দর্শকদের হাসিয়েছে, কখনও কাঁদিয়ে ছেড়েছে। সকলেই ভেবেছিলেন এই ছেলে বড় হয়ে অনেক বড় সুপারস্টার হবে। সুপারস্টার তো সেই ছোটবেলাতে হয়েই গিয়েছিলেন মাস্টার তাপু, কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন তিনি। আর খুঁজে পাওয়া গেল না তাকে। এখন মানসিক ভারসাম্য একেবারেই হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। গত কয়েকটা বছরে তার সঙ্গে যা কিছু ঘটেছে সেটা যেন কোনও ট্র্যাজেডি সিনেমার গল্প।


এখন তার চেহারা দেখলে ৩০ বছর আগের সেই ছোট্ট মিষ্টি চেহারার মিল পাবেন না। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়াতে তাপুর বর্তমান অবস্থার কিছু চিত্র ধরা পড়েছে। কেউ তার খোঁজ রাখে না। অথচ তিনি আছেন, এই কলকাতাতেই আছেন। বাইপাসের ধারে একটি ফ্ল্যাটে গুমনাম জীবন যাপন করছেন শুভজিৎ। তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাওয়া হলেও তিনি ক্যামেরার সামনে আসতে নারাজ। ক্যামেরা কিংবা লাইমলাইট সম্পর্কে এতটাই ভীতি কিংবা বিরক্তি, হতাশা জন্মেছে তার মনে যে তিনি প্রায় নিজেকে ঘর বন্দি করে ফেলেছেন। কিন্তু হঠাৎ কেন এমন দশা হল তার? সেই উত্তর খুঁজছেন নেট নাগরিকরা।


অথচ শুভজিৎ কিন্তু বরাবর এরকম ছিলেন না। ছোটবেলা থেকেই তিনি খুব মেধাবী ছিলেন। তিনি ছিলেন টলিউড প্রযোজক নৃপেন দের ছেলে। শত্রু সিনেমার জন্য অঞ্জন চৌধুরী শিশু শিল্পী হিসেবে নতুন মুখের খোঁজে ছিলেন। ছোট্টুর চরিত্রের জন্য তাপুকে তার পছন্দ হয়। ব্যাস এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাতে। তার বলা সেই, “পুলিশ এই পুলিশ” ডায়লগ যেন আজও কানে ভাসে দর্শকদের।


ছোটবেলায় প্রসেনজিৎ, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, তাপস পাল, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, রঞ্জিত মল্লিকের মত সুপারস্টারদের সঙ্গে টক্কর দিয়ে অভিনয় করেছেন শুভজিৎ। তার এমন পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না চিরঞ্জিত চক্রবর্তীও। তার কথায় তাপু খুবই বুদ্ধিমান ছিলেন ছোটবেলায়। শুটিংয়ের সময় তাকে শুধু একবার নির্দেশ দিলেই সে সুন্দরভাবে নিজের মত শর্ট দিত। আবার কাজের ফাঁকে বড়দের সঙ্গে বসে আড্ডাও দিত, হাসি-ঠাট্টাও চলত। তাপুর সঙ্গে খুব সুন্দর কিছু স্মৃতি রয়েছে চিরঞ্জিতের। তাকে নিয়ে সকলেরই অনেক আশা ছিল।


অভিনয়ের পাশাপাশি পড়াশোনাতেও তুখর ছিলেন শুভজিৎ। পড়াশোনা শেষ করে তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে মাস কমিউনিকেশনের শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। শুভজিতের সম্পর্কে এতদিন শুধু এটুকুই জানা ছিল টলিউডের। শুভজিৎ আর কখনও ক্যামেরার সামনে হিরো হয়ে ফেরেননি। তার জীবনটা যেন অন্ধকারে তলিয়ে গিয়েছে। যেন তিনি তার অতীতের সব ঘটনা ভুলে গিয়েছেন বা ভুলে যেতে চান। অভিনেতা হিসেবেও নিজেকে আর পরিচয় দিতে চান না শুভজিৎ। কিন্তু কেন? এর উত্তর খুঁজেছেন চিরঞ্জিত।


চিরঞ্জিত মনে করছেন হয়তো বা এই সুপারস্টার হয়ে ওঠাটাই অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জীবনে। হয়তো বা এই খ্যাতি আজীবন তাড়িয়ে নিয়ে বেরিয়েছে তাকে। বন্ধু মহলে কিংবা আশেপাশ থেকে এর জন্য তাকে অনেক ঠাট্টা তামাশাও হজম করতে হতে পারে। ছোট বয়সে এত জনপ্রিয়তাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিরঞ্জিতের কথায় ছোট ছোট শিশুরা যখন অভিনয়ে আসে তখন তাদের মিষ্টি চেহারা, নিষ্পাপ মুখ দেখে দর্শকরা ভালোবেসে ফেলেন। সেই তারাই যখন একটু বড় হওয়ার পর অভিনয়টাকে সিরিয়াস ভাবে নিতে চায়, তখন তাদের চেহারা বদলে গেলে নির্মাতারা আর নিতে চান না। শুভজিতের সঙ্গেও তেমন কিছু হয়ে থাকতে পারে।


আদতে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুভজিতের সঙ্গে ঠিক কী কী ঘটেছে, কেন অত সুন্দর ব্রাইট একটি ছেলে হারিয়ে ফেলল তার ভবিষ্যৎ সেটা থেকে যাবে রহস্যের আড়ালেই। তবে চিরঞ্জিত অন্তত মাস্টার তাপুর ব্যাপারে জেনে এই কঠিন সময়ে তার পাশে থাকতে চেয়েছেন। একবার হলেও তার সঙ্গে বসে কথা বলতে চান। যদি তাকে আবার ফেরানো যায় জীবনের মূল স্রোতে, তবে তিনি সব রকম চেষ্টা করতে রাজি। প্রয়োজনে অর্থনৈতিক সমস্যা থাকলেও তিনি সাহায্য করতে চান শুভজিৎকে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad