প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ০৫ মার্চ : বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন যে ভারত, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলির উপর পারস্পরিক শুল্ক ২ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে। এই ঘোষণার পাশাপাশি ট্রাম্প একটি বিতর্কিত বক্তব্যও দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যগুলি নোংরা এবং জঘন্য। মার্কিন কংগ্রেসে তার যৌথ ভাষণে ট্রাম্প ভারতের পাশাপাশি চীনের নামও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন যে তারা ১ এপ্রিল থেকে প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিল কিন্তু 'এপ্রিল ফুল'-এর কারণে, তারা ২ এপ্রিল থেকে এটি বাস্তবায়ন করবে। ট্রাম্প বলেন, "আমি ১ এপ্রিল এটা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এপ্রিল ফুল দিবসের জন্য অভিযুক্ত হতে চাইনি। একদিন আমাদের অনেক মূল্য দিতে হবে, কিন্তু আমরা যাই হোক ২ এপ্রিল এটা করতে যাচ্ছি। আমি খুবই কুসংস্কারাচ্ছন্ন ব্যক্তি।" ট্রাম্প বলেন, এই শুল্ক আরোপের উদ্দেশ্য আমেরিকাকে আবার ধনী ও মহান করে তোলা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিশ্চিত করেছেন, "তারা আমাদের উপর যে শুল্কই আরোপ করুক না কেন, আমরাও তাদের উপর একই শুল্ক আরোপ করব। অন্যান্য দেশ কয়েক দশক ধরে আমাদের উপর শুল্ক ব্যবহার করে আসছে এবং এখন আমাদের সেই অন্যান্য দেশের উপর শুল্ক আরোপ শুরু করার পালা। গড়ে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ব্রাজিল, ভারত এবং অসংখ্য অন্যান্য দেশ আমাদের উপর অনেক বেশি শুল্ক আরোপ করে। এটা খুবই অন্যায্য। ভারত আমাদের উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এই ব্যবস্থা আমেরিকার প্রতি ন্যায্য নয়, কখনও ছিলও না।"
"আমরা আগে কখনও এটা করিনি, কিন্তু আমেরিকাকে প্রথমে রাখার সময় এসেছে," ট্রাম্প বলেন। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভারসাম্যহীন বাণিজ্য নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত আমেরিকান কৃষক, উৎপাদক এবং শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
ঘোষণা অনুসারে, এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে সেই দেশগুলিকে সাড়া দেওয়ার জন্য যারা আমেরিকান পণ্যের উপর ভারী শুল্ক আরোপ করে, যেখানে আমেরিকা তাদের পণ্যের উপর তুলনামূলকভাবে কম বা কোনও শুল্ক আরোপ করে না। ট্রাম্প বিশেষভাবে ভারত ও চীনের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই দেশগুলির বাণিজ্য নীতি আমেরিকান বাজারের প্রতি "অন্যায্য"। তিনি আরও ইঙ্গিত দেন যে এই নীতি বিশ্ব বাণিজ্যে একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারে, যা বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খল এবং দামের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
এই ঘোষণা ভারত ও চীনের সাথে আমেরিকার বাণিজ্যিক সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন যে ভারত ইতিমধ্যেই কিছু আমেরিকান পণ্যের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে তার সাম্প্রতিক বৈঠকেও ট্রাম্প এই বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন এবং এটি "প্রতিদান" দেওয়ার কথা বলেছিলেন।
অর্থনীতিবিদরা বিশ্বাস করেন যে এই পদক্ষেপের ফলে স্বল্পমেয়াদে দাম বৃদ্ধি পেতে পারে, তবে ট্রাম্প দাবী করেছেন যে এটি মার্কিন শিল্পকে চাঙ্গা করবে এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমাবে। তবে, এই ঘোষণার পর বিশ্ববাজারে অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অনেক দেশ এই নীতির প্রতিক্রিয়ায় তাদের কৌশল বিবেচনা করছে।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখ এখন ভারত ও চীনের প্রতিক্রিয়ার দিকে নিবদ্ধ। এই পদক্ষেপ কি বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা করবে নাকি নতুন বাণিজ্য অংশীদারিত্বের ভিত্তি তৈরি করবে তা আগামী দিনে স্পষ্ট হবে।
No comments:
Post a Comment