প্রেসকার্ড নিউজ স্পোর্টস ডেস্ক, ০৩ মার্চ: আজ ৩ মার্চ, এটি সেই তারিখ যা পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ভক্তরা কালো দিন হিসেবে স্মরণ করেন। ১৬ বছর আগে ২০০৯ সালের এই দিনে (৩ মার্চ) পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা দলের মধ্যে লাহোরে ক্রিকেট ম্যাচ খেলার কথা ছিল। কিন্তু কে জানত যে সন্ত্রাসীদের পরিকল্পনা ছিল অন্য কিছুই। এই দিনে সন্ত্রাসীরা লাহোরের রাজপথে রক্তক্ষয়ী খেলা খেলে। শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়দের টার্গেট করে তারা। ভাগ্যদেবতা সহায় যে, দলের কোনও খেলোয়াড়ের কিছুই হয়নি। শ্রীলঙ্কা দলের বাস চালক সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে খেলোয়াড়দের নিরাপদে উদ্ধার করেন। তবে কয়েকজন খেলোয়াড় সামান্য চোট পান। এই রক্তক্ষয়ী খেলায় পাকিস্তানের ৬ পুলিশ-সহ ৮ জনের মৃত্যু হয়।
এই সন্ত্রাসী হামলার পর বিশ্বের সব দলই পাকিস্তানে যেতে অস্বীকার করেছিল। যদিও, এখন সবকিছু ট্র্যাকে ফিরে এসেছে। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এর আয়োজক দেশ পাকিস্তান। উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের পর প্রথম আইসিসি টুর্নামেন্ট পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। টুর্নামেন্টটি এখন নকআউট রাউন্ডে পৌঁছে গেছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ৮টি দল খেলছে, যার মধ্যে ৪টি দল সেমিফাইনালে উঠেছে। এই দলগুলো হল ভারত, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া।
যদিও, এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি চলাকালীন সন্ত্রাসী হুমকি এখনও দেখা যাচ্ছে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (পিআইবি) সতর্কতা জারি করেছে। এর ভিত্তিতে ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রদেশ (আইএসকেপি) পাকিস্তানে ম্যাচ দেখতে আসা বিদেশিদের নিশানা করার পরিকল্পনা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে আজ এই প্রতিবেদন শ্রীলঙ্কা দলের ওপর আক্রমণ নিয়ে, যা নাড়িয়ে দিয়েছিল ক্রিকেট বিশ্বকে। শ্রীলঙ্কা দল ২০০৯ সালের শুরুতে পাকিস্তান সফরে ছিল। দুই দলেরই দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলার কথা ছিল। সিরিজের প্রথম ম্যাচ ২১ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি করাচিতে খেলা হয়, যা ড্র হয়েছিল। দ্বিতীয় ম্যাচটি ১ মার্চ থেকে ৫ মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এই সময়ে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর পর সন্ত্রাসী হামলা হয়।
শ্রীলঙ্কা দল লাহোরে দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলার জন্য হোটেল থেকে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে যাচ্ছিল, তখন এক ডজন মুখোশধারী সন্ত্রাসী বাসে হামলা চালায়। আক্রমণে আহত হন শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারা, অজন্তা মেন্ডিস, থিলান সামারাবিরা, থারাঙ্গা পারনাভিতানা এবং চামিন্দা ভাস।
হামলায় ৬ পাকিস্তানি পুলিশ-সহ ৮ জনের মৃত্যু হয়। এ সময় বাসটি চালাচ্ছিলেন মেহের মোহাম্মদ খলিল নামে এক চালক। খলিলের বুদ্ধিমত্তা পুরো দলকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছিল। তুমুল গোলাগুলির মধ্যে একটানা গাড়ি চালিয়ে স্টেডিয়ামে পৌঁছান তিনি। ২০ মিনিটের মধ্যে বাসটিকে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে পৌঁছে দেন খলিল। এভাবেই খলিলের সাহসিকতা রক্ষা করে খেলোয়াড়দের প্রাণ। হামলার পর শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়দের স্টেডিয়াম থেকে বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। আক্রমণের পর শ্রীলঙ্কা দল সফর মাঝপথে ছেড়ে দেশে ফিরে আসে। সাহসিকতার জন্য খলিলকে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি সম্মানিতও করেছেন।
উল্লেখ্য, সন্ত্রাসীরা প্রথমে বাসটিকে টার্গেট করে। প্রথমে গুলি, পরে রকেটও ছোড়ে। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। বাসটিতে হ্যান্ড গ্রেনেড দিয়েও হামলা করা হয়, তবে গ্রেনেড বিস্ফোরণের আগেই বাসটি তার উপর দিয়ে পার হয়ে চলে যায়।
No comments:
Post a Comment