Friday, April 25, 2025

"অবিলম্বে পাক নাগরিকদের চিহ্নিত করে দেশ থেকে বহিষ্কার করুন", সব মুখ্যমন্ত্রীদের নির্দেশ অমিত শাহের



প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪১:০১ : শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দেশের সকল মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন এবং তাদের নিজ নিজ রাজ্যে বসবাসকারী পাকিস্তানি নাগরিকদের অবিলম্বে চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রীদের পাকিস্তানি নাগরিকদের তালিকা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠাতে বলেছেন যাতে তাদের ভিসা অবিলম্বে বাতিল করা যায় এবং তাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করা যায়।


২২ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে, পহেলগামের বৈসরানে সন্ত্রাসী হামলায় ২৫ জন ভারতীয় পর্যটক এবং একজন নেপালি নাগরিক নিহত হন। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর এই হামলাকে কাশ্মীর উপত্যকায় সবচেয়ে মারাত্মক হামলাগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদকে দায়ী করেছে এবং প্রতিক্রিয়ায় বেশ কয়েকটি কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করা, আত্তারি-ওয়াঘা সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করা, নয়াদিল্লী থেকে পাকিস্তানি সামরিক সহকারীদের বহিষ্কার করা এবং সমস্ত পাকিস্তানি নাগরিকের ভিসা বাতিল করা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শাহ মুখ্যমন্ত্রীদের তাদের রাজ্যে বসবাসকারী সমস্ত পাকিস্তানি নাগরিকের একটি তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রে জমা দিতে বলেছেন। সরকার ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে যে পাকিস্তানি নাগরিকদের বিদ্যমান সমস্ত ভিসা ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে বাতিল করা হবে, অন্যদিকে মেডিক্যাল ভিসা ২৯ এপ্রিল, ২০২৫ পর্যন্ত বৈধ থাকবে। এছাড়াও, ভারতীয় নাগরিকদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাকিস্তান থেকে ফিরে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

শাহ মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে এই কাজটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার এবং তাদের নিজ নিজ রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার আবেদন করেছেন। তিনি পাকিস্তানি নাগরিকদের সনাক্তকরণ এবং তাদের ভিসা বাতিলের প্রক্রিয়ায় যাতে কোনও বিলম্ব না হয় তা নিশ্চিত করারও অনুরোধ করেছেন। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়ে রাজ্যগুলির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে যাতে প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।

পহেলগাম হামলার পর, ভারত পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও অবনমিত করেছে। ভারত নয়াদিল্লীতে অবস্থিত পাকিস্তানি হাইকমিশনের সামরিক উপদেষ্টাদের বহিষ্কার করেছে এবং ইসলামাবাদে অবস্থিত তাদের হাইকমিশনের কর্মী সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায়, পাকিস্তান ভারতীয় বিমানের জন্য তার আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে এবং ভারতের সাথে সমস্ত বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে। সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার ভারতের সিদ্ধান্তকে পাকিস্তান "যুদ্ধের পদক্ষেপ" বলে অভিহিত করেছে।

পহেলগাম হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন যে এই হামলার অপরাধী এবং তাদের সমর্থকদের "কল্পনার বাইরেও শাস্তি" দেওয়া হবে। বিহারের মধুবনিতে এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, "সন্ত্রাসবাদী এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের রেহাই দেওয়া হবে না।" মোদী আরও স্পষ্ট করে বলেছেন যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত কোনও কসরত ছাড়বে না।

কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলিও এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপগুলিকে সমর্থন করেছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন যে দেশকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। হামলার শিকারদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যের বার্তা দিতে দলটি ২৫ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে দেশজুড়ে মোমবাতি মিছিলের আয়োজন করে।

পহেলগাম হামলার নিন্দা জানিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ। ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন যে এই শোকের মুহূর্তে ফ্রান্স ভারতের সাথে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আমেরিকা জম্মু-কাশ্মীরের জন্য "ভ্রমণ করবেন না" পরামর্শ জারি করেছে এবং ভারতের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে।

ভারত সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার নীতি শিথিল করবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মুখ্যমন্ত্রীদের সাথে আলোচনা এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত এই দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা আগামী দিনে আরও বাড়তে পারে, কারণ দুই দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপে লিপ্ত।

No comments:

Post a Comment