পহেলগাম হামলার পর দিল্লীতে একের পর এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড় ধরণের পদক্ষেপের প্রস্তুতি! - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Wednesday, April 30, 2025

পহেলগাম হামলার পর দিল্লীতে একের পর এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড় ধরণের পদক্ষেপের প্রস্তুতি!


ন্যাশনাল ডেস্ক, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৮:০০: জম্মু-কাশ্মীরের পাহালগামে ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপের প্রস্তুতি জোরদার করেছে। এই হামলায় ২৬ জন, যাদের বেশিরভাগই পর্যটক, নিহত হয়। ধর্মীয় পরিচয় জিজ্ঞেস করে সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে তাঁদের খুন করে। এই আবহে আজ বুধবার, দিল্লীতে চারটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হতে চলেছে যা দেখায় যে ভারত সন্ত্রাসবাদের কড়া জবাব দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত। এসব বৈঠকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপের একটি নীলনকশা তৈরি করা হবে।


আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪টি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক

১: ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটির বৈঠক 

পহেলগাম হামলার পর এটি সিসিএসের দ্বিতীয় বৈঠক। সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য এই বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন উপস্থিত থাকবেন। বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হল পহেলগাম হামলার পর নিরাপত্তা প্রস্তুতি পর্যালোচনা করা এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের কৌশল নিয়ে আলোচনা করা। সূত্র জানায়, এই বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনীকে কর্মপন্থা, লক্ষ্য ও সময় নির্ধারণে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। প্রতিবেদন ইন্ডিয়া টিভি হিন্দির। 


২: সভাক্যাবিনেট কমিটি অন পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্সের বৈঠক 

সিসিএসের পর অনুষ্ঠিতব্য রাজনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিপিএ) বৈঠকে রাজনৈতিক প্রভাব ও পদক্ষেপের প্রভাব নিয়ে আলোচনা হবে। এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সভাপতিত্বে থাকবেন এবং এতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, পরিবহন মন্ত্রী নিতিন গড়করি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডা, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এবং অন্যান্য সিনিয়র মন্ত্রীরা উপস্থিত থাকবেন। এই বৈঠকে ভারতের পদক্ষেপের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা হবে।


৩: ক্যাবিনেট কমিটি অন ইকোনমি অ্যাফেয়ার্সের বৈঠক 

তৃতীয় বৈঠকটি হবে অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির, যেখানে পাকিস্তানের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়ে আলোচনা হবে। উরি ও পুলওয়ামা হামলার পর ভারত ইতিমধ্যেই পাকিস্তানকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করতে সফল হয়েছে। এই বৈঠকে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর উপস্থিত থাকবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন, কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এবং অন্যান্য মন্ত্রীরা। বৈঠকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং বাণিজ্য ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হবে।


৪: কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক

দিনের শেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি হবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার, যেখানে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের চূড়ান্ত নীল নকশা তৈরি করা হবে। এ বৈঠকে সব মন্ত্রীর উপস্থিতিতে সামরিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক কৌশল অনুমোদন করা হবে। উল্লেখ্য, ভারত একদিকে যখন সামরিক প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, অন্যদিকে কূটনীতিতেও জোর দিচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মঙ্গলবার ফোনে ৯টি দেশের বিদেশমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এমন পরিস্থিতিতে ভারত সন্ত্রাসবাদের মাস্টারদের যোগ্য জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।


পহেলগাম হামলার পর ভারতের অবস্থান-

প্রতিরোধ ফ্রন্ট (টিআরএফ), লস্কর-ই-তৈবার সাথে সম্পৃক্ত একটি সন্ত্রাসী সংগঠন, পহেলগামের বৈসারন উপত্যকায় সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করেছিল। এই হামলাকে পাকিস্তান মদদপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, যার পরে ভারত বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ করেছে। ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত প্রথম সিসিএস বৈঠকে, ভারত নিম্নলিখিত সিদ্ধান্ত নেয়:-


সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করা: ১৯৬০ সালের চুক্তি অবিলম্বে স্থগিত করা হয়।  


আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ: সমন্বিত চেক পোস্ট অবিলম্বে বন্ধ।  


পাকিস্তানি কূটনীতিকদের ওপর ক্র্যাকডাউন: পাকিস্তান হাই কমিশনের প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের ব্যক্তিত্বহীন ঘোষণা করা হয়েছিল এবং এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। 


সার্ক ভিসা বাতিল: পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সার্ক ভিসা ছাড় স্কিম বাতিল করা হয়েছে, এবং ভারতে উপস্থিত এই জাতীয় নাগরিকদের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে দেশ ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।


এর পাশাপাশি গতকাল মঙ্গলবার একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, 'সন্ত্রাসবাদকে উপযুক্ত আঘাত করা আমাদের জাতীয় সংকল্প। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদার দক্ষতায় আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের পদ্ধতি, লক্ষ্য এবং সময় সেনা ঠিক করুক।' এই বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান, সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী, বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিং এবং নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দিনেশ ত্রিপাঠি উপস্থিত ছিলেন।


এদিকে ভারতের প্রস্তুতি নিয়ে পাকিস্তানে আতঙ্কের পরিবেশ রয়েছে। পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার দাবী করেছেন যে, তাঁর কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে, ভারত আগামী ২৪-৩৬ ঘন্টার মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ করতে পারে। তারার ভারতকে "ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট অভিযোগ" করার জন্য অভিযুক্ত করেছে এবং বলেছে যে পাকিস্তান যে কোনও সামরিক পদক্ষেপের "নির্দিষ্ট এবং সিদ্ধান্তমূলক" জবাব দেবে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ভারতের কর্মকাণ্ডের দায় নিতে আবেদন করেছেন।


দিল্লীতে তোলপাড়, ইসলামাবাদে অস্থিরতা

আজ দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকগুলি পাকিস্তানে অস্বস্তি বাড়িয়েছে। এই সিরিজের বৈঠকগুলি একটি ইঙ্গিত দেয় যে ভারত শুধুমাত্র পহেলগাম হামলার প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত নয়, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্যও প্রস্তুত রয়েছে৷ ঘড়ির কাঁটা যতই এগোচ্ছে, ততই পাকিস্তানের ওপর ভারতের পাল্টা হামলার আশঙ্কা আরও গভীর হচ্ছে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad