ভারতে ১৪ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। কিন্তু আরও উদ্বেগের বিষয় হল, অর্ধেকেরও বেশি মানুষ জানেন না যে তাদের ডায়াবেটিস আছে। এ কারণেই তারা ওষুধ খান না। এর ফলে ডায়াবেটিস শরীরে অনেক রোগের সৃষ্টি করে। ডায়াবেটিস হৃদরোগ, কিডনি রোগ, চোখের রোগ সহ অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। ডায়াবেটিস শরীরে গোপনে আসে। এটি সবসময় কোনও লক্ষণ দেয় না। এ কারণেই মানুষ প্রায়শই এটিকে উপেক্ষা করে। আমরা সকলেই আমাদের জীবনে ব্যস্ত থাকি এবং এই লক্ষণগুলি চিনতে পারি না। কিন্তু এটি তার খেলা চালিয়ে যাচ্ছে এবং শরীরকে ফাঁপা করে দেয়। তবে তাড়াতাড়ি ধরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে, এই ১০টি ছোট লক্ষণ থেকে আপনি ডায়াবেটিসের কিছু লুকানো লক্ষণ চিনতে পারবেন।
১. রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব করা
- যদি আপনি রাতে প্রস্রাব করার জন্য বেশ কয়েকবার ঘুম থেকে উঠেন, তাহলে সম্ভবত আপনি খুব বেশি জল বা চা পান করেছেন, কিন্তু যদি এটি প্রতিদিন হয়, তাহলে এটি আপনার শরীর থেকে একটি সংকেত হতে পারে যে কিছু ঠিক নেই। যখন আপনার রক্তে শর্করার পরিমাণ খুব বেশি থাকে, তখন কিডনি অতিরিক্ত চিনি বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে, যার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়।
২. সর্বদা তৃষ্ণার্ত বোধ করা -
আপনি কি সবসময় জল পান করেন কিন্তু তবুও আপনার তৃষ্ণা মেটে না? ক্রমাগত তৃষ্ণা ঘন ঘন প্রস্রাবের সাথে যুক্ত হতে পারে। আপনি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তরল হারাচ্ছেন এবং আপনার শরীর আপনাকে আরও বেশি তরল পান করতে বলে। এই চক্রটি চলতে থাকে, অর্থাৎ বেশি প্রস্রাব, বেশি তৃষ্ণা এবং বেশি জল পান করা ডায়াবেটিসের লক্ষণ।
৩. ব্যাখ্যাতীত ওজন হ্রাস - যদি আপনি চেষ্টা না করে ওজন হ্রাস করেন, তাহলে এটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে। যদি আপনি আপনার খাদ্যাভ্যাস বা ব্যায়াম পরিবর্তন না করে থাকেন, তাহলে এটি একটি সতর্কতা হতে পারে। যখন আপনার কোষগুলি শক্তির জন্য চিনি পায় না, তখন শরীর চর্বি এবং পেশী পোড়াতে শুরু করে।
৪. অবিরাম ক্লান্তি - আমরা সকলেই মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে পড়ি কিন্তু এই ক্লান্তি আলাদা। আট ঘন্টা ঘুমানোর পরেও এই ধরণের ক্লান্তি আপনাকে ঘুমিয়ে পড়ার অনুভূতি দেয়। যদি আপনার কোষগুলি সঠিকভাবে চিনি শোষণ করতে না পারে, তাহলে আপনি যতই বিশ্রাম নিন না কেন শরীর শক্তি পায় না।
৫. ঝাপসা দৃষ্টি - আপনার দৃষ্টি কি কখনও পরিষ্কার আবার কখনও ঝাপসা? উচ্চ রক্তে শর্করার পরিমাণ আপনার চোখে তরল পদার্থ বাড়িয়ে দিতে পারে এবং লেন্সকে প্রভাবিত করতে পারে। যদি চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে এটি একটি গুরুতর দৃষ্টি সমস্যায় পরিণত হতে পারে।
৬. ক্ষত ধীরে ধীরে নিরাময় - যদি আপনার কাটা, ক্ষত বা পোকামাকড়ের কামড় হয় এবং তা দ্রুত নিরাময় না হয়, তাহলে এর অর্থ হল আপনার ডায়াবেটিস আছে। উচ্চ রক্তে শর্করার পরিমাণ রক্ত প্রবাহকে প্রভাবিত করে এবং আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়, যার ফলে ক্ষত সারাতে সময় লাগে।
৭. হাত ও পায়ে ঝিনঝিন বা অসাড়তা - আপনার কি আঙুল বা পায়ে অদ্ভুত ঝিনঝিন বা অসাড়তা অনুভব করেন? এটি কেবল ভুলভাবে ঘুমানোর কারণে নাও হতে পারে। উচ্চ রক্তে শর্করার কারণে স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে, যাকে ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি বলা হয়। এটি শুরুতে হালকা হয় কিন্তু যত্ন না নিলে আরও খারাপ হতে পারে।
৬. ক্ষত ধীরে ধীরে নিরাময় - যদি আপনার কাটা, ক্ষত বা পোকামাকড়ের কামড় হয় এবং তা দ্রুত নিরাময় না হয়, তাহলে এর অর্থ হল আপনার ডায়াবেটিস আছে। উচ্চ রক্তে শর্করার পরিমাণ রক্ত প্রবাহকে প্রভাবিত করে এবং আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়, যার ফলে ক্ষত সারাতে সময় লাগে।
৭. হাত ও পায়ে ঝিনঝিন বা অসাড়তা - আপনার কি আঙুল বা পায়ে অদ্ভুত ঝিনঝিন বা অসাড়তা অনুভব করেন? এটি কেবল ভুলভাবে ঘুমানোর কারণে নাও হতে পারে। উচ্চ রক্তে শর্করার কারণে স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে, যাকে ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি বলা হয়। এটি শুরুতে হালকা হয় কিন্তু যত্ন না নিলে আরও খারাপ হতে পারে।
৮. খাওয়ার পরেও বারবার ক্ষুধার্ত বোধ করা - যদি খাওয়ার পরেও বারবার ক্ষুধার্ত বোধ করেন, তাহলে এটি উচ্চ শর্করার লক্ষণ হতে পারে। যদি আপনার শরীর রক্তে চিনি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারে, তাহলে এটি আপনাকে ক্ষুধার্ত মনে করে এবং বারবার ক্ষুধার সংকেত পাঠাতে থাকে।
৯. ত্বকে দাগ - আপনার ঘাড়, বগলে বা উরুতে কি কালো, ঘন বা মখমলের দাগ আছে? একে অ্যাক্যানথোসিস নিগ্রিকানস বলা হয়। এটি ইনসুলিন প্রতিরোধের লক্ষণ হতে পারে যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের জন্য একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ।
১০. ঘন ঘন সংক্রমণ- যদি আপনার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়। ঘন ঘন ইউটিআই, ইস্ট ইনফেকশন বা ত্বকের সংক্রমণ হচ্ছে, তাহলে এর অর্থ হল এটি উচ্চ শর্করার লক্ষণ। উচ্চ রক্তে শর্করা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়, যা আপনার শরীরকে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে দুর্বল করে তোলে।
যদি আপনি এই লক্ষণগুলির কোনওটি অনুভব করেন, তাহলে আতঙ্কিত হবেন না তবে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার রক্তে শর্করা পরীক্ষা করা যেতে পারে এবং ডায়াবেটিস তাড়াতাড়ি ধরা পড়তে পারে। ভালো খবর হল, যদি তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে তবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। জীবনধারা পরিবর্তন করে চিনি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ডায়াবেটিস এড়াতে, স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন। বাইরের খাবার কমিয়ে দিন। খুব বেশি চিনি বা অতিরিক্ত লবণ খাবেন না। প্রতিদিন সবুজ শাকসবজি খান। তাজা ফল খান। নিয়মিত হাঁটুন বা হালকা ব্যায়াম করুন। মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন। একটা জিনিস জেনে রাখুন, আপনার শরীর খুব বুদ্ধিমান। যখনই কিছু ভুল হয়, তখন এটি সংকেত দেয়। সময়মতো এই লক্ষণগুলিতে মনোযোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সতর্ক থাকুন, সক্রিয় থাকুন এবং নিজের যত্ন নিন।
No comments:
Post a Comment