ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা যখন চরমে, তখন আরেক প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে অস্বস্তি বাড়ছে। কারণ হলো ভারতের কথিত 'পুশ-ইন' কার্যকলাপ। গত দুই সপ্তাহে, বাংলাদেশ সীমান্তের ছয়টি ভিন্ন স্থান - সিলেট, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি, কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা এবং সুন্দরবন থেকে প্রায় ৩৪০ জনকে জোরপূর্বক সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই পদক্ষেপ কেবল ঢাকার নিরাপত্তা উদ্বেগই বাড়াচ্ছে না বরং দুই দেশের মধ্যে নতুন কূটনৈতিক বিরোধের জন্ম দিচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার বলছে যে এই পুশ-ইন কর্মকাণ্ড কেবল বাংলাদেশি নাগরিকদেরই নয়, বরং রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং অন্যান্য অস্বাভাবিক অনুপ্রবেশকারীদেরও ভারতে ফিরিয়ে দিয়েছে। সীমান্তে বিজিবি ২৬২ জনকে ধরে ফেলে, যার মধ্যে ২২৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক, আর ১৯ জন রোহিঙ্গা। বাকিদের এখনও শনাক্ত করা যায়নি। সাতক্ষীরা সীমান্তে কোস্টগার্ড ৭৮ জনকে আটক করেছে, যার মধ্যে তিনজন ভারতীয় নাগরিকও রয়েছেন। তাদের অনেকেই শারীরিক নির্যাতন এবং চোখ বেঁধে গুজরাট থেকে অজানা স্থানে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।
বাংলাদেশ কেন ভারতকে চিঠি পাঠালো?
বাংলাদেশ সরকার ৯ মে ভারতে একটি তীব্র প্রতিবাদ পত্র পাঠিয়ে এই পুশ-ইনের ঘটনাগুলি অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানায়। ঢাকা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, যদি কোনও ব্যক্তি সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশি হন, তাহলে তাকে আইনি প্রক্রিয়ার অধীনে গ্রহণ করা হবে, কিন্তু এই ধরনের জোরপূর্বক অনুপ্রবেশ গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেছেন যে সরকার প্রতিটি মামলা আলাদাভাবে তদন্ত করছে। সূত্রমতে, ভারত যদি এই কার্যকলাপ বন্ধ না করে, তাহলে ঢাকা 'পুশব্যাক' অর্থাৎ ভারতীয় নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপও বিবেচনা করতে পারে।
সীমান্ত নিরাপত্তা সংস্থাগুলির কাছ থেকে কড়া প্রতিক্রিয়া
যেসব সীমান্তে পুশ-ইনের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এখন নজরদারি বাড়িয়েছে। বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী ঘটনাগুলিকে "পরিকল্পিত এবং অমানবিক কাজ" বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, বিএসএফ মানুষকে এমন দুর্গম এলাকায় ঠেলে দিচ্ছে যেখানে বাংলাদেশের উপস্থিতি সীমিত, যেমন সুন্দরবন এলাকা। দুই দেশের মধ্যে পতাকা বৈঠক এবং লিখিত প্রতিবাদ নথিভুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু ভারতের কাছ থেকে এখনও কোনও সুনির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে
এই সমস্যাটি ভারত ও বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ নিশ্চিত করেছেন যে ঢাকা এখন ভারতে বসবাসকারী অবৈধ ভারতীয় নাগরিকদের একটি তালিকা প্রস্তুত করছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে, বাংলাদেশ প্রতিশোধ নিতে পারে। এই পুরো পরিস্থিতি কেবল সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি করেনি বরং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়েও অনেক প্রশ্ন তুলেছে।
No comments:
Post a Comment