তুলবুল নেভিগেশন প্রকল্প নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনীতি হঠাৎ করে আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বুধবার এই ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এবং পিডিপি প্রধান মেহবুবা মুফতির মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ দেখা গেছে। সিন্ধু জল চুক্তি (IWT) স্থগিত থাকার পরিপ্রেক্ষিতে ওমর আবদুল্লাহ উলার হ্রদের তুলবুল প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরু করার কথা বলার পর উভয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তবে, মেহবুবা এতে ক্ষুব্ধ হন এবং ওমরের বক্তব্যকে "দায়িত্বজ্ঞানহীন" এবং "বিপজ্জনকভাবে উস্কানিমূলক" বলে অভিহিত করেন।
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা আক্রমণ করে বলেন যে তিনি 'সস্তা' প্রচারণা এবং সীমান্তের ওপারের কিছু লোককে খুশি করার 'অন্ধ আকাঙ্ক্ষায়' ডুবে থাকার কারণে সিন্ধু জল চুক্তি জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের সাথে একটি 'ঐতিহাসিক বিশ্বাসঘাতকতা' বলে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন।
তুলবুল প্রকল্প নিয়ে ওমর আবদুল্লাহ এবং মেহবুবা মুফতির মধ্যে এই বাকযুদ্ধের বাইরে তাকালে বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে এই প্রকল্পটি ভারতের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে উপকারী হবে। তুলবুল প্রকল্পটি কেবল কাশ্মীরের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সাথেই যুক্ত নয়, বরং এটি এখন ভারতের কৌশলগত অগ্রাধিকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ - বিশেষ করে পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত সিন্ধু জল চুক্তি (IWT) স্থগিত করার পর।
তুলবুল প্রকল্প কী?
তুলবুল নেভিগেশন প্রকল্পটি উলার ব্যারেজ নামেও পরিচিত। এটি জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুল্লা জেলায় অবস্থিত উলার হ্রদের মুখে একটি প্রস্তাবিত লক-কাম-নিয়ন্ত্রণ কাঠামো। এর উদ্দেশ্য হল ঝিলাম নদীর জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা যাতে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে জলস্তর কমে গেলেও নৌযান চলাচল অব্যাহত থাকে। এটি ঝিলাম উপত্যকায় জল পরিবহন সহজতর করার পাশাপাশি আঞ্চলিক জল ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
পাকিস্তান কেন প্রতিবাদ করছে?
১৯৮৭ সালে ভারত যখন এই প্রকল্পের কাজ শুরু করে, তখন পাকিস্তান এর বিরোধিতা করে এবং এটিকে সিন্ধু জল চুক্তির লঙ্ঘন বলে অভিহিত করে। পাকিস্তান দাবি করে যে প্রকল্পটি এক ধরণের 'স্টোরেজ ব্যারেজ' এবং চুক্তি অনুসারে, ভারত ঝিলাম নদীর মূল স্রোতে জল সঞ্চয় করতে পারে না। পাকিস্তানের যুক্তি হলো, এই কাঠামোটি প্রায় ০.৩ মিলিয়ন একর ফুট (০.৩৬৯ বিলিয়ন ঘনমিটার) জল ধারণ করতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এটি কেবল ব্যাখ্যার বিষয়। টাইমস অফ ইন্ডিয়া সংবাদপত্রের সাথে আলাপকালে, মনীশ পারিকর ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস (আইডিএসএ) এর সিনিয়র ফেলো ডঃ উত্তম সিনহা বলেন, “ভারত সর্বদা যুক্তি দিয়ে এসেছে যে এটি জলের একটি ‘অ-ভোগ্য’ ব্যবহার, যা আইডব্লিউটি-এর অধীনে অনুমোদিত। পাকিস্তান এখনও প্রমাণ করতে পারেনি যে প্রকল্পটি ভাটির দিকের জল ব্যবহারে তাদের কোনও ক্ষতি করবে।
ভারতের জন্য কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
এই প্রকল্পটি ভারতের জন্য অনেক স্তরে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এটি জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের বহু পুরনো দাবির সাথে সম্পর্কিত, যাদের উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা এখনও পর্যন্ত 'কূটনৈতিক কূটনীতির' নামে দমন করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, প্রকল্পটি উলার হ্রদ থেকে নিষ্কাশন প্রক্রিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে, যার ফলে ভাটির অঞ্চলে জলাবদ্ধতা এবং বন্যার ঝুঁকি হ্রাস পাবে।
কেন্দ্রীয় জল কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান কুশবিন্দর ভোহরা বলেন, এই প্রকল্পটি ঝিলাম নদীর জলের গভীরতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে, যার ফলে সারা বছর ধরে নৌযান চলাচল সম্ভব হবে। উপরন্তু, প্রকল্পটি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে "উল্লেখযোগ্য সুবিধা" প্রদান করতে পারে।
এখন ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করেছে। তাই বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে তুলবুল প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এই পদক্ষেপ কেবল আঞ্চলিক উন্নয়নকেই উৎসাহিত করবে না বরং পাকিস্তানকে একটি স্পষ্ট বার্তাও দেবে যে ভারত এখন তার কৌশলগত সম্পদের বিষয়ে আরও দৃঢ় নীতি গ্রহণ করবে।
তুলবুল প্রকল্পটি এখন আর কেবল একটি জলসম্পদ প্রকল্প নয়। এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, আঞ্চলিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির প্রতীক হয়ে উঠেছে - যেখানে কাশ্মীরের নদীগুলিতে প্রবাহিত জল এখন ভবিষ্যতের দিক নির্ধারণ করবে।
No comments:
Post a Comment