প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ০৯ মে ২০২৫, ১৬:১৫:০১ : ইরানে পারমাণবিক অস্ত্র সম্পর্কে একটি বড় প্রকাশ ঘটেছে, যা কেবল আমেরিকা এবং ইজরায়েলকেই নয়, সমগ্র বিশ্বের নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকেও সতর্ক করে দিয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, পাকিস্তান সীমান্ত থেকে মাত্র ১৩০০ কিলোমিটার দূরে ইরান একটি গোপন পারমাণবিক কেন্দ্র প্রস্তুত করেছে। যেখানে দীর্ঘদিন ধরে গোপনে অতি-আধুনিক পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাজ চলছে।
স্যাটেলাইট ছবি এবং গোয়েন্দা নথি থেকে এই স্থানটি শনাক্ত করা হলে, বিশ্বজুড়ে নিরাপত্তা সংস্থাগুলিতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এই স্থানটি রাঙ্গি কামান বা রেইনবো সাইটের কোডনাম দ্বারা পরিচিত এবং এটি ইরানের রাজধানী তেহরানের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত ইভানাকি এলাকায় প্রায় ২,৫০০ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত।
এই রহস্যময় স্থানটি আনুষ্ঠানিকভাবে একটি রাসায়নিক কেন্দ্র হিসাবে রেজিস্টার হয়েছে, যার নাম 'দিবা এনার্জি সিবা' বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে, এটি একটি গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির ভিত্তি, যা ইরানের প্রতিরক্ষা উদ্ভাবন ও গবেষণা সংস্থা (SPND) দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলি বিশ্বাস করে যে এই স্থানটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে এটি বহির্বিশ্বের চোখ থেকে সম্পূর্ণরূপে আড়াল থাকে এবং পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT) এর নজরদারি এড়ায়।
এই স্থানের মূল উদ্দেশ্য হল দূরপাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি। গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে, এখানে ট্রিটিয়াম নামক একটি তেজস্ক্রিয় গ্যাস প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। ট্রিটিয়াম বিশেষ করে হাইড্রোজেন বোমা এবং ইমপ্লোশন-টাইপ পারমাণবিক বোমার মতো উচ্চ-ধ্বংসী অস্ত্রে ব্যবহৃত হয়। এই গ্যাস পারমাণবিক অস্ত্রের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি করে এবং এটি প্রস্তুত করা একটি অত্যন্ত জটিল এবং গোপনীয় প্রক্রিয়া।
রেইনবো সাইটে মোট তিনটি কারখানার মতো ইউনিট রয়েছে, যার মধ্যে একটি কমান্ড সদর দপ্তর এবং একটি উচ্চ-নিরাপত্তা চেকপয়েন্ট রয়েছে। এই এলাকার চারপাশে একটি কড়া সামরিক নজরদারি রয়েছে এবং এখানে বেসামরিক নাগরিকদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ইরানের বিরোধী সংগঠন NCRI অর্থাৎ ইরানের জাতীয় প্রতিরোধ পরিষদের মতে, এই প্রকল্পটি ২০০৯ সালে শুরু হয়েছিল এবং ২০১৩ সাল থেকে এখানে পারমাণবিক কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে কার্যকর রয়েছে।
গোপন ঘাঁটিগুলি আড়াল করতে এবং আন্তর্জাতিক নজরদারি এড়াতে, ইরান কমপক্ষে পাঁচটি ভুয়ো কোম্পানি স্থাপন করেছে, যারা এই পারমাণবিক ঘাঁটিকে একটি সাধারণ ব্যবসায়িক সাইটের মতো দেখাতে কাজ করে। এই কোম্পানিগুলির মাধ্যমে ইরান দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং তদন্ত থেকে এই সাইটটিকে গোপন রেখেছিল। ইজরায়েল এবং আমেরিকার গোয়েন্দা সূত্রগুলি বলছে যে ইরান যদি পারমাণবিক চুক্তি (JCPOA) নিয়ে আবার আলোচনা শুরু না করে, তাহলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
No comments:
Post a Comment