প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ০৪ মে ২০২৫, ০৭:৩০:০১ : ভারতে, বাস্তুশাস্ত্রকে কেবল ভবন নির্মাণের বিজ্ঞান হিসেবেই বিবেচনা করা হয় না, বরং জীবনকে ভারসাম্য বজায় রাখার একটি পবিত্র পদ্ধতি হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। আমাদের ঋষিরা বলেছেন যে, যে বাড়িতে বাস্তু ত্রুটি থাকে, সেখানে শক্তির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং ধীরে ধীরে নেতিবাচক শক্তি সেই স্থানে বাস করতে শুরু করে। প্রায়শই এমন কিছু অদ্ভুত এবং ভীতিকর লক্ষণ দেখা যায়, যা যথেষ্ট যে সেখানে কোনও অদৃশ্য নেতিবাচক শক্তি বা "বিপজ্জনক ছায়া" উপস্থিত রয়েছে।
জানুন বাস্তুশাস্ত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে কোন লক্ষণগুলি ইঙ্গিত দেয় যে কোনও বাড়িতে নেতিবাচক শক্তি বা ছায়া থাকতে পারে এবং সেগুলি এড়ানোর উপায় কী।
১. বাড়ির পরিবেশ হঠাৎ ভারী বোধ করা
যদি আপনার বাড়ির পরিবেশ হঠাৎ ভারী বোধ করতে শুরু করে, অথবা আপনি কোনও কারণ ছাড়াই অস্থির, নার্ভাস বা ভীত বোধ করেন, তবে এটি কোনও নেতিবাচক শক্তি প্রবেশ করেছে এমন লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে যদি এই অনুভূতি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ঘরে হয়, তাহলে সেই স্থানটি বাস্তু দোষ হতে পারে।
প্রতিকার: সেই স্থানে গঙ্গা জল ছিটিয়ে প্রতিদিন একটি প্রদীপ জ্বালান। প্রতিদিন হনুমান চালিশা বা দুর্গা সপ্তশতী পাঠ করুন।
২. ঘন্টার শব্দ বা 'কোই হ্যায়'-এর মতো ফিসফিস শব্দ শুনতে পান
অনেক সময় মানুষ বলে যে রাতে বা নির্জনে তারা ঘরে ঘন্টার মতো ফিসফিস বা আলোর শব্দ শুনতে পান, কিন্তু বাস্তবে কিছুই ঘটে না। এটি একটি লক্ষণ হতে পারে যে ঘরে কোনও অদৃশ্য শক্তি ঘোরাফেরা করছে।
বাস্তু বিশ্লেষণ: যদি উত্তর-পূর্ব দিকে কোনও ভারী জিনিস রাখা হয় বা শৌচাগার তৈরি করা হয়, তাহলে এই ধরনের সমস্যা বাড়তে পারে।
প্রতিকার: উত্তর-পূর্ব দিক পরিষ্কার রাখুন এবং সেখানে প্রতিদিন কর্পূর পোড়ান।
৩. পোষা প্রাণীর অদ্ভুত আচরণ
যদি আপনার পোষা কুকুর বা বিড়াল হঠাৎ করে ঘরের কোনও কোণে ঘেউ ঘেউ করতে, গর্জন করতে বা ভয় পেতে শুরু করে - বিশেষ করে যখন কিছুই থাকে না - তাহলে এটি একটি অত্যন্ত রহস্যময় লক্ষণ। প্রাণীদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় খুব তীক্ষ্ণ এবং তারা অদৃশ্য শক্তি অনুভব করতে পারে।
প্রতিকার: এমন জায়গায় গোবরের পিঠা পোড়ান। সেখানে রুদ্রাক্ষ বা কালো টুরমালিনের মতো স্ফটিক রাখুন।
৪. ইলেকট্রনিক ডিভাইসের হঠাৎ বিকলতা
যদি হঠাৎ করে ঘরে আলো, পাখা, টিভি, ফ্রিজের মতো জিনিসগুলি ত্রুটিপূর্ণ হতে শুরু করে বা কোনও আপাত কারণ ছাড়াই বারবার ফিউজ বাজতে শুরু করে, তাহলে এটি একটি লক্ষণ যে সেই জায়গার শক্তি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে।
বাস্তু কারণ: দক্ষিণ-পূর্ব দিকে (অগ্নি কোণ) জলীয় উপাদানের উপস্থিতি ওয়াটার কুলার বা ওয়াশিং মেশিন।
প্রতিকার: দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কেবল অগ্নি উপাদান (চুলা, গ্যাস ইত্যাদি) রাখুন। নিয়মিত সেই দিকে হনুমানজির ধ্যান করুন।
৫. পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হঠাৎ ঝগড়া, মানসিক চাপ এবং রোগের বৃদ্ধি
বাস্তু শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে যেখানে নেতিবাচক শক্তি থাকে, সেখানে শান্তি, স্বাস্থ্য এবং সমৃদ্ধি নষ্ট হয়। যদি আপনার বাড়িতে কোনও কারণ ছাড়াই ঘন ঘন ঝগড়া, মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব এবং রোগব্যাধি দেখা দেয় - তাহলে এটি একটি বড় লক্ষণ যে সেখানে কিছু ঠিক নেই।
প্রতিকার: লবণ জল দিয়ে পুরো ঘর মুছুন। প্রতি মঙ্গলবার এবং শনিবার হনুমান মন্দিরে যান এবং প্রসাদ প্রদান করুন।
৬. বারবার আয়না ভাঙা বা আয়না নিজে থেকেই পড়ে যাওয়া
বাস্তু অনুসারে, আয়না একটি শক্তি পরিবাহী। যদি কোনও কারণ ছাড়াই আয়না ভেঙে যায় বা পড়ে যায়, তাহলে এটি দেখায় যে বাড়ির শক্তিতে বিশাল ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। এটি নেতিবাচক শক্তির প্রভাব বৃদ্ধির লক্ষণ হতে পারে।
প্রতিকার: ভাঙা আয়না অবিলম্বে সরিয়ে ফেলুন এবং দক্ষিণ দিকে নতুন আয়না রাখবেন না। বাড়ির প্রধান দরজার সামনে একেবারেই আয়না রাখবেন না।
৭. বাচ্চারা বারবার ভয়ে জেগে ওঠে অথবা কাঁদতে থাকে
ছোট বাচ্চারা শক্তির প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল। যদি আপনার বাচ্চা রাতে ভয়ে জেগে ওঠে, খারাপ স্বপ্ন দেখে বা কাঁদতে শুরু করে, তাহলে এটি ঘরে কোনও অদৃশ্য শক্তির উপস্থিতির লক্ষণ হতে পারে।
প্রতিকার: বাচ্চার মাথায় একটি লেবু রাখুন এবং সকালে তা ফেলে দিন। মাথায় তুলসী পাতা বা একটি রূপার মুদ্রা রাখুন।
৮. ধর্মীয় প্রতীক বা মূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে
যদি ঘরে রাখা দেব-দেবীর ছবি বা মূর্তি কোনও কারণ ছাড়াই ভেঙে যায় বা ঝাপসা হয়ে যায়, তাহলে এটি একটি অত্যন্ত গুরুতর লক্ষণ। এটি দেখায় যে বাড়িতে নেতিবাচক শক্তির আধিপত্য রয়েছে।
প্রতিকার: ক্ষতিগ্রস্ত মূর্তি বা ছবি গঙ্গাজল দিয়ে পবিত্র করুন এবং একটি পবিত্র নদীতে ডুবিয়ে দিন। একটি নতুন ছবি বা মূর্তি এনে পূজার স্থানে রাখুন।
৯. গাছপালা শুকিয়ে যাওয়া বা বাড়ির গাছপালায় হঠাৎ পোকামাকড় বৃদ্ধি
বাস্তুতে, সবুজকে ইতিবাচক শক্তির প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যদি আপনার ঘরের গাছপালা কোনও কারণ ছাড়াই শুকিয়ে যায় বা পোকামাকড় পাওয়া যায়, তাহলে এটি একটি লক্ষণ যে সেখানে শক্তির বিকৃতি রয়েছে।
প্রতিকার: উত্তর-পূর্ব দিকে একটি তুলসী গাছ লাগান এবং নিয়মিত জল প্রদান করুন। ঘরে অ্যালোভেরা, স্নেক গাছের মতো বাস্তু শুদ্ধ গাছ লাগান।
১০. দরজা নিজে নিজেই খুলে যায় বা বন্ধ হয় বা ধাক্কা দেয়
যদি আপনার ঘরের দরজা হাওয়া ছাড়াই বারবার নিজে নিজেই খুলে যায় বা ধাক্কা দেয়, তাহলে এটি একটি লক্ষণ হতে পারে যে সেখানে কোনও অদৃশ্য শক্তি উপস্থিত রয়েছে।
প্রতিকার: প্রধান দরজায় সিঁদুর দিয়ে "ওম" বা "স্বস্তিক" করুন। একটি লেবুতে চারটি লবঙ্গ রেখে শনিবার বাড়ির বাইরে ঝুলিয়ে দিন।
যদি আপনি আপনার বাড়িতে উপরে উল্লিখিত লক্ষণগুলির মধ্যে একটি বা একাধিক দেখতে পান, তাহলে সেগুলি উপেক্ষা করবেন না। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে আপনার ঘরকে পবিত্র এবং শক্তিতে পূর্ণ করুন, যাতে ইতিবাচকতা, সমৃদ্ধি এবং শুভতা আবার বাস করে।
বি.দ্র: এখানে দেওয়া তথ্য সাধারণ বিশ্বাস ও মান্যতার ওপর ভিত্তি করে। প্রেসকার্ড নিউজ এটি নিশ্চিত করে না।
No comments:
Post a Comment