Monday, June 9, 2025

চড়া আলোতে বাড়ছে স্থূলতা-ডায়বেটিস! কী এই আলোক‌ দূষণ? প্রভাব পড়ছে বাস্তুতন্ত্রেও


বিনোদন ডেস্ক, ০৯ জুন ২০২৫: ভারত-সহ বিশ্বের অনেক দেশ এখনও বায়ু দূষণ মোকাবেলায় লড়াই করছে। এর মধ্যে এখন আরেকটি দূষণ দেখা দিয়েছে যা সারা বিশ্বে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে; এটি হল আলোক দূষণ অর্থাৎ লাইট পলিউশন। কৃত্রিম আলোর কারণে সৃষ্ট হয় দূষণ। আলোক দূষণ হল অবাঞ্ছিত বা অতিরিক্ত কৃত্রিম আলোর উপস্থিতি, যা রাতের প্রকৃতি, বাস্তুতন্ত্র, প্রাণীজগৎ এবং মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। 


একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যেকোনও পার্টি বা অনুষ্ঠানে বেশি আলো জ্বালিয়ে চমক খুবই সাধারণ বিষয় কিন্তু এই কৃত্রিম ঝলকানি ভারত সহ সারা বিশ্বে 'আলো দূষণ' ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করছে। দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের গবেষণাতেও আলোক দূষণের কথা উঠে এসেছে। 


আলোক দূষণের প্রভাব-

১. মানুষের স্বাস্থ্যে

অতিরিক্ত কৃত্রিম আলো রাতে ঘুমের চক্র ব্যাহত করে, যার ফলে ঘুমের সমস্যা, মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং এমনকি স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।  


২. প্রাণীজগৎ ও বাস্তুতন্ত্রে প্রভাব

আলোক দূষণ পাখি, বাদুড়, মথ, সাগর কচ্ছপসহ বিভিন্ন প্রাণীর অভ্যাস ও আচরণে ব্যাঘাত ঘটায়। উদাহরণস্বরূপ, মথেরা আলোর দিকে আকৃষ্ট হয়ে মারা যায় এবং সাগর কচ্ছপের বাচ্চারা আলোর কারণে ভুল পথে চলে যায়।  


৩. পরিবেশ ও শক্তির অপচয়

অতিরিক্ত আলো পরিবেশের সৌন্দর্য নষ্ট করে এবং শক্তির অপচয় ঘটায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, উন্নত দেশগুলোর এক-তৃতীয়াংশ আলো অপচয় হয়।  


৪. আকাশের সৌন্দর্য নষ্ট

আলোক দূষণের কারণে রাতের আকাশে নক্ষত্র দেখা কঠিন হয়ে পড়ে, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের গবেষণায় বাধা সৃষ্টি করে এবং সাধারণ মানুষের জন্য আকাশের সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ কমিয়ে দেয়।  



আলোক দূষণের কারণ-

অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত কৃত্রিম আলো ব্যবহার।

অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও উন্নয়ন।

অদক্ষ বা অপ্রয়োজনীয় আলোকসজ্জা।

সস্তা ও উজ্জ্বল এলইডি বাতির ব্যবহার। 


সমাধান ও প্রতিকার-

অপ্রয়োজনীয় আলো বন্ধ করা।

নিচের দিকে আলো নির্গত এমন বাতি ব্যবহার করা।

বাতির উজ্জ্বলতা নিয়ন্ত্রণ করা।

আলো নির্গমনের জন্য শিল্ড বা ঢাকনা ব্যবহার করা।

গভীর আকাশ অঞ্চলগুলোকে রক্ষা করা।


সরকারি নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন-

ভারতের প্রেক্ষাপটে

ভারতের শহরগুলোতে আলোক দূষণ বাড়ছে, বিশেষ করে বড় শহরগুলোতে। উদাহরণস্বরূপ, কলকাতা ও দিল্লীর মতো শহরগুলোতে রাতের আকাশে নক্ষত্র দেখা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যেমন "ডার্ক স্কাই" অঞ্চল গঠন, যেখানে আলোক দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।


আলোক দূষণ একটি গুরুতর পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা। ব্যক্তিগত উদ্যোগ, সরকারি নীতিমালা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব।

No comments:

Post a Comment