প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ২৮ জুন ২০২৫, ০৯:০০:০১ : পুরীর জগন্নাথ মন্দির ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন এবং জনপ্রিয় ধর্মীয় স্থানগুলির মধ্যে একটি। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত এখানে আসেন এবং রথযাত্রার মতো মহা উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু এই মন্দিরের সাথে সম্পর্কিত একটি বিশেষ বিষয় সর্বদা মানুষের মধ্যে আলোচনায় থাকে - মন্দিরের তৃতীয় ধাপে পা রাখা নয়। তৃতীয় ধাপকে কেন এত বিশেষ বলে মনে করা হয়? যমরাজের সাথে এর সম্পর্ক কী? আসুন জেনে নেওয়া যাক।
ভগবান জগন্নাথকে ভগবান বিষ্ণুর অবতার হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর ভাই বলভদ্র এবং বোন সুভদ্রার সাথে তাঁর পূজা করা হয়। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরকে চার ধামের মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং বিশ্বাস করা হয় যে এখানে দর্শন করলেই ভক্তরা পাপ থেকে মুক্তি পান।
এই মন্দিরে মোট ২২টি সিঁড়ি রয়েছে, তবে এর মধ্যে একটি - নীচ থেকে তৃতীয় ধাপ - এর আলাদা নিয়ম রয়েছে। ভক্তরা এতে পা রাখেন না এবং পূর্ণ ভক্তির সাথে এটি অতিক্রম করেন না। এই সিঁড়িটিকে "যমশিলা" বলা হয়।
১. যমরাজের সম্পর্ক এবং তৃতীয় ধাপ
পুরাতন কিংবদন্তি অনুসারে, একবার যমরাজ ভগবান জগন্নাথের সাথে দেখা করতে পুরীতে এসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে এই মন্দির দর্শন করার পরে, কোনও ব্যক্তি যমলোকে আসে না, কারণ তার সমস্ত পাপ ধুয়ে যায়। এই কথা শুনে ভগবান জগন্নাথ হেসে বললেন, "যদি তাই হয়, তাহলে এই মন্দিরের তৃতীয় ধাপটিকে আপনার স্থান হিসাবে বিবেচনা করা উচিত।"
ভগবান সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে দর্শনের পরে, যে ভক্ত এই ধাপে পা রাখবেন, তার পাপ অবশ্যই মুছে যাবে, তবে তাকে যমলোকে যেতে হবে। সেই থেকে, এই তৃতীয় ধাপটি যমরাজের প্রতীক হয়ে ওঠে এবং এটি যমশিলা নামে পরিচিতি লাভ করে।
কেন এটি নিষিদ্ধ?
এই বিশ্বাসের কারণে, মন্দিরে একটি নিয়ম তৈরি করা হয়েছিল যে ভগবানের দর্শনের পর, কোনও ব্যক্তি এই তৃতীয় ধাপে পা রাখবেন না। এই নিয়মটি কেবল ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত নয়, বরং এক ধরণের সতর্কীকরণও। তৃতীয় ধাপকে সম্মান জানানো যমরাজকে সম্মান জানানোর সমান বলে মনে করা হয়। ভক্তরা এটিকে খুব গুরুত্ব সহকারে বিশ্বাস করেন এবং এটি অতিক্রম করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করেন।
২. মন্দিরে ঈশ্বরের হৃদয় স্পন্দিত হচ্ছে
কথিত আছে যে শ্রীকৃষ্ণ যখন পৃথিবীতে তাঁর জীবন শেষ করেছিলেন, তখন তাঁর পুরো শরীর পাঁচটি উপাদানে মিশে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁর হৃদয় বেঁচে ছিল। বিশ্বাস করা হয় যে এই হৃদয়টি এখনও কাঠের তৈরি শ্রীকৃষ্ণের মূর্তিতে নিরাপদ এবং ধীরে ধীরে স্পন্দিত হয়। এই মূর্তিটি প্রতি ১২ বছর অন্তর পরিবর্তন করা হয়, কিন্তু ভিতরে রাখা 'রহস্যময় উপাদান' কখনও পরিবর্তন হয় না।
৩. ঢেউয়ের শব্দ কেন বন্ধ হয়?
মন্দিরের প্রধান ফটক অর্থাৎ সিংহদ্বারের বাইরে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ স্পষ্ট শোনা যায়। কিন্তু মন্দিরে প্রবেশ করার সাথে সাথেই ঢেউয়ের শব্দ হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে যায়। এটা কোনও ভ্রম নয়, বরং সবার সাথেই ঘটে। আজ পর্যন্ত কেউ বুঝতে পারেনি কেন এমন হয়।
৪. হাওয়ার বিরুদ্ধে পতাকা
মন্দিরের চূড়ায় উড়ন্ত পতাকা সর্বদা হাওয়ার বিপরীত দিকে উড়ে। এটি প্রাকৃতিক নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করে। এমন একটি বিশ্বাসও রয়েছে যে মন্দিরের পতাকা যদি কোনও দিন পরিবর্তন না করা হয়, তাহলে মন্দিরটি ১৮ বছরের জন্য বন্ধ থাকবে। বিশ্বাস করা হয় যে পুরানো পতাকা নেতিবাচক শক্তি আকর্ষণ করে, তাই এটি প্রতিদিন পরিবর্তন করা হয়।
৫. রান্নাঘরে বিপরীত ক্রম
জগন্নাথ মন্দিরের রান্নাঘরকে বিশ্বের বৃহত্তম রান্নাঘরের মধ্যে গণ্য করা হয়। এখানে একটির উপরে রাখা সাতটি মাটির পাত্রে খাবার রান্না করা হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল উপরে রাখা পাত্রটি প্রথমে রান্না করা হয়, তারপর নীচের পাত্রটি এবং অবশেষে নীচে রাখা পাত্রটি রান্না করা হয়। এই নিয়মটি প্রতিদিনই পালন করা হয় এবং আজ পর্যন্ত কেউ এটি বুঝতে পারেনি।
৬. সুদর্শন চক্র এবং অদৃশ্য ছায়া
মন্দিরের উপরে সুদর্শন চক্র স্থাপন করা হয়েছে, যেকোনও দিক থেকে এটি দেখুন, মনে হবে এটি আপনার দিকেই তাকিয়ে আছে। এই চক্রটি প্রতিটি কোণ থেকে একই রকম দেখাচ্ছে। একইভাবে, আরেকটি রহস্য হল মন্দিরের শিখরের ছায়া। এত উচ্চতা থাকা সত্ত্বেও, মন্দিরের ছায়া মাটিতে কোথাও দেখা যায় না। এই জিনিসটি বিজ্ঞানকেও অবাক করে।
No comments:
Post a Comment