Saturday, July 5, 2025

ভবিষ্যৎ দেখে অন্যকে পথ দেখান, কিন্তু নিজেরটা নয়! জ্যোতিষ শাস্ত্রে যে নিয়মে বাঁধা জ্যোতিষীরাও



প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৯:০০:০১ : একজন প্রকৃত জ্যোতিষী হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি নিজেকে একজন মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করেন, স্রষ্টা নয়। তিনি অন্যদের পথ দেখান, তবে নিজের উপর অন্ধ বিশ্বাসে আবদ্ধ নন। এজন্য শাস্ত্রে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, একজন জ্যোতিষীর কখনই নিজের ভবিষ্যতের দিকে তাকানো উচিত নয়। এটি কেবল তাঁর ব্যক্তিগত স্বার্থের বিষয়ই নয়, বরং সেই মহৎ জ্ঞানের সম্মানের বিষয়, যা তাকে অন্যদের জীবন আলোকিত করার সুযোগ প্রদান করে। ভোপাল-ভিত্তিক জ্যোতিষী ও বাস্তু পরামর্শদাতা পণ্ডিত হিতেন্দ্র কুমার শর্মা এই বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তৃত তথ্য প্রদান করেন।

জ্যোতিষশাস্ত্রকে ভারতের প্রাচীনতম এবং রহস্যময় জ্ঞানের অন্যতম রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি কেবল গ্রহ-গণনার প্রক্রিয়া নয়, বরং জীবনের প্রতিটি মোড়কে নির্দেশ করে এমন একটি দিশারি। তবে এই বিজ্ঞানে একটি বিশেষ নিয়ম রয়েছে – জ্যোতিষীর নিজের ভবিষ্যতের এক ঝলক দেখা উচিত নয়। এই নিয়মটি কেবল আস্থার বিষয়ই নয়, বরং জীবনের ভারসাম্য রক্ষা ও গভীর বোধগম্যতার প্রতিফলন।

পণ্ডিত হিতেন্দ্র কুমার শর্মার মত অনুযায়ী, এই নিয়মটি মানসিক ও আধ্যাত্মিক ভারসাম্যের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। তিনি বিষয়টি নিম্নরূপ ব্যাখ্যা করেন:

১. যখন আবেগ যুক্তির উপর প্রভাব ফেলে
যখন একজন ব্যক্তি নিজের ভবিষ্যৎ দেখতে বসেন, তখন তার মনে ইতিমধ্যেই নানা আবেগ, ভয়, আশা, লোভ বা অপরিপূর্ণ ইচ্ছা জাগে। এইসব অনুভূতি একজন জ্যোতিষীর নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিকে ঢাপিয়ে দেয়। যদি ভবিষ্যতের চিত্র নেতিবাচক হয়, তাহলে ভয় সৃষ্টি হতে পারে। আবার অতি সুখকর হলে অহংকারের সুযোগ জন্ম নিতে পারে। উভয় ক্ষেত্রেই ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়।

২. কর্মপথে বাধা
হিন্দু দর্শনে, কর্মকে সর্বোচ্চ শক্তি হিসেবে ধরা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, প্রতিটি ব্যক্তি তার কর্ম অনুসারে ফলভোগ করে। যদি একজন জ্যোতিষী পূর্বেই জানেন যে ভবিষ্যতে তাঁর কী হবে, তবে তিনি তাঁর কর্মপথে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে পারেন। এভাবে তাঁর ভাগ্যকে প্রাকৃতিক প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

৩. মানসিক অস্থিরতার কারণ
ভবিষ্যতের সম্পর্কে পূর্ব ধারণা থাকলে একজন ব্যক্তি উদ্বেগময় অবস্থায় প্রবেশ করে। কঠিন সময়ের আশঙ্কা থাকলে ভয় ছড়িয়ে পড়ে, আবার সেরা খবর থাকলে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে মন শান্ত থাকতে পারে না, যা একজন জ্যোতিষীর জন্য অপরিহার্য মানসিক ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করে।

৪. বিশ্বাসের ক্ষতি
জ্যোতিষশাস্ত্র শুধুমাত্র গণিতের হিসাব নয়, বরং এটি ঐশ্বরিক করুণার প্রকাশ। এটি এমন একটি সাধনা, যার সঙ্গে নম্রতা ও নিষ্ঠার সঙ্গতিপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। যখন একজন জ্যোতিষী নিজের রাশিফল পড়ার চেষ্টা করেন, তখন তাঁর বিশ্বাস ও আস্থার ক্ষতি হতে পারে – সেই শক্তি, যা এই জ্ঞানের মর্মবহ ভরসা ও প্রভাব নিশ্চিত করে।

No comments:

Post a Comment