প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ২৪ জুলাই ২০২৫, ২০:৪৫:০২ : একদিকে চীন ভারতের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা বলছে, অন্যদিকে তারা দ্রুত যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে চীন আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ভারতের বিরুদ্ধে একটি বড় যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে। তারা লাদাখের প্যাংগং হ্রদের পূর্ব তীরে একটি বিশাল সামরিক অবকাঠামো তৈরি করছে এবং উত্তর-পূর্বে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদীর (যাকে চীন ইয়ারলুং ঝাংবো বলে) উপর বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন করেছে। অর্থাৎ, চীন বর্তমানে দুটি ফ্রন্টে ভারতকে ঘিরে ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, একটি সামরিক চাপ এবং অন্যটি কৌশলগত জল নিয়ন্ত্রণ।
ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স (OSNIT) অনুসারে, স্যাটেলাইট চিত্র থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে প্যাংগং হ্রদের পূর্ব তীরে চীন একটি বৃহৎ সামরিক কমপ্লেক্স তৈরি করছে, যা প্রায় সম্পূর্ণ। চীন এই কমপ্লেক্সে গভীর গ্যারেজ তৈরি করেছে, যেখানে সাঁজোয়া যান এবং ক্ষেপণাস্ত্র ট্রাক লুকানো যেতে পারে। এ ছাড়া, একটি হাইওয়ে-সদৃশ কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, যা লঞ্চিং প্ল্যাটফর্ম বা রাডার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
OSNIT আরও জানিয়েছে যে এই সামরিক কাঠামোটি একটি রাডার সাইটের কাছে অবস্থিত এবং এটি SAM অর্থাৎ সারফেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেম বা অন্যান্য অস্ত্রের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে যদি চীন এখান থেকে বিমান আক্রমণ এবং নজরদারির ক্ষমতা বিকাশ করে, তাহলে এটি ভারতের বিমান বাহিনীর কৌশলগত স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুসারে, চীন এই অঞ্চলটিকে এমনভাবে প্রস্তুত করছে যাতে ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য কৌশলগত অস্ত্র নিরাপদে সেখানে রাখা যায়। চীন যদি এখান থেকে ভারতের আকাশসীমার উপর নজর রাখতে পারে এবং ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারে, তাহলে এটি ভারতের সামরিক শক্তির জন্য একটি বড় হুমকি হবে। এই কাঠামোটি ভারতের বিরুদ্ধে একটি কৌশলগত কৌশলের অংশ বলে মনে হচ্ছে।
ভারতের জন্য উদ্বেগের দ্বিতীয় কারণ হল ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর চীনের নতুন জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ১৯ জুলাই, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং মেদোগ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, যা বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ হতে চলেছে। এই বাঁধটি চীনের ইতিমধ্যে নির্মিত থ্রি জর্জেস বাঁধের চেয়ে তিনগুণ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ১৬৭ বিলিয়ন ডলার এবং এটি আগামী দশ বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
চীন এটিকে জ্বালানি ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বলে অভিহিত করছে, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে এটি সম্পূর্ণরূপে ভারতের বিরুদ্ধে একটি কৌশল। এই বাঁধটি ভারতের অরুণাচল প্রদেশ সংলগ্ন এলাকায় নির্মিত হচ্ছে এবং সেখান থেকে একটি সুড়ঙ্গের মতো রাস্তা ভারতীয় সীমান্তের খুব কাছে চলে গেছে, যা ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের জন্য সরাসরি হুমকি তৈরি করেছে।
ভারতের জন্য আরেকটি বড় উদ্বেগের বিষয় হল চীন এখনও ব্রহ্মপুত্র নদীর জল বণ্টন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। এর অর্থ হল ভারত এই নদীর জল প্রবাহ সম্পর্কে তথ্য পায় না, যা আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে এই বাঁধটি যুদ্ধের সময় জলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার চীনের কৌশলের অংশ হতে পারে। একজন চীনা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী লিখেছেন, "এটি শান্তিতে একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প, কিন্তু যুদ্ধে? ... আমি কিছু বলব না, বুঝতে পারছি না।" এই বিবৃতি চীনের উদ্দেশ্যের একটি গুরুতর ইঙ্গিত।
এটা স্পষ্ট যে চীন দুই স্তরে ভারতকে ঘিরে ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। একদিকে, প্যাংগং হ্রদে সামরিক ঘাঁটি তৈরি করে ভারতের নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে, অন্যদিকে, ব্রহ্মপুত্রের উপর বাঁধ তৈরি করে জলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই দুটি কৌশলই ভারতের ভূ-রাজনৈতিক এবং কৌশলগত অবস্থানের জন্য মারাত্মক হুমকি। ভারতকে এখন সতর্ক থাকতে হবে এবং কৌশলগত, কূটনৈতিক এবং সামরিক স্তরে এই হুমকির জবাব দিতে হবে।
No comments:
Post a Comment