বিনোদন ডেস্ক, ০৩ জুলাই ২০২৫: আপনি যদি ফেসবুক ব্যবহার করেন, তাহলে এখনই সাবধান হওয়া উচিৎ। কারণ একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে—মেটা এআই আপনার অজান্তেই আপনার ফোনের গ্যালারিতে উঁকি দিতে পারে। হ্যাঁ, মেটা এআই সেইসব ছবিও স্ক্যান করতে পারে যা আপনি এখনও ফেসবুকে আপলোড করেননি। এতে আপনার ছবির অবস্থান, মুখ শনাক্তকরণ, তারিখ এমনকি জিনিসপত্রের বিবরণও বের করা যেতে পারে। ভাবুন, আপনি কি এমন একটি ডিজিটাল অ্যাক্সেসের জন্য প্রস্তুত যা আপনার গোপনীয়তার ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিতে পারে?
আজকের যুগে, ফেসবুক সকলের জীবনের একটি অংশ হয়ে উঠেছে। এটি কেবল বিনোদনের উৎসই নয়, উপার্জনেরও একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে। কিন্তু যখন জানা যায় যে, ফেসবুক আপনার গ্যালারিতে উঁকি দিচ্ছে, তখন চিন্তা করা স্বাভাবিক। এর আগেও মেটার বিরুদ্ধে এআই প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহারকারীদের ডেটা ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এখন নতুন যে ঘটনাটি প্রকাশ পেয়েছে তা সবাইকে ভাবতে বাধ্য করেছে।
পুরো বিষয়টি কী?
সম্প্রতি, ফেসবুক কিছু ইউজারকে একটি পপ-আপ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে, যাতে তাদের একটি নতুন বৈশিষ্ট্য - "ক্লাউড প্রসেসিং" চালু করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যটি প্রথম নজরে বেশ কার্যকর এবং স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে। ফেসবুক দাবী করেছে যে, এই বৈশিষ্ট্যটি ইউজাররা ক্যামেরা রোল থেকে ছবি স্ক্যান করবে এবং মেটার ক্লাউডে আপলোড করবে। বিনিময়ে, ব্যবহারকারী এআই-জেনারেটেড বৈশিষ্ট্য যেমন ছবির কোলাজ, জন্মদিন বা স্নাতকের মতো অনুষ্ঠানের জন্য থিম এবং স্মার্ট ফিল্টার পাবেন।
এই বৈশিষ্ট্যটি কতটা বিপজ্জনক হতে পারে?
এই বৈশিষ্ট্যটি চালু করার মাধ্যমে, আপনি মেটাকে আপনার গ্যালারিতে সম্পূর্ণ অ্যাক্সেসের অনুমতি দিচ্ছেন। এর অর্থ হল, ফেসবুকে আপনি যে ছবিগুলি কখনও শেয়ার করেননি সেগুলিও এখন মেটার স্ক্যানারের অধীনে থাকবে। এআই কেবল মুখ সম্পর্কেই নয়, ছবির তারিখ, অবস্থান এবং বস্তু সম্পর্কেও তথ্য বের করতে সক্ষম হবে। কোম্পানিটি তাদের এআইকে আরও স্মার্ট করার জন্য এই ডেটা ব্যবহার করতে চায়—কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় আপনার গোপনীয়তা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
মেটা কি আগেও এটি করছে?
মেটা স্পষ্টভাবে বলেছে যে, "ক্লাউড প্রসেসিং" একটি অপ্ট-ইন বৈশিষ্ট্য—অর্থাৎ, এটি শুধুমাত্র আপনার সম্মতিতেই সক্ষম করা হবে। কিন্তু যদি আমরা ফেসবুকের ট্র্যাক রেকর্ড দেখি, তাহলে ২০০৭ সাল থেকে, কোম্পানি স্বীকার করেছে যে, তারা এআই মডেলদের প্রশিক্ষণের জন্য ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে আপলোড করা পাবলিক ডেটা ব্যবহার করেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এটি স্পষ্ট করা হয়নি যে "পাবলিক" এর সংজ্ঞা কী, কোন ব্যবহারকারীর ডেটা ব্যবহার করা হয়েছিল, কীভাবে এবং কখন।
শুধু তাই নয়, মেটার নতুন শর্তাবলী, যা ২৩ জুন, ২০২৪ থেকে কার্যকর, তাতে ক্লাউডে অপ্রকাশিত ছবিগুলি এআই প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনা তাও উল্লেখ করা হয়নি। এই পরিস্থিতি ব্যবহারকারীদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলছে।
কীভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন?
আপনি যদি না চান যে, আপনার ব্যক্তিগত ছবি মেটার ক্লাউডে পৌঁছাক, তাহলে আপনি ফেসবুকের সেটিংসে গিয়ে "ক্লাউড প্রসেসিং" বৈশিষ্ট্যটি অবিলম্বে বন্ধ করতে পারেন। মেটা বলে যে যদি কোনও ব্যবহারকারী এই বৈশিষ্ট্যটি বন্ধ রাখেন, তাহলে তার অপ্রকাশিত ছবিগুলি ৩০ দিনের মধ্যে ক্লাউড থেকে সরিয়ে ফেলা হবে।
এছাড়াও, সতর্কতাই সবচেয়ে বড় সুরক্ষা। প্রযুক্তির এই দ্রুতগতির বিশ্বে, কোম্পানিগুলি "সুবিধার" নামে ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় আপনার গোপনীয়তা সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়। সচেতন হয়ে নিজের ডিজিটাল সীমা নির্ধারণ করা ভালো হবে—কারণ প্রযুক্তিতে বিশ্বাস করা ভালো, কিন্তু চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস বিপজ্জনক হতে পারে।
No comments:
Post a Comment