প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ২৪ জুলাই ২০২৫, ১৬:১৯:০১ : ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে ঐতিহাসিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) অবশেষে স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর অর্থ হল এখন দুই দেশের মধ্যে পণ্যের লেনদেন এবং বাণিজ্য আগের তুলনায় সহজ এবং সস্তা হয়ে উঠবে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পর প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন যে আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। এই চুক্তি কেবল পণ্য সস্তাই করবে না, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।
এই চুক্তির পর, যুক্তরাজ্য থেকে ভারতীয় বাজারে আসা পণ্য সস্তা হবে, অন্যদিকে ভারত থেকে রপ্তানিতে বড় ধরনের অগ্রগতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দুই দেশের ব্যবসায়ী এবং বিশেষজ্ঞরা এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে FTA বাস্তবায়নের পর, ব্রিটেনে ভারতীয় রপ্তানির ৯৯ শতাংশ শুল্কমুক্ত থাকবে না। এর আগে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কায়ার স্টারমার বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তার সরকারি বাসভবন 'চেকার্স'-এ আতিথ্য করেছিলেন। আলোচনার আগে দুই নেতা একান্তে আলাপচারিতা করেন।
যুক্তরাজ্যের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পর, প্রধানমন্ত্রী মোদী সাংবাদিকদের বলেন যে, "পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানানোর জন্য এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য আমরা যুক্তরাজ্য সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারকে ধন্যবাদ জানাই।"
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন যে, "ভারত ও যুক্তরাজ্য ইউক্রেন সংঘাত, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে মত বিনিময় করে আসছে। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর সমাধান চাই। আজকের যুগের দাবী হলো সম্প্রসারণবাদ নয়, বরং উন্নয়নবাদ।"
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন যে, এই চুক্তি কেবল দুই দেশের সম্পর্ককেই শক্তিশালী করবে না, বরং কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি করবে। যুক্তরাজ্য থেকে আসা পণ্য সস্তা হবে, রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। এই চুক্তি দুটি গণতান্ত্রিক দেশে বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধিও জোরদার করবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী আরও বলেন যে, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ছাড়াও, যুক্তরাজ্যের ৬টি বিশ্ববিদ্যালয় ভারতে ক্যাম্পাস খুলছে। গত সপ্তাহেই গুরুগ্রামে একটি ক্যাম্পাস উদ্বোধন করা হয়েছে।
এই চুক্তিটি ভারতের জন্য অনেক দিক থেকেই একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। এই চুক্তির আওতায় ভারতীয় রপ্তানিকারকরা ৯৯% পণ্যের উপর ব্রিটেনে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবেন। এর ফলে প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরকারের মতে, এর ফলে ভারতের শ্রম-নিবিড় খাত যেমন টেক্সটাইল, চামড়া, জুতা, গয়না, খেলনা এবং সামুদ্রিক পণ্যে কর্মরত কারিগর, তাঁতি এবং দিনমজুররা সরাসরি উপকৃত হবেন। এমএসএমই খাতের লক্ষ লক্ষ ইউনিটও এর মাধ্যমে উপকৃত হবেন।
এই চুক্তির মাধ্যমে, ৯৫% কৃষি পণ্য এখন কোনও শুল্ক ছাড়াই ব্রিটেনে রপ্তানি করা যাবে। একই সাথে, ৯৯% সামুদ্রিক পণ্যের উপর শূন্য শুল্ক পেয়ে জেলেরা তাদের আয় বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এফটিএ-এর মাধ্যমে, মহিলারা বিশ্বব্যাপী মূল্য শৃঙ্খলের সাথে আরও ভালভাবে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হবেন এবং অর্থায়নের সহজ অ্যাক্সেস পাবেন। ভারতের স্টার্টআপগুলি ব্রিটেনের উদ্ভাবনী কেন্দ্র, বিনিয়োগকারী এবং ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর একটি বড় সুযোগ পাবে।
যুক্তরাজ্যের উচ্চমূল্যের বাজার এখন ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি পেশাদার, শিক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং পরিষেবা খাতের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য আরও সহজলভ্য হবে।
এর পাশাপাশি, ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে 'দ্বৈত অবদান কনভেনশন'-এর আওতায়, ভারতীয় কর্মচারীরা যুক্তরাজ্যে সামাজিক নিরাপত্তা অবদান থেকে ৩ বছরের জন্য অব্যাহতি পাবেন। এটি কোম্পানি এবং কর্মচারী উভয়কেই উপকৃত করবে।
প্রকৌশল, ইলেকট্রনিক্স, ফার্মা, রাসায়নিক, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং প্লাস্টিকের মতো ক্ষেত্রগুলিতেও একটি বড় পরিবর্তন দেখা যাবে। ভারতের গ্রাহকরা এখন আরও সস্তা দামে উচ্চমানের বিদেশী পণ্য পাবেন।
সরকার এই চুক্তিকে 'মেক ইন ইন্ডিয়া' এবং 'ভোকাল ফর লোকাল' প্রচার হিসাবে বর্ণনা করেছে। এই চুক্তি ভারতের বিশ্ব বাণিজ্য নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
No comments:
Post a Comment