মতুয়া-রাজবংশী সম্প্রদায় নিয়ে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি! মমতার অভিযোগের পাল্টা জবাব বিজেপির - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Saturday, July 19, 2025

মতুয়া-রাজবংশী সম্প্রদায় নিয়ে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি! মমতার অভিযোগের পাল্টা জবাব বিজেপির



কলকাতা, ১৯ জুলাই ২০২৫, ১৮:৫০:০১ : পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন করে সংঘাত শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে মতুয়া এবং রাজবংশী সম্প্রদায়কে বাংলাদেশি বলে টার্গেট করা হচ্ছে। এর জবাবে বিজেপিও পাল্টা আক্রমণ শানিয়ে বলেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করে ভোটব্যাঙ্ক টানার চেষ্টা করছেন। প্রশ্ন উঠছে, এই দুই সম্প্রদায় কি আবারও বাংলার নির্বাচনী রাজনীতির কেন্দ্রে চলে আসতে চলেছে?

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি বড় রাজনৈতিক ইস্যু উত্থাপন করে দাবী করেন, রাজ্যের দুটি প্রধান দলিত সম্প্রদায়—মতুয়া এবং রাজবংশীর মানুষদের দেশের অন্যান্য রাজ্যে টার্গেট করা হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, এই সম্প্রদায়ের মানুষদের হয়রানি, গ্রেপ্তার এবং নির্যাতনের শিকার করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক মহলের মতে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতার এই বক্তব্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। অন্যদিকে, বিজেপি পাল্টা আক্রমণে প্রধানমন্ত্রী আবারও তৃণমূল কংগ্রেসকে অনুপ্রবেশকারীদের মদতদাতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

মতুয়া এবং রাজবংশী সম্প্রদায়কে সামাজিক, রাজনৈতিক ও নির্বাচনী দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। মতুয়া সম্প্রদায়, যাদের নমশূদ্র বলেও ডাকা হয়, মূলত পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে আগত হিন্দু শরণার্থী দলিতদের মধ্যে সবচেয়ে বড় গোষ্ঠী। অনুমান করা হয়, এই রাজ্যে মতুয়া ভোটারের সংখ্যা ১.৭৫ থেকে ২ কোটির মধ্যে, যা রাজ্যের মোট তফসিলি জাতি (এসসি) জনসংখ্যার প্রায় ১৭–১৮%। এই সম্প্রদায়ের ১১টি লোকসভা আসনে সরাসরি প্রভাব রয়েছে—বিশেষ করে উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদীয়া, কোচবিহার, মালদা, হাওড়া ও হুগলির বিভিন্ন অঞ্চলে।

অন্যদিকে, রাজবংশী সম্প্রদায়ের আনুমানিক জনসংখ্যা প্রায় ৫০ লক্ষ। তাদের প্রধান প্রভাব উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দিনাজপুর, দার্জিলিং ও মালদা জেলায়। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে, এই দুই সম্প্রদায় ব্যাপকভাবে বিজেপিকে সমর্থন করেছিল। শান্তনু ঠাকুর, যিনি মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বনগাঁর মতুয়া-প্রভাবিত আসন থেকে জয়ী হন।

রাজবংশী অধ্যুষিত অনেক এলাকায়ও বিজেপি ভালো ফল করেছিল। তবে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মতুয়া ও রাজবংশী সম্প্রদায়কে আকৃষ্ট করতে নানা প্রকল্প চালু করে। মতুয়াদের জন্য জমির অধিকার, ভাষা বোর্ড, ছুটি ও বৃত্তি ঘোষণা করা হয়; রাজবংশীদের জন্য আদালত স্থাপন, সংস্কৃতিগত উন্নয়ন ও বিভিন্ন প্রকল্প শুরু হয়।

এর ফলে, দুই সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকে পড়ে। বিজেপি যদিও আগেও মতুয়া কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে অংশ নিয়েছে, কিন্তু নির্বাচনের গতিপথ বদলেছে এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে।

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দুই সম্প্রদায়ের ভোট তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। বিজেপি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) কার্যকর করেছিল, যা মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার আশা তৈরি করে। এর ফলে বিজেপির সমর্থন কিছুটা ফিরে আসে, তবে তৃণমূলও তাদের একাংশের সমর্থন আদায়ে সফল হয়।

এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার অভিযোগ তুলেছেন যে বিজেপি বাঙালি এবং শরণার্থীদের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তাঁর দাবী, দেশের অন্য রাজ্যে বাংলার মানুষদের টার্গেট করা হচ্ছে, যার ফলে রাজ্যের পরিচয় ও অধিকার হুমকির মুখে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মমতার এই বক্তব্য মূলত ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে মতুয়া ও রাজবংশী ভোটব্যাঙ্ককে তৃণমূলের দিকে টানার কৌশল। জনসংখ্যাগত দিক থেকে এই দুটি সম্প্রদায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এদের ভোটেই বহু আসনে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়।

মমতার বার্তা স্পষ্ট, তৃণমূল এই সম্প্রদায়গুলির প্রকৃত মিত্র, যেখানে বিজেপি শুধুমাত্র তাদের ভোটের জন্য ব্যবহার করতে চায়। আগামী দিনে এই ইস্যু আরও প্রবলভাবে উঠে আসবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল, কারণ ধীরে ধীরে বাংলার রাজনৈতিক তাপমাত্রা আবার বাড়তে শুরু করেছে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad