প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ০৫ জুলাই ২০২৫, ১৪:০০:০১ : পৃথিবীতে এমন অনেক বিস্ময়কর স্থান রয়েছে, যেগুলি আজও মানুষের কাছে রহস্য হয়ে রয়েছে। তেমনি একটি জায়গা হল লা ব্রেয়া পিচ হ্রদ—যা যেন এক প্রাকৃতিক বিস্ময়। এই হ্রদটি কোনও সাধারণ জলাশয় নয়, বরং এটি ডামার বা অ্যাসফল্টে পরিপূর্ণ একটি বিশাল হ্রদ।
ত্রিনিদাদ দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত এই হ্রদকে স্থানীয়রা বলেন "বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য"। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক অ্যাসফল্ট বা ডামারের খনি, যার আয়তন প্রায় ১০৯ একর। এতে মজুত রয়েছে প্রায় দশ মিলিয়ন টন প্রাকৃতিক ডামার। বিশ্বে এমন মাত্র তিনটি প্রাকৃতিক পিচ হ্রদ রয়েছে, তার মধ্যে লা ব্রেয়া সবচেয়ে বড়।
এই হ্রদ থেকে আহরিত অ্যাসফল্ট ব্যবহার হয়েছে বিশ্বের বহু বিখ্যাত স্থানে, যেমন—
বাকিংহাম প্যালেসের সামনে (ইংল্যান্ড)
লা গার্ডিয়া বিমানবন্দর (নিউ ইয়র্ক)
লিঙ্কন টানেল (নিউ ইয়র্ক ও নিউ জার্সির সংযোগপথ)
দূর থেকে দেখলে এটি একটি বিশাল কালো পার্কিং লটের মতো মনে হলেও, কাছ থেকে দেখলে পৃষ্ঠটি রুক্ষ, ঢেউ খেলানো এবং কখনও কখনও ধোঁয়া ওঠে। বর্ষাকালে এর উপর তৈরি হয় ছোট ছোট জলাশয়। এই জলাশয়ে থাকা সালফারযুক্ত জল স্থানীয়দের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। তারা বিশ্বাস করেন, এটি ত্বকের রোগ ও জয়েন্টের ব্যথা নিরাময়ে কার্যকর।
সম্প্রতি ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার একটি গবেষণায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য—এই হ্রদের গভীরে জীবিত অণুজীব (Microbes) আছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই জীবাণু পৃথিবীর বাইরেও প্রাণের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিতে পারে।
ইতিহাস ও লোককথা
১৫৯৫ সালে ব্রিটিশ অভিযাত্রী স্যার ওয়াল্টার র্যালি এই হ্রদ আবিষ্কার করেন।
১৭৯২ সালে স্পেনীয়রা বাণিজ্যিকভাবে এখান থেকে ডামার আহরণ শুরু করে এবং নাম দেয় “টিয়েরা দে ব্রিয়া” অর্থাৎ পিচের পৃথিবী, যা পরে “লা ব্রেয়া” নাম পায়।
স্থানীয় আদিবাসীরা বিশ্বাস করত, এটি দেবতাদের অভিশাপের ফল। একটি কিংবদন্তি অনুযায়ী, এক উপজাতি হামিংবার্ড খাওয়ায় দেবতার ক্রোধে সমগ্র উপজাতিকে এই হ্রদ গ্রাস করে।
এখানে খননকালে পাওয়া গেছে বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, যেমন প্রাণীর আকারে খোদাই করা কাঠের বস্তু ও প্রাচীন নকশা, যেগুলি সংরক্ষিত আছে হ্রদের পাশে স্থাপিত জাদুঘরে।
No comments:
Post a Comment