লাইফস্টাইল ডেস্ক, ০৫ জুলাই ২০২৫: আমাদের হৃদপিণ্ড শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এর কাজ হল রক্ত পাম্প করা যাতে অক্সিজেন এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সারা শরীরে পৌঁছাতে পারে। হৃদপিণ্ড সঠিকভাবে কাজ করলে শরীরও সুস্থ থাকে। কিন্তু আজকের দ্রুতগতির জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস খারাপ, মানসিক চাপ, স্থূলতা এবং বয়স বৃদ্ধির কারণে হৃদরোগের ঘটনা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে এই রোগগুলি বয়স্কদের মধ্যে দেখা দিত, কিন্তু এখন তরুণদেরও সমস্যায় ফেলছে। হৃদপিণ্ড দুর্বল হতে শুরু করলে শরীর বিভিন্ন ধরণের সংকেত দেয়। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এগুলিকে ছোট মনে করে উপেক্ষা করেন। অথচ, এই সংকেতগুলি যদি সময়মতো শনাক্ত করা যায় এবং চিকিৎসা শুরু করা যায়, তাহলে বড় সমস্যা এড়ানো সম্ভব।
দুর্বল হৃদপিণ্ডের লক্ষণ
কাজ না করেঈ ক্লান্তি এবং শ্বাসকষ্ট: আপনি যদি খুব বেশি কাজ না করেই দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়েন বা একটু ওঠানামা করার পরে বা হাঁটার পরে শ্বাসকষ্ট অনুভব করতে শুরু করেন, তাহলে এটি হৃদপিণ্ডের দুর্বলতার লক্ষণ হতে পারে। এটি ঘটে কারণ রক্ত এবং অক্সিজেন শরীরের সমস্ত অংশে সঠিক পরিমাণে পৌঁছাতে সক্ষম হয় না।
পা, গোড়ালি এবং পেটে ফোলাভাব: হৃদপিণ্ড দুর্বল হয়ে গেলে শরীরে তরল জমা হতে শুরু করে। এর প্রভাব পা, গোড়ালি, পায়ের আঙ্গুল এবং পেটে ফোলাভাব আকারে দেখা যায়। যদিও এই লক্ষণগুলি কিডনি বা লিভারের রোগেও দেখা যায়, তবে হৃদরোগ সম্পর্কিত সমস্যাগুলির ক্ষেত্রেও এগুলি সাধারণ।
বুকে ব্যথা, ভারী হওয়া বা টানটান ভাব: বুকে যদি ঘন ঘন ব্যথা, চাপ বা ভারী হওয়া থাকে, তাহলে এটি হার্ট অ্যাটাক বা হার্টের দুর্বলতার লক্ষণ হতে পারে। এই ব্যথা বাম হাত, চোয়াল, পিঠ বা ঘাড়েও ছড়িয়ে পড়তে পারে। যদি এটি ঘটতে থাকে, তাহলে এটিকে উপেক্ষা করবেন না এবং অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করুন।
দ্রুত বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন: যদি আপনার হৃদস্পন্দন কখনও খুব দ্রুত হয়, কখনও খুব ধীর বা অনিয়মিত হয়, তাহলে এটিও হার্টের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
দুর্বল হৃদস্পন্দনের কারণ-
হৃদস্পন্দনের দুর্বলতার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে-
উচ্চ রক্তচাপ (উচ্চ রক্তচাপ)
বর্ধিত কোলেস্টেরল
স্থূলতা এবং শারীরিক কার্যকলাপের অভাব
ধূমপান এবং অ্যালকোহল
নিরন্তর মানসিক চাপ এবং ঘুমের অভাব
পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস (বংশগত)।
কখন আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিত?
উপরে উল্লেখিত কোন লক্ষণ লক্ষ্য করলে দেরি না করে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া, পরীক্ষা করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করা ঠিক নয়। যদি আপনার পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস থাকে, তাহলে আপনার আরও সতর্ক হওয়া উচিৎ।
কীভাবে হৃদপিণ্ডকে মজবুত রাখবেন?
সঠিক খাদ্য গ্রহণ করুন: আপনার খাদ্যতালিকায় সবুজ শাকসবজি, তাজা ফল, গোটা শস্য, কম চর্বিযুক্ত দুধ এবং মাছ অন্তর্ভুক্ত করুন। সীমিত পরিমাণে বাদাম এবং আখরোটের মতো শুকনো ফল খাওয়া উপকারী। জাঙ্ক ফুড, ভাজা খাবার এবং অতিরিক্ত মিষ্টি এড়িয়ে চলুন।
প্রতিদিন হাঁটুন এবং ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটুন অথবা হালকা ব্যায়াম করুন। যোগব্যায়াম এবং প্রাণায়ামও হৃদরোগের জন্য উপকারী।
ধূমপান এবং অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন: সিগারেট এবং অ্যালকোহল হৃদরোগের জন্য বিষের মতো। যত তাড়াতাড়ি আপনি এগুলি ত্যাগ করবেন, ততই ভালো।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন: মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান করুন, আপনার প্রিয় সঙ্গীত শুনুন, বই পড়ুন বা আপনার শখ পূরণ করুন।
নিয়মিত চেকআপ করুন: সময়ে সময়ে আপনার রক্তচাপ, চিনি এবং কোলেস্টেরল পরীক্ষা করাতে থাকুন। যদি কোনও সমস্যা হয়, তাহলে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
হৃদরোগ বিপজ্জনক, তবে যদি সময়মতো লক্ষণগুলি সনাক্ত করা যায় এবং চিকিৎসা শুরু করা যায়, তাহলে সেগুলি প্রতিরোধ করা যেতে পারে। হৃদরোগের স্বাস্থ্য আমাদের নিজের হাতে। একটু সতর্কতা, সঠিক জীবনধারা এবং সচেতনতার মাধ্যমে আমরা এটিকে আরও মজবুত করতে পারি।
No comments:
Post a Comment