প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ২৬ জুলাই ২০২৫, ১০:০০:০২ : আপনি কি কখনও এমন কাউকে দেখেছ যিনি বারবার হাত ধুয়ে ফেলেন? কিংবা এমন কাউকে যিনি সবকিছু নিখুঁতভাবে সারিবদ্ধ করে রাখেন? কারও কাছে বিছানার চাদরের একটু ভাঁজ বা ঘরের জিনিসপত্রের সামান্য অগোছালো অবস্থা অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। অনেকেই মনে করেন, এটি শুধু একটি অভ্যাস। কিন্তু বাস্তবে এটি হতে পারে একটি গুরুতর মানসিক সমস্যা, যার নাম OCD অর্থাৎ অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার।
ভারতে এই সমস্যাটি ক্রমেই বাড়ছে। আসুন, বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জেনে নিই OCD কী, এর লক্ষণ কী কী এবং কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
OCD কী?
OCD (Obsessive Compulsive Disorder) হলো একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যেখানে ব্যক্তি কিছু চিন্তা বা কাজ বারবার করতে থাকেন, যদিও তিনি জানেন যে তা অপ্রয়োজনীয় বা অতিরঞ্জিত। যেমন:
বারবার হাত ধোয়া
দরজা লক ঠিকমতো হয়েছে কিনা বারবার পরীক্ষা করা
জিনিসপত্র নিখুঁতভাবে সাজিয়ে রাখা
বারবার মনে হওয়া যে কিছু ভুল হতে চলেছে
এই চিন্তাগুলো (অবসেশন) এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা (কম্পালশন) একজন ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করে দেয়।
OCD-এর লক্ষণ
ড. প্রশান্ত, দিল্লির শ্রী বালাজি অ্যাকশন মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটের মনোবিদ্যার সিনিয়র কনসালট্যান্ট, জানান, এই রোগটি যেকোনও বয়সে শুরু হতে পারে। সাধারণত নিচের লক্ষণগুলো OCD-এর ইঙ্গিত দেয়:
বারবার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে চিন্তা করা
নিজেকে বা অন্যদের ক্ষতি হতে পারে—এমন ভয়
দরজা, তালা, গ্যাস বারবার পরীক্ষা করা
জিনিসপত্র নিখুঁতভাবে সাজানো না থাকলে অস্থিরতা
বারবার গোনাগুনি বা নির্দিষ্ট কিছু শব্দ বা কাজের পুনরাবৃত্তি
ব্যক্তি জানেন যে তাঁর চিন্তাগুলো অতিরঞ্জিত, তবুও তিনি তা বন্ধ করতে পারেন না। এতে মানসিক চাপ ও ক্লান্তি বাড়ে।
OCD কি নিয়ন্ত্রণ করা যায়?
ড. প্রশান্ত বলেন, OCD চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এর জন্য রয়েছে:
কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি (CBT) – যা রোগীকে শেখায় কীভাবে নেতিবাচক চিন্তাকে মোকাবিলা করতে হয়।
ঔষধ – কিছু ক্ষেত্রে মনোবিদরা ওষুধ দিয়ে থাকেন, যা মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
পরিবার ও বন্ধুদের সমর্থনও গুরুত্বপূর্ণ
শুধু চিকিৎসা যথেষ্ট নয়, পরিবার ও কাছের মানুষদের সমর্থন OCD-তে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তোলে।
যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা ধ্যান OCD নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
সময়মতো চিকিৎসা না হলে OCD ঘুম, মনঃসংযোগ এবং স্মৃতিশক্তির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।
শেষ কথা:
OCD একটি চিকিৎসাযোগ্য সমস্যা। এটি লজ্জার কিছু নয়। বরং সময়মতো সচেতনতা, চিকিৎসা ও মানসিক সহায়তা থাকলে একজন OCD আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণ ও সুস্থ জীবন কাটাতে পারেন।
No comments:
Post a Comment