প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ০৪ জুলাই ২০২৫, ১৪:২৬:০১ : ইরানের সঙ্গে তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়টি কোম্পানি এবং বেশ কয়েকটি জাহাজের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এদের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের একটি করে কোম্পানি রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ অফিস (OFAC) এবং ট্রেজারি বিভাগ এই পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছে। এটি মূলত ইরানের উপর অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করতে নেওয়া একটি কৌশলের অংশ।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে পাকিস্তানের লাহোর-ভিত্তিক অ্যালায়েন্স এনার্জি প্রাইভেট লিমিটেড এবং ভারতের নয়াদিল্লি-ভিত্তিক সাই সবুরি কনসাল্টিং সার্ভিসেস। OFAC-এর মতে, এই দুই কোম্পানি গোপনে ইরানি তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য পরিবহনে যুক্ত একটি নেটওয়ার্কের অংশ ছিল, যা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করেছে।
এই পদক্ষেপগুলি মূলত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের "সর্বোচ্চ চাপ" নীতির ধারাবাহিকতা, যার লক্ষ্য ইরানের তেল রপ্তানি শূন্যে নামিয়ে আনা এবং তাদের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি, পাশাপাশি আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার সীমিত করা। মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেস্যান্ট বলেন, “আমরা ইরানের আয়-উৎসগুলিকে টার্গেট করব এবং তাদের অস্থিতিশীল কার্যকলাপে অর্থায়নের পথ রুদ্ধ করব।”
ইতিমধ্যেই পাকিস্তানি কোম্পানি অ্যালায়েন্স এনার্জি প্রাইভেট লিমিটেড-কে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE), ইরান ও পানামা-ভিত্তিক বেশ কয়েকটি কোম্পানি ও তাদের পরিচালিত জাহাজগুলিও নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে। ভারতের সাই সবুরি কনসাল্টিং সার্ভিসেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বাটেলিউর ও নাইল নামের দুটি এলপিজি ট্যাঙ্কারের বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছিল, যেগুলি ইরানি তেল পরিবহনে যুক্ত ছিল।
মার্কিন অভিযোগ অনুযায়ী, ইরান “ছায়া বহর” বা “অন্ধকার বহর” নামে পরিচিত একটি গোপন জাহাজ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য রপ্তানি করে। এই জাহাজগুলো প্রায়শই সমুদ্রবন্দরের বাইরে জাহাজ থেকে জাহাজে স্থানান্তরের মাধ্যমে পণ্যের উৎস গোপন করে, যা প্রধানত চীনের মতো দেশের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়।
এই প্রথমবার নয়, এর আগেও ভারতীয় কোম্পানির উপর ইরানি তেল বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে চারটি ভারতীয় কোম্পানি, অক্টোবর মাসে গাব্বারো শিপ সার্ভিসেস, এবং ডিসেম্বরে আরও দুটি ভারতীয় শিপিং কোম্পানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকেই ইরানের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে। তবে ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন যখন ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসে, তখন থেকে নিষেধাজ্ঞা আরও কড়া হয়ে ওঠে। ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থন রোধ করাই এই নীতির মূল লক্ষ্য। ইজরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলার পর এই নিষেধাজ্ঞাগুলি আরও কড়াভাবে কার্যকর করা হচ্ছে।
No comments:
Post a Comment