কোথাও গুলি চলছে, কোথাও সাইবার আক্রমণ হচ্ছে! নীরবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Tuesday, July 15, 2025

কোথাও গুলি চলছে, কোথাও সাইবার আক্রমণ হচ্ছে! নীরবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু



প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৫:৩০:০১ : রাশিয়ার সাথে যুক্ত একজন বড় কৌশলবিদ এবং ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ দিমিত্রি ট্রেনিন বলেছেন যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নীরবে শুরু হয়েছে। তাঁর মতে, এই যুদ্ধ কেবল বন্দুক এবং ট্যাঙ্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর মধ্যে সাইবার আক্রমণ, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, ডিজিটাল নজরদারি এবং আদর্শিক মেরুকরণের মতো অনেক মাত্রা রয়েছে।


এই যুদ্ধ বিভিন্ন মহাদেশে, বিভিন্ন আকারে সংঘটিত হচ্ছে। এবং এটি সমগ্র সভ্যতার মধ্যে সংঘর্ষের মতো হয়ে উঠেছে। একদিকে পশ্চিমা জোট এবং অন্যদিকে রাশিয়া-চীন-ইরানের মতো ইউরেশিয়ান শক্তি। তাহলে এই যুদ্ধটি কেমন দেখাচ্ছে? কারা কারা এতে জড়িত? এবং এর ফ্রন্টগুলি কোথায়? আসুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।


এই তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে বড় ফ্রন্ট হল পূর্ব ইউরোপ, যেখানে গত তিন বছর ধরে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে। ইউক্রেন ক্রমাগত আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স এবং অন্যান্য ন্যাটো দেশ থেকে অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং আর্থিক সাহায্য পাচ্ছে। যদিও এই যুদ্ধ প্রচলিত অস্ত্র দিয়ে মাটিতে লড়াই করা হচ্ছে, সাইবার আক্রমণ, তথ্য যুদ্ধ, স্যাটেলাইট গুপ্তচরবৃত্তি এবং ডিজিটাল নজরদারির মতো আধুনিক ফ্রন্টগুলিও উন্মুক্ত হয়েছে। এই সংঘাত এখন কেবল দুটি দেশের মধ্যে নয় বরং বিশ্ব শক্তির মধ্যে মুখোমুখি যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য এই যুদ্ধের দ্বিতীয় সর্বাধিক সক্রিয় এবং অসম ফ্রন্টে পরিণত হয়েছে। গাজায় ইজরায়েল এবং হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের পাশাপাশি, ইরান এবং হিজবুল্লাহর মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলিও এই সংঘাতে যোগ দিয়েছে। আমেরিকা প্রকাশ্যে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে, অন্যদিকে ইরান রাশিয়া এবং চীনের পরোক্ষ সমর্থন পাচ্ছে। এখানে যুদ্ধের রূপটি ঐতিহ্যবাহী নয় বরং অসম যুদ্ধ, যেখানে ড্রোন আক্রমণ, প্রক্সি যোদ্ধা, সাইবার আক্রমণ এবং সীমিত বিমান হামলা প্রধান কৌশল হয়ে উঠেছে।

চীন ও আমেরিকার মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কারণে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল তৃতীয় ফ্রন্ট হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। চীন তাইওয়ানকে তার অংশ হিসেবে বিবেচনা করে এবং ক্রমাগত সামরিক চাপ বৃদ্ধি করছে, অন্যদিকে আমেরিকা তাইওয়ানকে অস্ত্র ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহায়তা করছে। বর্তমানে এই সংঘাত একটি শীতল যুদ্ধের মতো, তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন যে তাইওয়ান প্রণালী বা দক্ষিণ চীন সাগরে যেকোনও উস্কানি এই অঞ্চলকে সরাসরি সামরিক সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

ট্রেনিনের মতে, এই যুদ্ধ এখন আর কেবল আঞ্চলিক বা সীমিত নয়, বরং সমগ্র বিশ্ব দুটি স্পষ্ট দলে বিভক্ত হয়ে পড়ছে। প্রথম দলটি হল পশ্চিমা জোট, যার মধ্যে আমেরিকা, ন্যাটো দেশ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ রয়েছে। দ্বিতীয় দলটিতে রাশিয়া, চীন, ইরান, উত্তর কোরিয়া এবং কিছু স্তরে ব্রিকস দেশগুলির মতো ইউরেশিয়ান শক্তি রয়েছে, যারা হয় প্রকাশ্য সমর্থন দিচ্ছে অথবা কূটনৈতিকভাবে ভারসাম্য বজায় রাখছে।

ট্রেনিনের মতে, জাতিসংঘের মতো বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানগুলি এই লড়াইয়ে অকার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে এবং একটি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার উদ্ভব হচ্ছে। এই যুদ্ধ দীর্ঘ সময় ধরে চলতে চলেছে এবং এর শেষে ক্ষমতার একটি নতুন ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রেনিন আরও সতর্ক করেছেন যে তাইওয়ান, ইরান বা বাল্টিক দেশগুলিতে যদি কোনও বড় ঘটনা ঘটে, তবে এই যুদ্ধ পারমাণবিক সংকটের দিকেও নিয়ে যেতে পারে। রাশিয়া এবং আমেরিকার মতো পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলির মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রকাশ্য হুমকি এই ইঙ্গিত দেয় যে বিশ্ব একটি অত্যন্ত নাজুক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এটি একটি যুদ্ধ এবং তা নয়। এর পরিণতি ১৯১৪ বা ১৯৩৯ সালের বিশ্বযুদ্ধের মতোই ভয়াবহ হতে পারে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad