প্রাচীন আয়ুর্বেদ গ্রন্থে ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরাকে বলা হয় কুমারী, যার অর্থ “যৌবন ধরে রাখা ভেষজ।” ভারতের গ্রামাঞ্চলে যেমন ঘরোয়া চিকিৎসায় এটি বহুল ব্যবহৃত, তেমনি শহরের আধুনিক প্রসাধনী শিল্পেও আজ অ্যালোভেরা অপরিহার্য উপাদান। বিশেষ করে চুলের যত্নে এর ব্যবহার ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
চুলের যত্নে ঘৃতকুমারীর ঐতিহ্য
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বলা হয়, ঘৃতকুমারীর জেল মাথার ত্বক ঠান্ডা রাখে, চুলের গোড়াকে শক্ত করে এবং খুশকি প্রতিরোধ করে। শতাব্দী ধরে মহিলারা তাজা পাতার জেল সরাসরি মাথায় মেখে চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তুলেছেন।
অ্যালোভেরা জেলে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই, বি১২ এবং ফলিক অ্যাসিডসহ প্রায় ৭৫ ধরনের সক্রিয় উপাদান। এর মধ্যে কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মাথার ত্বকের কোষকে সুরক্ষা দেয়। অ্যালোভেরার এনজাইম মৃত ত্বক কোষ সরিয়ে দিয়ে হেয়ার ফলিকলকে পরিষ্কার রাখে, ফলে নতুন চুল গজাতে সুবিধা হয়। আধুনিক গবেষণা বলছে, নিয়মিত অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার মাথার ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং খুশকির সমস্যা কমাতে কার্যকর হতে পারে।
উপকারিতার মূল দিকগুলো
চুল পড়া রোধ: জেলের এনজাইম চুলের গোড়াকে পুষ্টি জোগায়, ফলে ভাঙা ও ঝরে পড়া কমে।
খুশকি প্রতিরোধ: প্রদাহনাশক উপাদান মাথার ত্বকের শুষ্কতা ও খোসা ওঠা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ঘন ও মসৃণ চুল: চুলে নিয়মিত অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আসে।
অকালপক্কতা বিলম্বিত: আয়ুর্বেদ মতে, ঘৃতকুমারী চুলকে পুষ্টি জোগায়, ফলে অকালপক্কতা কম হয়।
ব্যবহার পদ্ধতি
1. তাজা জেল: পাতা কেটে ভেতরের স্বচ্ছ জেল সরাসরি মাথার ত্বকে মেখে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলা।
2. অ্যালোভেরা তেল: নারকেল বা তিলের তেলের সঙ্গে জেল মিশিয়ে হালকা গরম করে সংরক্ষণ করা যায়।
3. হেয়ার মাস্ক: জেল, মেথি গুঁড়ো ও দই মিশিয়ে চুলে লাগালে চুল হয় নরম ও মজবুত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যালোভেরা চুল ও স্ক্যাল্পের জন্য প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। তবে বাজারজাত জেলের চেয়ে তাজা পাতা থেকে নেওয়া জেল অনেক বেশি কার্যকর।
সতর্কতা
যদিও অ্যালোভেরা প্রাকৃতিক, তবু কারও কারও মাথার ত্বকে অ্যালার্জি হতে পারে। তাই ব্যবহার করার আগে সামান্য অংশে টেস্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া গর্ভবতী নারী বা যাঁরা দীর্ঘমেয়াদে ওষুধ সেবন করেন, তাঁদের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া অ্যালোভেরা জেল খাওয়া বা সেবন করা উচিত নয়।
ভারতের ভেষজ শিল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অ্যালোভেরা নির্ভর হেয়ার কেয়ার পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির বড় সুযোগ তৈরি করছে। শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, হেয়ার মাস্ক থেকে শুরু করে সিরাম—সবখানেই অ্যালোভেরা এখন জনপ্রিয় উপাদান। আয়ুর্বেদের ঐতিহ্য ও আধুনিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা একসঙ্গে অ্যালোভেরাকে ভবিষ্যতের অন্যতম প্রধান ভেষজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
No comments:
Post a Comment