জন্মাষ্টমী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মোৎসব, যা দেশজুড়ে ভক্তি আর আনন্দে পালিত হয়। এই দিনে মন্দির, ঘরবাড়ি ও কর্মস্থলে বিশেষ পূজা, ভজন-কীর্তন, উপবাস ও নৈবেদ্য নিবেদন হয়। ভক্তরা ফুল, তুলসীপাতা, ধূপ, প্রদীপ, পোশাক ও প্রসাদ ভগবানের উদ্দেশ্যে অর্পণ করেন। শাস্ত্র মতে, এই নিবেদিত উপকরণগুলোকে বলা হয় নির্মাল্য, যা ভগবানের স্পর্শে পবিত্র হয়ে ওঠে এবং স্বয়ং ঈশ্বরের রূপ বলে বিবেচিত হয়।
কিন্তু শাস্ত্রে স্পষ্টভাবে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে—নির্মাল্যের অসম্মান গুরুতর পাপ, যা আপনার পূজার পুণ্য ধ্বংস করতে পারে। স্কন্দ পুরাণ, মনুস্মৃতি ও গরুড় পুরাণে বলা হয়েছে, মন্দিরের ফুল-মালা, নৈবেদ্য বা পোশাক ডাস্টবিনে, ড্রেনে বা রাস্তায় ফেলে দেওয়া “পুণ্য হত্যা” এবং পূর্বপুরুষের ক্ষতির কারণ। অনেক সময় দেখা যায় এই পবিত্র জিনিসগুলি পায়ের তলায় মাড়ানো হয়, প্লাস্টিকের ব্যাগে পচে যায়, বা ময়লার সঙ্গে মিশে অপবিত্র হয়—যা নির্মাল্য অপমান হিসেবে গণ্য হয়।
সঠিক নিয়মে নির্মাল্য বিসর্জনের উপায়
শাস্ত্র অনুযায়ী নির্মাল্যকে কখনোই অযত্নে ফেলা উচিত নয়।
গঙ্গা বা যেকোনো পবিত্র নদীতে নিমজ্জন করা
বাড়ির আঙিনায় বা বাগানে মাটিতে পুঁতে দেওয়া
গঙ্গাজল ভরা পাত্রে রেখে তা জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা
নদীতে বিসর্জনের সময় শাস্ত্রোক্ত মন্ত্র পাঠ করা
সন্ত শ্রী প্রেমানন্দ মহারাজ জি বলেছেন, নির্মাল্য নিমজ্জন শুধু শাস্ত্র পালনের বিষয় নয়, এটি ভক্তের আধ্যাত্মিক শুদ্ধতার প্রক্রিয়া। যেমন, জগন্নাথ পুরীর মন্দিরে “কৈলি বৈকুণ্ঠ” নামে একটি বিশেষ স্থান রয়েছে, যেখানে ভাঙা মূর্তি ও নির্মাল্য নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে বিসর্জন দেওয়া হয়।
জন্মাষ্টমীতে কেন বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ
বিশ্বাস করা হয়, জন্মাষ্টমীতে পূজার প্রতিটি নৈবেদ্য ও ভক্তি বিশেষভাবে ফলপ্রদ হয়। কিন্তু এই দিনেই যদি নির্মাল্যের অপমান করা হয়, তাহলে সেই পুণ্য মুহূর্তেই বিনষ্ট হতে পারে। যদি ভুল হয়ে যায়, তবে অবিলম্বে নদীতে ডুবিয়ে বা মাটিতে পুঁতে সংশোধন করা উচিত। তবে ইচ্ছাকৃত অবহেলাই আসল পাপ বলে গণ্য হয়।
তাই এই জন্মাষ্টমীতে, শুধু ভগবানকে নিবেদন করাই নয়, তাঁর নিবেদিত বস্তুগুলোকেও যথাযথ সম্মান দিয়ে বিদায় জানান। তবেই আপনার ভক্তি ও সাধনা পূর্ণতা পাবে।
No comments:
Post a Comment