ট্রাম্প কি চীনকে ভয় পান? বিরল মাটির খনিজ সহ ৫টি কারণ যার কারণে আমেরিকা বেইজিংয়ের উপর শুল্ক আরোপ করতে দ্বিধা করছে - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Monday, August 11, 2025

ট্রাম্প কি চীনকে ভয় পান? বিরল মাটির খনিজ সহ ৫টি কারণ যার কারণে আমেরিকা বেইজিংয়ের উপর শুল্ক আরোপ করতে দ্বিধা করছে

 


মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন এবং আগামী দিনে তা ৫০ শতাংশে উন্নীত করতে চলেছেন। কিন্তু অন্যদিকে, তিনি ভারতের প্রতিবেশী দেশ চীনের প্রতি সদয় বলে মনে হচ্ছে। ট্রাম্প নতুন শুল্ক হার বাস্তবায়নের জন্য চীনকে ৯০ দিন সময় দিয়েছেন এবং তিনি আলোচনার মাধ্যমে একটি মধ্যম পথ খুঁজে বের করতে চান। চীনের প্রতি ট্রাম্পের এই উদারতার কারণ কী?


বিরল পৃথিবীর খনিজ পদার্থের সমস্যা

ট্রাম্প কি চীনের উপর শুল্ক আরোপ করতে ভয় পান? চীন আমেরিকার সবচেয়ে বড় বাণিজ্য প্রতিদ্বন্দ্বী এবং দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখনও পর্যন্ত চীনের উপর শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে নরম মনোভাব দেখিয়েছেন। এর মূল কারণ বিরল পৃথিবীর খনিজ পদার্থ বলে মনে করা হচ্ছে, যার জন্য আমেরিকা চীনের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

এই বছরের শুরুতে, বেইজিং ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় সাতটি বিরল মাটির পণ্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করে এই খাতে তার আধিপত্য বিস্তার করে। এই বিধিনিষেধগুলি বিশ্বব্যাপী নির্মাতাদের জন্য, বিশেষ করে বিরল মাটির উপকরণের উপর নির্ভরশীল গাড়ি নির্মাতাদের জন্য সমস্যা তৈরি করে।

চীনের প্রভাব, আমেরিকার নির্ভরতা

মে মাসে জেনেভায় অনুষ্ঠিত আলোচনার পর, আমেরিকা ও চীন তাদের ক্রমবর্ধমান শুল্কের উপর ৯০ দিনের স্থগিতাদেশ ঘোষণা করে। এই সময়ের মধ্যে, মার্কিন শুল্ক ১৪৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে এবং চীনের শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে কমিয়ে আনা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলিতে, এই যুদ্ধবিরতি হুমকির মুখে পড়ে বলে মনে হচ্ছে, যখন ওয়াশিংটন বেইজিংকে বিরল মৃত্তিকা রপ্তানির উপর বিধিনিষেধ কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ করে।

প্রকৃতপক্ষে, চীন এই খনিজগুলির বৃহত্তম উৎপাদক এবং রপ্তানিকারক। এই খনিজগুলি উচ্চ প্রযুক্তির শিল্প এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই নির্ভরতা কমাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের সাথে অংশীদারিত্বের চেষ্টা করছে, যার মধ্যে মিয়ানমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

সস্তা পণ্যের সন্ধান করুন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনের উপর শুল্ক আরোপের জন্য বেশ কয়েকবার বিবৃতি দিয়েছেন, কিন্তু এই পরিকল্পনাগুলি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়নি। চীন এই বিরল খনিজগুলির উপর নিষেধাজ্ঞাকে অর্থনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে এবং এখন পর্যন্ত বেইজিংয়ের কৌশল এই বিষয়ে কার্যকর হয়েছে। আমেরিকার যুদ্ধবিমান এবং অন্যান্য অস্ত্রের জন্য এই খনিজগুলির প্রয়োজন এবং চীনের চাপ ট্রাম্পকে নতি স্বীকার করতে বাধ্য করেছে।

ভারতের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপের মাধ্যমে আমেরিকা এখন অন্য কোনও দেশ থেকে সস্তা পণ্য খুঁজছে। যদি ভারতীয় পণ্যগুলি ভারী শুল্ক পরিশোধের পরে আমেরিকায় যায়, তবে সেগুলি আগের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হবে। এই পরিস্থিতিতে, ট্রাম্প আমেরিকানদের সস্তা পণ্যের অ্যাক্সেসের জন্য চীনের দিকে তাকাচ্ছেন। শুল্ক আরোপের মাধ্যমে, আমেরিকান বাজারে চীনা পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে এবং এর ফলে আমেরিকান কোম্পানি এবং ভোক্তারা প্রভাবিত হবে। যদি বেইজিং পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করে, তাহলে চীনে আমেরিকান পণ্যও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। এটি আমেরিকান রপ্তানিকারকদের ক্ষতি করবে। এই পরিস্থিতিতে, ট্রাম্প প্রশাসনের হাত বাঁধা, তার অর্থনীতি এবং ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার যত্ন নেওয়া।

বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খল এবং অভ্যন্তরীণ চাপ

আমেরিকা এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ কেবল এই দুটি দেশকেই প্রভাবিত করবে না, বরং সমগ্র বিশ্বের সরবরাহ শৃঙ্খলকেও প্রভাবিত করবে। এটি বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে প্রভাব ফেলবে এবং অনেক দেশের অর্থনীতি এর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। এক অর্থে, চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়াও ট্রাম্পের বাধ্যবাধকতা। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এটি একটি প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অন্যদিকে, চীনের উপর ভারী শুল্ক আরোপ আমেরিকান ভোক্তাদের উপর মুদ্রাস্ফীতির চাপও বাড়িয়ে দিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, ট্রাম্প বর্তমানে দেশীয় অর্থনীতির ভারসাম্য বজায় রেখে চীনের উপর চাপ সৃষ্টির কৌশলের অংশ হিসেবে চীনকে সময় দিচ্ছেন।

অর্থনৈতিক সংঘাতের ভয়

চীন বিশ্বের একটি প্রধান সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি। আমেরিকার সাথে এর সম্পর্ক কেবল ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের মধ্যে যেকোনো অর্থনৈতিক সংঘাত বিশ্বজুড়ে বাজারের জন্য বিপজ্জনক প্রমাণিত হতে পারে। এই কারণেই ট্রাম্প বর্তমানে আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে, আমেরিকা চীন ও রাশিয়ার মধ্যে জ্বালানি চুক্তির দিকেও নজর রাখছে। এই কারণেই ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে ভারতের মতো কোনও পদক্ষেপ নিতে চান না, কারণ এটি মার্কিন অর্থনীতিতেও খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে নির্ভরতা

বিরল খনিজ পদার্থ ছাড়াও, আমেরিকা অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে চীনের উপর নির্ভরশীল। আমেরিকান কোম্পানিগুলি সেমিকন্ডাক্টর থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং প্রযুক্তি সবকিছুর জন্য চীনের উপর নির্ভরশীল। এমন পরিস্থিতিতে, আমেরিকা কোনও মূল্যে চীনের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে তার ব্যবসায়ীদের বিরক্ত করতে চায় না। এই খাতে আমেরিকার স্বনির্ভর হতে সময় লাগবে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad