Sunday, August 31, 2025

SCO শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫ বার্তা: পৃথিবী বদলে গেছে... দুটি ছবি সাক্ষী, আমেরিকার দাদাগিরি আর কেউ মেনে নেবে না


 চীনের উত্তরাঞ্চলীয় শহর তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (SCO) শীর্ষ সম্মেলন এবার পুরো বিশ্বের জন্য একটি বড় বার্তা নিয়ে এসেছে। ২০২৪ সালের আস্তানা শীর্ষ সম্মেলন এবং ২০২৫ সালের তিয়ানজিন শীর্ষ সম্মেলনের ছবি একসাথে করলেই পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন। এক বছর আগে মঞ্চে মাত্র কয়েকটি মুখ ছিল, কিন্তু এবার মঞ্চে এত ভিড় ছিল যে বিশ্বের মানচিত্র ছবিতে ঢাকা পড়ে গেল। এই কারণেই এটিকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী এসসিও শীর্ষ সম্মেলন বলা হচ্ছে।


চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং স্পষ্টভাবে বলেছেন যে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য এসসিও-র একটি বিশাল দায়িত্ব রয়েছে। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সহ বিশ্ব নেতাদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন যে ক্ষমতা আর পশ্চিমা বা কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকবে না। শি জিনপিংয়ের বক্তব্য ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলির চিন্তাভাবনার প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ, যেখানে তারা নিজেদেরকে বিশ্বের একমাত্র নেতা বলে মনে করে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপস্থিতি এই শীর্ষ সম্মেলনের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ২০২৪ এবং ২০২৫ সালের এই দুটি ছবি বিশ্বকে বলে দিয়েছে যে সময় বদলে যাচ্ছে এবং কেউ আর আমেরিকার আধিপত্য মেনে নেবে না।

২০২৪ এবং ২০২৫ সালের ছবির মধ্যে ৫টি পার্থক্য

আপনি যদি ২০২৪ সালের আস্তানা শীর্ষ সম্মেলনের ছবি দেখেন, তাহলে মঞ্চে মাত্র কয়েকজন নেতাকে দেখা যাচ্ছে। সম্মেলনটি ছিল ছোট এবং সীমিত। ২০২৫ সালের তিয়ানজিনের ছবিতে পুরো পরিবেশ বদলে গেছে। মঞ্চে এত ভিড় যে এটি নিজেই একটি বার্তা।

এবার পুতিন আছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদিও আছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফও আছেন এবং ইরানের রাষ্ট্রপতি মাসুদ পেজেশকিয়ানও আছেন। বেলারুশের রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো, কাজাখস্তানের রাষ্ট্রপতি কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভ, কিরগিজস্তানের রাষ্ট্রপতি সাদির জাপারভ, তাজিকিস্তানের রাষ্ট্রপতি এমোমালি রহমান, উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রপতি শাভকাত মিরজিওয়েভও উপস্থিত আছেন।

মঙ্গোলিয়া, নেপাল, মালদ্বীপ, মিশর, মায়ানমার, তুরস্ক, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, কম্বোডিয়ার প্রতিনিধি পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত আছেন। শুধু তাই নয়, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম এবং তুর্কমেনিস্তানের নেতারাও এসেছেন।

কয়েক ডজন নেতা, কয়েক ডজন সংস্কৃতি এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক স্বার্থের উপস্থিতি এই সম্মেলনের শক্তির কথা বলে। এই কারণেই এটিকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী এসসিও বলা হচ্ছে। এই পরিবর্তন দেখায় যে এসসিও এখন জি৭ বা ন্যাটোর মতো পশ্চিমা সংস্থাগুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

এক বছর আগে, আমেরিকা এবং পশ্চিমাদের দাঙ্গা কোনও চ্যালেঞ্জ ছাড়াই চলছিল। কিন্তু আজ পরিস্থিতি বদলে গেছে। এশিয়া এবং তার অংশীদার দেশগুলি বিশ্বকে জানিয়েছে যে এখন একটি নতুন ব্যবস্থা আসছে।

চীন-ভারত-রাশিয়ার শক্তি প্রদর্শন
এই সম্মেলন কেবল কূটনীতি নয়, বরং শক্তি প্রদর্শনও। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পশ্চিমা এবং রাশিয়াকে বিভিন্ন শিবিরে বিভক্ত করেছে। চীন ও আমেরিকার মধ্যে উত্তেজনা চরমে। ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য পার্থক্যও সম্প্রতি আরও গভীর হয়েছে। এমন পরিবেশে, যখন এত দেশ একসাথে দাঁড়িয়েছে, তখন বার্তাটি স্পষ্ট যে বিশ্ব পরিবর্তন হচ্ছে এবং পশ্চিমাদের তাণ্ডব আর কাজ করবে না। শি জিনপিং এবং ভ্লাদিমির পুতিন ইতিমধ্যেই আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন। এখন এই প্ল্যাটফর্মে ভারতের মতো একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ পশ্চিমা দেশগুলির জন্য একটি বড় সংকেত যে এশিয়া তার নিজস্ব উপায়ে বিশ্বকে দিকনির্দেশনা দিতে চায়।

ছোট দেশগুলির বড় ভূমিকা
এই সম্মেলনটি ছোট এবং মাঝারি আকারের দেশগুলির জন্যও একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে। নেপাল, মালদ্বীপ, মিশর এবং মায়ানমারের মতো দেশের নেতাদের উপস্থিতি দেখায় যে তারা এখন পশ্চিমাদের উপর নির্ভর না করে নতুন বিকল্প খুঁজছে। ভারত এবং চীনের মতো দেশগুলির সাথে দাঁড়িয়ে, এই দেশগুলি তাদের উন্নয়ন এবং সুরক্ষার জন্য নতুন পথ খুঁজছে।

No comments:

Post a Comment