ন্যাশনাল ডেস্ক, ১০ আগস্ট ২০২৫: অপারেশন সিঁদুরের সময়, সশস্ত্র বাহিনীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল, জানালেন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। তিনি বলেন, কী করতে হবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীকে। সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল। সেনাপ্রধানের কথায়, 'অপারেশন সিঁদুরের সময়, রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা এবং স্পষ্টতার এমন একটি উদাহরণ ছিল, যা আমরা প্রথমবার দেখেছি।'
জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী আইআইটি মাদ্রাজে আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার সময় একথা বলেন। এখানে অপারেশন সিঁদুর সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, '২২শে এপ্রিল পহেলগামে যা ঘটেছিল তা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। উল্লেখ্য, ২২শে এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসীরা ২৬ জন নিরীহ পর্যটককে নির্মমভাবে খুন করে।
জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, “২৩শে এপ্রিল, ঠিক পরের দিন, আমরা সবাই একসাথে বসেছিলাম। প্রতিরক্ষামন্ত্রীও প্রথমবার বলেন ‘ব্যস, যথেষ্ট হয়েছে’। তিন সেনাপ্রধান একমত ছিলেন যে, কিছু করা উচিৎ। আমাদের কী করতে হবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল। এটি ছিল রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা এবং স্পষ্টতার একটি উদাহরণ যা আমরা প্রথমবার দেখতে পাই।”
সেনাপ্রধান বলেন, “২৫শে এপ্রিল, আমরা উত্তর কমান্ডে গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা চিন্তাভাবনা করি, পরিকল্পনা করি, ধারণাটি প্রণয়ন করি এবং বাস্তবায়ন করি। আমরা নয়টি আস্তানার মধ্যে সাতটি ধ্বংস করেছিলাম এবং বিপুল সংখ্যক সন্ত্রাসীকে নির্মূল করা হয়েছিল। ২৯শে এপ্রিল, আমরা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছিলাম।”
জেনারেল দ্বিবেদী আরও বলেন, “অপারেশন সিঁদুরে আমরা এক ধরণের দাবা খেলছিলাম। আমরা জানতাম না শত্রুর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে এবং আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে। একে ধূসর অঞ্চল বলা হয়। এর অর্থ হল আমরা কোনও প্রচলিত যুদ্ধে লড়ছিলাম না বরং তার ঠিক আগে থেকেই কৌশল অবলম্বন করছিলাম। আমরা পদক্ষেপ করতাম, শত্রুও পদক্ষেপ করত। কখনও আমরা তাকে আটকাচ্ছিলাম, কখনও আমরা আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আক্রমণ করছিলাম এবং এটাই জীবনের মূল কথা।”
জেনারেল দ্বিবেদী এই সময়ে পাকিস্তানের সামরিক প্রধান অসীম মুনিরকে নিশানা করেন। তিনি বলেন যে, যুদ্ধে ন্যারেটিভ ম্যানেজমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি কোনও পাকিস্তানিকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আপনি জিতেছেন নাকি হেরেছেন, তাহলে তিনি বলবেন যে তার সেনাপ্রধান অসীম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল করা হয়েছে। পাকিস্তানিরা ভাববে যে তারা অবশ্যই জিতেছে, সেই কারণেই অসীম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, অপারেশন সিঁদুরের সময় পাকিস্তানের ওপর তীব্র আক্রমণ চালিয়েছিল ভারত এবং তাদের ছয়টি বিমান ভূপাতিত করা হয়েছিল। এর সাথে সাথে অনেক বিমানঘাঁটিও ধ্বংস করা হয়। ভারত যে পাকিস্তানি বিমানগুলিকে গুলি করে ভূপাতিত করেছিল তার মধ্যে ৫টি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ছিল। এছাড়াও, ভারতীয় সেনাবাহিনী একটি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহকারী বিমানকেও গুলি করে ভূপাতিত করেছিল। শনিবার ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিং এই তথ্য প্রকাশ করেন।
শনিবার (৯ আগস্ট) বেঙ্গালুরুতে এই বড় প্রকাশ করেন এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিং। এখানে আয়োজিত এয়ার চিফ মার্শাল এলএম কাট্রে বক্তৃতায় তিনি বক্তব্য রাখছিলেন। এই সময় তিনি বলেন যে, 'অপারেশন সিঁদুর'-এ ভারতের এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঁচটি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এর পাশাপাশি পাকিস্তানি AWACSও ভারত ধ্বংস করেছে। এই বিমানটি আকাশে নজরদারি এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কাজে সাহায্য করে। বিমান বাহিনীর মতে, প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূর থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিমানগুলিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। তথ্য অনুসারে, পাকিস্তানের জ্যাকোবাবাদ বিমানঘাঁটিতে পার্ক করা কিছু বিমানকেও নিশানা করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, বোলারি বিমানঘাঁটিতে সুনির্দিষ্ট আক্রমণে ভারতীয় বিমান বাহিনী একটি পাকিস্তানি AWACS ধ্বংস করেছে। বিমান বাহিনীর মতে, এই তথ্য নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্যের উপর ভিত্তি করে। উল্লেখ্য যে, এস-৪০০ সিস্টেমটি প্রথমবার 'অপারেশন সিঁদুরে ব্যবহার করা হয়েছিল। ধারণা করা হয় যে, 'অপারেশন সিঁদুর'-এর সময় এবং তার পরপরই এই প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসেনি কারণ ভারতীয় বিমান বাহিনী তখন প্রযুক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করছিল।
No comments:
Post a Comment