প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ০৪ আগস্ট ২০২৫, ২২:৩৫:০১ : যেখানে আজও সূর্যের আলো পৌঁছয়নি, সেই পৃথিবীর গহীনে লুকিয়ে রয়েছে এক রহস্যময় জৈব জগত। মঙ্গল গ্রহে প্রাণের খোঁজ, কিংবা এলিয়েনদের নিয়ে নানা দাবী, সব কিছু ছাপিয়ে চিন ও কানাডার বিজ্ঞানীরা এমন এক জায়গায় প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন, যা বিজ্ঞানীদেরও চমকে দিয়েছে।
চীনের গুয়াংঝাউ ইনস্টিটিউট অফ জিওকেমিস্ট্রি এবং কানাডার আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা মিলে এই গবেষণা চালিয়েছেন। তাঁদের দাবী, পৃথিবীর গভীরে এমন এক ধরণের এককোষী প্রাণী (Prokaryotes) বসবাস করছে, যারা সূর্যালোক ছাড়াই জীবিত থাকে। এদের শক্তির উৎস ভূমিকম্প। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন এই জীবগুলি সেই ভূমিকম্প থেকে উৎপন্ন শক্তি ব্যবহার করেই বেঁচে থাকে।
কীভাবে বেঁচে থাকে এই 'অদৃশ্য' প্রাণীরা?
গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নাল Science Advances-এ। গবেষকদের মতে, ভূমিকম্প যখন হয়, তখন ভূগর্ভের পাথরের গায়ে ফাটল ধরে। সেই ফাটল দিয়ে জল প্রবেশ করে এবং পাথরের সঙ্গে এক ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া শুরু হয়। এতে উৎপন্ন হয় হাইড্রোজেন গ্যাস ও রিঅ্যাকটিভ অক্সিজেন যা ওই জীবাণুগুলির বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি জোগায়।
এই প্রতিক্রিয়া এমনভাবে ঘটে যেন এটি একটি প্রাকৃতিক ব্যাটারি। ইলেকট্রনের প্রবাহের মাধ্যমে জৈব-প্রক্রিয়াগুলি সক্রিয় হয়, এবং প্রাণ টিকে থাকে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, যেহেতু এই প্রাণীরা পৃথিবীর অনেক গভীরে থাকে, তাই সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি, মহাকাশ থেকে আসা ক্ষুদ্র গ্রহাণুর ধাক্কা বা অন্য কোনও ঘাত-প্রতিঘাত তাদের ক্ষতি করতে পারে না। এই সুরক্ষিত পরিবেশ তাদের নিরন্তর বেঁচে থাকার জন্য আদর্শ।
এমনকি একমাত্র মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পও এতটা শক্তি উৎপন্ন করতে পারে, যা বহু প্রাণীর জীবনচক্র সচল রাখার জন্য যথেষ্ট। বিজ্ঞানীদের মতে, এই জৈব-জগতটা এতটাই বিশাল হতে পারে যে এটি পৃথিবীর মোট প্রোক্যারিওট জনসংখ্যার প্রায় ৯৫% পর্যন্ত গঠন করে।
এই গবেষণা শুধু পৃথিবীর ইতিহাস নয়, মঙ্গলের মতো গ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা নিয়েও নতুন চিন্তার পথ খুলে দিল। যদি পৃথিবীর এমন এক অন্ধকার, গহীন জায়গায় প্রাণ থাকতে পারে, তবে মঙ্গলের গুহা কিংবা গহীনে এমন কিছু লুকিয়ে নেই এই ধারণাকে নস্যাৎ করছে না বিজ্ঞান।
পৃথিবীর গভীর স্তরে থাকা এই রহস্যময় প্রাণীরা হয়তো একদিন আমাদের জানাবে, কীভাবে প্রাণের উৎপত্তি হয়েছিল, কিংবা কীভাবে তা বহুদূর ভবিষ্যতেও টিকে থাকতে পারে।
No comments:
Post a Comment