'এই প্রথম সরকার দেখলাম, যারা বাংলাদেশীদের মন্দ বা দুষ্ট হিসেবে চিহ্নিত করে দিচ্ছে'- বিজেপি সরকারকে তোপ তৃণমূল সাংসদ মহুয়া'র - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Sunday, August 31, 2025

'এই প্রথম সরকার দেখলাম, যারা বাংলাদেশীদের মন্দ বা দুষ্ট হিসেবে চিহ্নিত করে দিচ্ছে'- বিজেপি সরকারকে তোপ তৃণমূল সাংসদ মহুয়া'র


কলকাতা, ৩১ আগস্ট ২০২৫: কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির বিরুদ্ধে বাঙালি বিদ্বেষের অভিযোগ এনেছে বঙ্গের ক্ষমতাসীন‌ দল তৃণমূল কংগ্রেস। তাঁদের অভিযোগ, বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশী তকমা লাগিয়ে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে তাঁদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে, আটকে রাখা হচ্ছে, আবার কখনও কখনও পুশব্যাক করা হচ্ছে।' 


ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের জেলায় জেলায় মিটিং, মিছিল, বৈঠক, আন্দোলন করে এর প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। মূলত বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী রাজ্য হওয়াতেই পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকরা হেনস্তার শিকার হচ্ছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। 


সম্প্রতি এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য ছিল, 'আমাদের পাশে বাংলাদেশ আছে বলে... কিন্তু বাংলাদেশ তো আর আমরা তৈরি করিনি। দুজনের (পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ) ভাষা যদি এক হয় তাহলে আমরা কি করতে পারি?' 


মমতার পর এবার এই ইস্যুতে মুখ খুলেছেন তাঁরই দলের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। বাংলাদেশের সাথে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি নিয়ে দেশের বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেছেন মহুয়া মৈত্র। তৃণমূল সাংসদের অভিমত, 'পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ- আমাদের ভাষা এক, মানুষ এক। একসময় আমরা অবিভক্ত বাংলা ছিলাম। কিন্তু ১৯৭১ বাংলাদেশ আলাদা দেশ হয়। এই বাংলাদেশই কেবলমাত্র আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র ছিল। আমরা আজীবন এই অঞ্চলেই আছি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে এই প্রথম সরকার দেখলাম, যারা বাংলাদেশীদের মন্দ বা দুষ্ট হিসেবে চিহ্নিত করে দিচ্ছে। ভারতের প্রত্যেকটা বিজেপি নেতা এমন মনোভাব দেখাচ্ছেন যে, বাংলাদেশের মানুষ সকলেই নাকি বদ প্রকৃতির, সকলেই নাকি অসভ্য। কই! আমরা তো কোনদিনও এটা দেখিনি।' 


গত ২৬ আগস্ট নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জমির পাট্টা বিলি অনুষ্ঠানের ফাঁকে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ এরকম মন্তব্য করেন। মহুয়ার সেসব বক্তব্য সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভারতে অবস্থানরত অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্তকরণ এবং তাঁদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠাতে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করেছে ভারত সরকার। অনুপ্রবেশ ইস্যু যে কতটা উদ্বেগের বিষয়, তা স্পষ্ট হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণেই। গত ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিন লালকেল্লা থেকে মোদী ঘোষণা দেন অনুপ্রবেশ মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় সরকার উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন জনসংখ্যাতাত্ত্বিক মিশন (ডেমোগ্রাফিক মিশন) গঠন করবে। 


সেই প্রেক্ষিতে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়ার অভিমত, 'বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সাথে হয়তো কোনো সমস্যা থাকতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষরা তো আমাদের ভাই-বোন। সে দেশের মানুষের সাথে আমরা কেন খারাপ ব্যবহার করব? বাংলাদেশের মানুষদের অনেকের পরিবার-পরিজন আছে এখানে। 

আসলে মানুষের মধ্যে এই যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করা, জনবিন্যাস পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে আসলে এগুলো সবই হচ্ছে মুসলমানদের ধরে পেটাও। এদের (বিজেপি) মিশন ডেমোগ্রাফির অর্থ কি? এর অর্থ হচ্ছে হিন্দু রাষ্ট্র তৈরি করো, যেখানে মুসলিম বা সংখ্যালঘু দেখা হবে তাদের উপরে লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, তাড়িয়ে দেওয়া- এটাই হচ্ছে কাজ। বাংলাদেশী তকমা দিয়ে গুরগাঁও, হরিয়ানা, রাজস্থান প্রতিটি বিজেপি শাসিত জায়গাতে বাংলায় কথা বললেই... তার উপরে মুসলিম হলে ব্যাস! আপনারা কি ভাবতে পারছেন?' 


অনুপ্রবেশ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করেছেন। তাঁদের উভয়ের অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশে মদদ দিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকার, কারণ এই অনুপ্রবেশকারীরাই তাঁর ভোট ব্যাংক। 


এই ইস্যুতে মোদী-অমিত শাহদের পাল্টা তোপ দেগে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র' বক্তব্য, 'ওরা (বিজেপি) বারবার বলে যাচ্ছে অনুপ্রবেশকারী! অনুপ্রবেশকারী! অনুপ্রবেশকারী! আমাদের কথাটা খুবই সহজ। ভারতের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে পাঁচটি বাহিনী। 

এবং সরাসরি ভাবে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। ১৫ আগস্ট লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছিলেন যে অনুপ্রবেশকারীরা জনসংখ্যার পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। কিন্তু তিনি যখন এই কথা বলছিলেন, তখন লালকেল্লায় দর্শকাসনে সামনের সারিতে বসে থাকা তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্লজ্জের মত হাসছিলেন এবং হাততালি দিচ্ছিলেন।'     


মহুয়া আরও বলেন, 'আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই, যদি ভারতের সীমান্ত রক্ষা করার জন্য কেউ না থাকে, যদি অন্য দেশের মানুষরা শয়ে শয়ে, লাখো লাখো, কোটিতে কোটিতে ভরে যায়... তাহলে প্রথমেই তো অমিত শাহের মাথাটা কেটে তোমার টেবিলের উপর রাখা উচিৎ। যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশের সীমান্তকে রক্ষা করতে পারে না, যে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলছে বাইরে থেকে লোক এসে আমাদের মা বোনেদের উপর চোখ রাখছে, আমাদের জমি কেড়ে নিচ্ছে। তাহলে দোষটা কার? দোষটা আমাদের না আপনার? এখানে তো বিএসএফ আছে। আমরা পর্যন্ত বিএসএফের ভয়ে থাকি। কিন্তু অনুপ্রবেশ করছে, লোক আসছে, কই আমরা তো দেখি না।' 


এদিকে অনুপ্রবেশ ইস্যুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে মহুয়ার সেই হুমকি ভিডিও সামনে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। মহুয়া মৈত্রের ওই মন্তব্যের পর স্থানীয় কোতোয়ালি থানায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। সন্দীপ মজুমদার নামে এক ব্যক্তি মহুয়ার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা দেওয়ারও আবেদন জানিয়েছেন। 


প্রকাশ্যে যেভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের শিরচ্ছেদ দেওয়ার কথা বলছেন তার তীব্র বিরোধিতা করেছে বিজেপি। ট্যুইট করে বিজেপি মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়াল্লা বলেন, মহুয়া মৈত্রের ওই হুমকি মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি সংগঠন আইএসআইএস- এর মত শোনাচ্ছে। এটা কেমন মানসিকতা? জিহাদি সন্ত্রাসীরা এমনটা ভাবে। দেশ যখন অনুপ্রবেশমুক্ত হতে চাইছে, তখন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা গৃহযুদ্ধ এবং রক্তপাতের কথা বলেছেন।' 


বছর ঘুরলে ২০২৬ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। ফলে এই অনুপ্রবেশ ইস্যুতে ফের সরগরম হয়ে উঠতে পারে বঙ্গের নির্বাচনী ময়দান।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad