প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ২১ আগস্ট ২০২৫, ০৮:০০:০২ : ভারত বৈচিত্র্যের দেশ। এখানে মানুষ বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে, নানা রকম খাবার খায় এবং ভিন্ন ভিন্ন উৎসব পালন করে। ধর্মভক্ত মানুষ মন্দিরে গিয়ে পূজা-অর্চনা করেন। দেশের অনেক মন্দির শুধু প্রাচীনই নয়, অজানা রহস্যে ভরপুর। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রবীণদের মুখে শোনা এসব মন্দিরের কাহিনি আজও বিস্মিত করে। মন্দিরগুলির স্থাপত্য, ইতিহাস ও অলৌকিক রহস্য দেখে দর্শনার্থীরা অবাক হয়ে যান। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন— কে বানাল এই মন্দিরগুলো? নাকি এগুলো প্রকৃতির নিজস্ব সৃষ্টি? চলুন জেনে নেওয়া যাক ভারতের এমন কিছু রহস্যময় মন্দির সম্পর্কে—
জ্বালামুখী মন্দির (হিমাচল প্রদেশ)
হিমাচল প্রদেশের কালীধার পাহাড়ে অবস্থিত জ্বালামুখী মন্দির আদিশক্তি জ্বালা দেবীকে উৎসর্গিত। বিশ্বাস করা হয়, এখানে মা সতির জিহ্বা পতিত হয়েছিল। মন্দিরের ভেতরে মাটির নিচ থেকে নিজে নিজে বের হয় লেলিহান জ্বালা, যা নয়টি ভিন্ন রঙে জ্বলে ওঠে। বহু গবেষণা হলেও এর বৈজ্ঞানিক রহস্য আজও অমীমাংসিত। স্থানীয়রা এই নয় রঙের আগুনকে দেবী শক্তির নয় রূপ— মহাকালী, অন্নপূর্ণা, চণ্ডী, হিঙ্গলাজ, বিন্ধ্যবাসিনী, মহালক্ষ্মী, সরস্বতী, অম্বিকা ও অঞ্জি দেবী বলে মানেন।
কেভড়িয়া গুহা মন্দির
অত্যন্ত প্রাচীন এই গুহামন্দিরটি হাজার হাজার বছর পুরনো বলে ধারণা করা হয়। মন্দিরটি প্রকৃতিরই এক বিস্ময়কর সৃষ্টি, যেখানে মানুষের কোনও হাত নেই বলে স্থানীয়দের বিশ্বাস। পাহাড়ের চাটান কেটে তৈরি রহস্যময় কাঠামো দেখে মনে হয়, কোনও অতিপ্রাকৃত শক্তি এটিকে নির্মাণ করেছে।
লিঙ্গরাজ মন্দির (ভুবনেশ্বর, ওডিশা)
ভুবনেশ্বরের বিখ্যাত লিঙ্গরাজ মন্দির আজও রহস্যে মোড়া। কে এটি নির্মাণ করেছিলেন, তার সঠিক তথ্য নেই। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই মন্দিরের উপর দিয়ে কখনও পাখি বা বিমান উড়ে যায় না। কেন এমন ঘটে, তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আজও পাওয়া যায়নি। বিশেষত্ব হলো এখানে একসঙ্গে শৈব ও বৈষ্ণব দুই ধারার পূজা প্রচলিত।
কৈলাশ মন্দির, এলোরার গুহা (মহারাষ্ট্র)
এলোরার গুহায় অবস্থিত কৈলাশ মন্দির বিশ্বের অন্যতম বিস্ময়। কোনও ইট-পাথর বা চুন-সুরকি ছাড়াই খোদাই করে একটিমাত্র পাহাড় থেকে এটি তৈরি হয়েছে। বিশ্বাস করা হয়, খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে মাত্র ১৮ বছরে এই বিশাল মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, প্রায় ৪ লক্ষ টন পাথর কেটে এত কম সময়ে মানুষের পক্ষে এটি তৈরি করা সম্ভব নয়।
অমরনাথ গুহা (কাশ্মীর)
ভগবান শিবকে উৎসর্গিত এই গুহায় প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয় বরফের শিবলিঙ্গ। কোনো মানুষের তৈরি নয়, একেবারেই প্রকৃতির সৃষ্টি এই শিবলিঙ্গ পূজারিদের কাছে অলৌকিক বলে বিবেচিত।
শোর মন্দির (মহাবলীপুরম, তামিলনাড়ু)
সাগরের তীরে দাঁড়িয়ে থাকা শোর মন্দির পর্যটকদের কাছে রহস্যময় এক বিস্ময়। বিশ্বাস করা হয়, একসময় এখানে সাতটি মন্দির ছিল, কিন্তু ছয়টি সাগরে ডুবে যায়। ২০০৪ সালের সুনামির পর সমুদ্রের নিচে চাপা পড়ে থাকা কিছু প্রাচীন স্থাপনার চিহ্ন পাওয়া যায়, যা সেই কিংবদন্তিকে আরও দৃঢ় করে।
মুন্ডেশ্বরী মন্দির (বিহার)
বিহারের ক্যামুর জেলায় অবস্থিত মা মুন্ডেশ্বরীর মন্দিরও বহু প্রাচীন। এখানে দেবীর প্রতিমা মহিষে আরোহিনী অবস্থায় রয়েছে। মন্দিরের বিশেষত্ব হল, এখানে ‘রক্তবিহীন বলি’ প্রথা প্রচলিত। বিশ্বাস অনুযায়ী, দেবীর চরণে স্পর্শ করা ভাত ছিটিয়ে দিলে বলি দেওয়া ছাগল অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে আবার একইভাবে ভাত ছিটালে ছাগল সচেতন হয়ে ওঠে। কে তৈরি করেছিলেন এই মন্দির, তার স্পষ্ট তথ্য আজও পাওয়া যায়নি।
No comments:
Post a Comment