মিষ্টি নয়, আগে ওষুধ হিসেবে খাওয়া হত 'লাড্ডু'! জেনে নিন আকর্ষণীয় ইতিহাস - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday, August 1, 2025

মিষ্টি নয়, আগে ওষুধ হিসেবে খাওয়া হত 'লাড্ডু'! জেনে নিন আকর্ষণীয় ইতিহাস


বিনোদন ডেস্ক, ০১ আগস্ট ২০২৫: 'যে খায় সে পস্তায়, যে না খায় সেও পস্তায়- দূর থেকেই মিষ্টি লাগে এই তেতো লাড্ডু--', খুব জনপ্রিয় লাইন আর এর‌ বাকি অংশটাও অবশ্যই সকলের জানা। তবে, আজ বিয়ে নয়, এই প্রতিবেদন আমরা সেই মিষ্টি লাড্ডুর কথা বলছি যা প্রতিটি উৎসব এবং বিশেষ অনুষ্ঠানে আনা হয়; তা সে গণেশ চতুর্থী হোক, দীপাবলির মিষ্টি হোক, অথবা বিয়ের আনন্দ। কিন্তু আপনি কি জানেন যে এই লাড্ডুরও নিজস্ব একটি গল্প আছে? হ্যাঁ, এটির ইতিহাস হাজার হাজার বছরের পুরনো। এই লাড্ডু কেবল স্বাদই নয়, আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। লাড্ডুর প্রতিটি দানা আমাদের ইতিহাসের সাথে যুক্ত। তাহলে আসুন জেনে নিই এই সুস্বাদু মিষ্টির পথচলা কীভাবে শুরু হয়েছিল এবং কীভাবে এটি প্রতিটি আনন্দ-অনুষ্ঠানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে। 


প্রথমেই যে কথাটা বলার, তা হল- যে লাড্ডু উৎসব-অনুষ্ঠানে মুখ মিষ্টির জন্য আমরা নিয়ে আসি, সেটি আসলে মিষ্টি ছিল না বরং ছিল একটি ঔষধ। লাড্ডুর ইতিহাস অনেক পুরনো। বিশ্বের প্রথম লাড্ডু তৈরি হয়েছিল ভারতে। জেনে অবাক হবেন যে, এটি কোনও মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক তৈরি করেননি বরং একজন বিখ্যাত ডাক্তার সুশ্রুত তৈরি করেছিলেন। সেই সময়ে, তিনি তার রোগীদের ওষুধ হিসাবে লাড্ডু দিতেন। সেই সময়ে, লাড্ডু মিষ্টি হিসাবে নয় বরং ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হত।


ইতিহাস এবং আয়ুর্বেদিক গ্রন্থ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, বিখ্যাত চিকিৎসক সুশ্রুত লাড্ডু আবিষ্কার করেছিলেন। বিশ্বাস করা হয় যে, সেই সময় এটি ঘি, তিল, গুড়, মধু, চীনাবাদাম এবং অন্যান্য শুকনো ফল মিশিয়ে তৈরি করা হত। অস্ত্রোপচারের সময় রোগীদের এটি দেওয়া হত। এই লাড্ডু তৈরিতে, ওষুধ, ভেষজ এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষাকারী জিনিস এবং মধু মিশিয়ে এটি তৈরি করা হত। আয়ুর্বেদে, তিল এবং গুড় দিয়ে তৈরি লাড্ডু শক্তি বৃদ্ধি এবং শরীরকে উষ্ণ রাখার জন্য খাওয়া হত। বিশেষ করে শীতকালে, তিলের লাড্ডু খাওয়া শরীরে শক্তি এবং তাপ সরবরাহ করত।


কিছু ঐতিহাসিক নথি অনুসারে, চোল রাজবংশের সৈন্যরা যখনই যুদ্ধে বের হতেন, তারা 'সৌভাগ্য' হিসেবে লাড্ডু সাথে নিয়ে যেতেন। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে লাড্ডুও বদলে যায় এবং গুড়ের পরিবর্তে চিনি ব্যবহার করা শুরু হয়। কন্নড় সাহিত্যে কয়েক শতাব্দী আগে এবং প্রায় এক শতাব্দী আগে বিহারে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যদ্রব্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। সেখানে একটি মিষ্টি তৈরি করা হত যাতে বেসন দিয়ে তৈরি বুন্দি ব্যবহার করা হত।


ভারতের প্রতিটি কোণে বিভিন্ন ধরণের লাড্ডু পাওয়া যায়। উত্তর ভারতে বেসনের লাড্ডু, দক্ষিণে রাভা লাড্ডু, মহারাষ্ট্রে তিলের লাড্ডু এবং বাংলায় নারকেলের লাড্ডুর মতো বিভিন্ন ধরণের লাড্ডু পাওয়া যায়। প্রতিটি অঞ্চলের স্বাদ এবং উপকরণের পার্থক্য এটিকে আরও বিশেষ করে তোলে। এই লাড্ডুগুলি আন্তর্জাতিক মিষ্টির তালিকায়ও তাদের স্থান করে নিয়েছে। আজ এটি কেবল ভারতেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও বিখ্যাত হয়ে উঠেছে।


সময়ের সাথে সাথে, লোকেরা তাঁদের পছন্দ অনুসারে লাড্ডু তৈরি করতে শুরু করেন। আর আজ আমরা অনেক ধরণের লাড্ডু দেখতে পাই। এই ছিল লাড্ডুর ইতিহাস, যেটি আজ আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং উৎসবের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই এখন থেকে যখনই আপনি কাউকে লাড্ডু খাওয়াবেন, তখন এটি দেওয়ার আগে, তাঁদের এই ইতিহাস সম্পর্কেও অবশ্যই বলুন।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad