বিশ্বের সেই গ্রাম, যেখানে মৃত্যু বেআইনি! ২৬ বছর ধরে জারি এই আজব নিয়ম - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday, August 1, 2025

বিশ্বের সেই গ্রাম, যেখানে মৃত্যু বেআইনি! ২৬ বছর ধরে জারি এই আজব নিয়ম



প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ০১ আগস্ট ২০২৫, ১০:০০:০১ : মৃত্যু এমন এক বাস্তবতা, যা কারও হাতে নেই। এটা যেকোনও সময়, যেকোনও জায়গায় আসতে পারে এবং কেউ তা আটকাতে পারে না। কিন্তু দুনিয়ায় এমন এক দেশ রয়েছে, যেখানে একটি গ্রামের ওপর মৃত্যুকে নিয়ে রয়েছে অদ্ভুত এক নিয়ম। এখানে মারা যাওয়া ‘ব্যান’ করা হয়েছে। শুনে হাসি পেলেও, এটা একেবারে সত্যি ঘটনা। কীভাবে মৃত্যু বন্ধ করা যায়, তা ভাবতেই পারেন না, কিন্তু স্পেনের একটি গ্রামে এই নিয়ম বাস্তবেই চালু রয়েছে। আসুন জেনে নিন সেই অদ্ভুত গ্রামের কথা।

স্পেনের আন্দালুসিয়া অঞ্চলের গ্রানাডা প্রদেশে অবস্থিত একটি ছোট গ্রাম লাঞ্জারোন (Lanjaron)। এই গ্রামে আজ থেকে প্রায় ২৬ বছর আগে, ১৯৯৯ সালে, স্থানীয় তৎকালীন মেয়র হোসে রুবিও এক আজব ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণায় গ্রামের বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছিল, তাঁরা যেন নিজেদের স্বাস্থ্য ভালো রাখেন, যেন মৃত্যু না হয় কমপক্ষে যতদিন না প্রশাসন নতুন কবরখানার ব্যবস্থা করছে।

এই ঘোষণাপত্রে স্পষ্টভাবে লেখা ছিল, “লাঞ্জারোনে মারা যাওয়া নিষিদ্ধ।” যদিও কথাটা শুনতে কৌতুকপূর্ণ, তবে এর পেছনে ছিল এক গভীর সমস্যা, গ্রামের কবরস্থানে আর কোনও জায়গা অবশিষ্ট ছিল না।

প্রতিদিন কবরস্থানে দেহ সমাহিত করার চাপ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, একসময় তা আর সম্ভব হচ্ছিল না। প্রশাসনের ওপর চাপ পড়ে কবরস্থান সম্প্রসারণের। সেই সমস্যার জবাবে, মেয়র রুবিও এই ব্যতিক্রমী ও নজরকাড়া নিয়ম তৈরি করেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, “আমি তো কেবল একজন মেয়র, আমার ওপর ঈশ্বর রয়েছেন, যাঁর হাতে সবকিছু।” তিনি আরও বলেন, “এই নিয়মকে মানুষ মজা এবং বুদ্ধিমত্তা দু’ভাবে নিয়েছে।”

আজও, ২৬ বছর পর, লাঞ্জারোনে মাত্র একটি কবরস্থানই রয়েছে। এখনও পরিষ্কার নয় প্রশাসন পরবর্তীতে নতুন কোনও জায়গার ব্যবস্থা করেছে কিনা। তবে পরিস্থিতি প্রায় আগের মতোই রয়ে গেছে।

লাঞ্জারোন গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। এটি মূলত প্রাকৃতিক খনিজ জল (Mineral Springs) এর জন্য বিখ্যাত। বর্তমানে এটি জেন Z প্রজন্মের ভ্রমণপ্রেমীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং বার্সেলোনা বা মাজোরকা-র মতো ভিড়ঠাসা গন্তব্যগুলোর চেয়ে ‘হিডেন জেম’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

তবে শুধু স্পেনের লাঞ্জারোনেই নয়, এমন আজব নিয়ম আছে নরওয়ের একটি শহরেও। নরওয়ের লংইয়ারবায়েন (Longyearbyen) শহরে ১৯৫০ সাল থেকে মৃত্যুর ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কারণ সেখানে আর্কটিক আবহাওয়ার জন্য মৃতদেহ সম্পূর্ণরূপে পচে না। ১৯১৭ সালের ফ্লু মহামারিতে মৃতদের শরীরে এখনও জীবিত ভাইরাস পাওয়া গেছে। এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে সেখানে কবরস্থান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

যদিও আইনি দিক থেকে এই নিয়ম কার্যকর বা সাংবিধানিক নয়, তবুও এটি লাঞ্জারোনের মতো জায়গার জন্য কার্যকর একটি প্রচারমূলক স্ট্র্যাটেজি হয়ে উঠেছে। আজও এই খবর ইন্টারনেটে ভাইরাল হয় এবং মিম হিসেবে ঘুরে বেড়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায়।

মৃত্যুর মতো একটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা ঘটনাকে কৌশলে নিয়ম করে সচেতনতা, আলোচনা এবং পর্যটন তিনটিই কৌশলে অর্জন করেছে এই গ্রাম।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad