আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে ভেষজের ব্যবহার হাজার বছরের ঐতিহ্য। এসব ভেষজ প্রায়ই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, শরীরকে ডিটক্স করা ও বিভিন্ন অসুখ নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করছেন— সব ভেষজ সবার জন্য উপকারী নয়, বরং কখনও কখনও বিপজ্জনকও হতে পারে।
সম্প্রতি একাধিক গবেষণা ও হেপাটোলজিস্টদের (লিভার বিশেষজ্ঞ) পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গুলঞ্চ (গিলয়), যা গুডুচি বা অমৃতা নামেও পরিচিত, দীর্ঘ সময় ধরে কিংবা অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
গুলঞ্চ কেন বিপজ্জনক হতে পারে?
গুলঞ্চের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অ্যালকালয়েড, গ্লাইকোসাইড ও বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ রয়েছে। এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে (ইমিউন সিস্টেম) সক্রিয় করতে সাহায্য করে। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় যখন এটি অতিরিক্ত মাত্রায় বা দীর্ঘ সময় ধরে গ্রহণ করা হয়।
অতিরিক্ত গুলঞ্চ শরীরে অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া শুরু করতে পারে, যেখানে শরীর নিজের সুস্থ কোষ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করে।
এর ফলে লিভারের প্রদাহ (ড্রাগ-ইনডিউসড হেপাটাইটিস) হতে পারে।
কিছু কেস রিপোর্টে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন গুলঞ্চ সেবনের কারণে রোগীর লিভার সিরোসিস এমনকি লিভার ফেলিওর পর্যন্ত হয়েছে।
অর্থাৎ, যেটিকে অনেকেই "অমৃত" বা "অমৃতা" ভেবে নিশ্চিন্তে খেয়ে থাকেন, সেটিই অযথা সেবনে বিষে পরিণত হতে পারে।
কাদের বিশেষ সতর্ক হওয়া উচিত?
যাদের আগে থেকেই লিভারের সমস্যা (যেমন ফ্যাটি লিভার, হেপাটাইটিস, সিরোসিস) রয়েছে।
যারা নিয়মিত অ্যালকোহল সেবন করেন।
যারা ইতিমধ্যেই লিভারকে প্রভাবিত করে এমন ওষুধ খান (যেমন কিছু ব্যথানাশক, স্টেরয়েড, অ্যান্টিবায়োটিক ইত্যাদি)।
এদের জন্য গুলঞ্চ বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
কোনও ভেষজ ওষুধ, বিশেষত গুলঞ্চ, নিজের ইচ্ছায় দীর্ঘ সময় ধরে খাওয়া উচিত নয়।
"প্রাকৃতিক" শব্দটি সব সময় "নিরাপদ" নয়—এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
ডাক্তারের বা প্রশিক্ষিত আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া গুলঞ্চ সেবন করবেন না।
গুলঞ্চ যদি ব্যবহার করতেই হয়, তবে মাত্রা ও সময়সীমা নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
মনে রাখবেন, ভেষজ ওষুধেরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। সুস্থ লিভার রাখতে হলে এলোমেলোভাবে গুলঞ্চ বা অন্য কোনও ভেষজ ব্যবহার না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ পথ।
No comments:
Post a Comment