হৃদরোগ বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম প্রধান মৃত্যুর কারণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব যদি আমরা প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনি। সচেতন অভ্যাস তৈরি করলে শুধু হৃদয় নয়, গোটা শরীরই সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকে।
চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, হৃদয়কে সুস্থ রাখতে সবার আগে নজর দিতে হবে খাদ্যাভ্যাসে। অতিরিক্ত তেল, চর্বি, ভাজাপোড়া ও প্রক্রিয়াজাত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। এসব খাবার ধীরে ধীরে রক্তনালীতে চর্বি জমাতে শুরু করে, ফলে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয় এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এর পরিবর্তে খাবারের তালিকায় রাখতে হবে শাকসবজি, ফলমূল, দানা শস্য, ডাল, মাছ ও বাদাম। বিশেষ করে আঁশসমৃদ্ধ খাবার রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে।
শুধু খাবার নয়, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামও হার্টের জন্য অপরিহার্য। প্রতিদিন অন্তত আধ ঘণ্টা হাঁটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং বা সাঁতার হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী রাখে। যারা দীর্ঘ সময় ডেস্কে বসে কাজ করেন, তাঁদের উচিত প্রতি ঘণ্টায় অন্তত কয়েক মিনিট হাঁটা বা শরীর নাড়াচাড়া করা। এতে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে।
ধূমপান ও মদ্যপান হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম বড় ঝুঁকি। ধূমপান রক্তনালী সংকুচিত করে এবং ধীরে ধীরে হৃদপিণ্ডের ক্ষতি করে। একইভাবে অতিরিক্ত মদ্যপানও হৃদয়ের জন্য ক্ষতিকর। তাই এই ক্ষতিকর অভ্যাস থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন।
মানসিক চাপও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। আধুনিক ব্যস্ত জীবনে দুশ্চিন্তা প্রায় সবারই হয়, কিন্তু নিয়ন্ত্রণে না থাকলে এটি রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়। এজন্য নিয়মিত মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা মানসিক প্রশান্তি দেয় এমন শখে সময় দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
পর্যাপ্ত ঘুমও হৃদয়ের জন্য অপরিহার্য। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ছয় ঘণ্টার কম ঘুমান, তাঁদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই প্রতিদিন অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করা উচিত।
চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার। অনেক সময় হার্টের সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে না। বছরে অন্তত একবার রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও সুগারের মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত। সময়মতো এসব নিয়ন্ত্রণে আনা গেলে বড় ধরনের জটিলতা এড়ানো যায়।
সবশেষে বিশেষজ্ঞদের মতে, হৃদয়কে সুরক্ষিত রাখতে বড় কোনো পরিবর্তন প্রয়োজন হয় না। বরং ছোট ছোট স্বাস্থ্যকর অভ্যাস, যেমন সুষম খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ধূমপান থেকে বিরত থাকা এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করাই হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি।

No comments:
Post a Comment