ডায়াবেটিস বর্তমানে সারা বিশ্বের অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসই এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ। তবে সময়মতো সচেতন হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সঠিক খাদ্যাভ্যাস।
চিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকা ঠিকভাবে সাজানো জরুরি। অতিরিক্ত চিনি, মিষ্টি জাতীয় খাবার, সফট ড্রিংকস এবং বেশি তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। পরিবর্তে খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে বেশি পরিমাণে শাকসবজি, ডাল, দানা শস্য, বাদাম এবং আঁশযুক্ত খাবার। এসব খাবার শরীরে ধীরে ধীরে শক্তি যোগায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।
অতিরিক্ত মাংস, বিশেষত লাল মাংস খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই চিকিৎসকেরা প্রায়ই পরামর্শ দেন মাংসের পরিবর্তে মাছ, মুরগি অথবা ডালকে প্রোটিনের উৎস হিসেবে গ্রহণ করতে। পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন বিস্কুট, কেক, ফাস্টফুড, জুস বা চিপস যতটা সম্ভব বাদ দেওয়া প্রয়োজন। এসব খাবার খুব দ্রুত রক্তে গ্লুকোজ বাড়িয়ে দেয়, যা রোগ নিয়ন্ত্রণকে কঠিন করে তোলে।
খাবারের সময়সূচিও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একসঙ্গে অনেকটা না খেয়ে দিনে চার থেকে পাঁচবার অল্প অল্প করে খাওয়া ভালো। এভাবে শরীর সহজে খাবার হজম করতে পারে এবং গ্লুকোজের মাত্রা স্থিতিশীল থাকে। অনেক রোগী না খেয়ে থেকে একসঙ্গে বেশি খেয়ে ফেলেন, যা হঠাৎ করে রক্তে শর্করা বাড়িয়ে দেয় এবং নানা জটিলতা তৈরি করে।
শুধু খাদ্যাভ্যাসেই নয়, পর্যাপ্ত ঘুম ও নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অপরিহার্য। প্রতিদিন অন্তত আধ ঘণ্টা হাঁটা, হালকা ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম করলে শরীর সক্রিয় থাকে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দেন, ডায়াবেটিসকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সঠিক খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে একজন ডায়াবেটিস রোগীও স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাও জরুরি, যাতে শর্করার মাত্রা ও শরীরের অবস্থা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়।
No comments:
Post a Comment