শহরে জায়গার অভাব আজকের দিনে একটি বড় সমস্যা। তাই অনেকেই শখ পূরণ করতে বা প্রয়োজন মেটাতে ছাদবাগান তৈরি করছেন। ছাদবাগানে শুধু ফুল নয়, নানা ধরনের ফল ও সবজিও চাষ করা সম্ভব। তার মধ্যে অন্যতম হলো লেবু গাছ। লেবু শুধু খাবারে স্বাদ বাড়ায় না, ভিটামিন ‘সি’-এর সমৃদ্ধ উৎস হিসেবেও এটি অত্যন্ত উপকারী। তবে ছাদবাগানে লেবু চাষ করতে হলে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি।
১. উপযুক্ত টব নির্বাচন
ছাদবাগানে লেবু গাছ চাষের জন্য বড় আকারের টব বেছে নিতে হবে। মাটির টব, সিমেন্টের টব বা বড় ড্রাম ব্যবহার করা যেতে পারে। টবের গভীরতা অন্তত ১৮ থেকে ২৪ ইঞ্চি হওয়া দরকার, কারণ লেবু গাছের শিকড় ভালোভাবে ছড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত জায়গা লাগে। টবের নিচে যেন জল বের হওয়ার ছিদ্র থাকে, তা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
২. মাটির মিশ্রণ তৈরি
লেবু গাছ চাষের জন্য উর্বর, ঝুরঝুরে ও পানি নিস্কাশন ক্ষমতাসম্পন্ন মাটি দরকার। টবের জন্য মিশ্রণ তৈরি করতে হবে এভাবে—
৫০% বাগানের মাটি
২৫% গোবর সার বা কম্পোস্ট
২৫% বালি বা ভার্মি কম্পোস্ট
চাইলে সামান্য হাড়ের গুঁড়া বা সরিষার খোলও ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে মাটি উর্বর হবে এবং গাছ দ্রুত বাড়বে।
৩. চারা বা কলম লাগানো
লেবুর বীজ থেকে গাছ জন্মালেও ফল আসতে সময় লাগে। তাই কলম বা গ্রাফট করা চারা ব্যবহার করা ভালো। এগুলো নার্সারি থেকে সংগ্রহ করা যায়। চারা লাগানোর সময় টবের মাঝখানে একটি গর্ত করে শিকড় ভালোভাবে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এরপর হালকা জল দিতে হবে।
৪. আলো ও তাপমাত্রা
লেবু গাছ সূর্যালোকপ্রেমী। তাই টব এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে প্রতিদিন অন্তত ৬–৮ ঘণ্টা সরাসরি রোদ পায়। ছাদে খোলা জায়গায় রাখলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৫. সেচ ও যত্ন
লেবু গাছে নিয়মিত জল দিতে হবে, তবে অতিরিক্ত জল দেওয়া যাবে না। গ্রীষ্মকালে প্রতিদিন বা একদিন অন্তর জল দিতে হবে, শীতকালে ৩–৪ দিনে একবার দিলেই যথেষ্ট। টবের নিচে যেন জল জমে না থাকে, তা খেয়াল রাখতে হবে।
৬. সার প্রয়োগ
লেবু গাছের জন্য নিয়মিত সার দরকার।
প্রতি মাসে একবার জৈব সার যেমন কম্পোস্ট বা গোবর সার দেওয়া উচিত।
তিন মাস অন্তর সরিষার খোলের জল বা তরল জৈব সার ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফুল আসার সময় সামান্য ফসফরাস ও পটাশ জাতীয় সার দেওয়া হলে ফলন ভালো হয়।
৭. ছাঁটাই ও পরিচর্যা
শুকনো ডালপালা বা রোগাক্রান্ত অংশ নিয়মিত কেটে ফেলতে হবে। গাছ যেন খুব ঘন হয়ে না যায়, সে জন্য মাঝে মাঝে হালকা ছাঁটাই করতে হবে। এতে বাতাস চলাচল ভালো হবে এবং ফলন বাড়বে।
৮. রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ
লেবু গাছে সবচেয়ে সাধারণ রোগ হলো পাতা কুঁকড়ে যাওয়া, পিঁপড়ে ও এফিডের আক্রমণ।
এফিড বা মিলিবাগ হলে সাবান জল স্প্রে করতে হবে।
ছত্রাকজনিত সমস্যা হলে জৈব ছত্রাকনাশক বা নিমের তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
নিয়মিত গাছ পর্যবেক্ষণ করলে রোগ ছড়ানোর আগেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
৯. ফলন ও সংগ্রহ
চারা বা কলম লাগানোর ২–৩ বছরের মধ্যেই লেবু ফল দিতে শুরু করে। গাছ বড় হলে বছরে কয়েকবার ফল আসতে পারে। লেবু সবুজ অবস্থায় সংগ্রহ করা যায়, তবে হলদেটে হলে স্বাদ আরও ভালো হয়।
ছাদবাগানে লেবু গাছ চাষ করা খুব কঠিন কাজ নয়। সঠিক টব, মাটি, আলো, সার এবং যত্ন পেলে গাছ ভালোভাবে বেড়ে ওঠে এবং প্রচুর ফল দেয়। নিজের ছাদে চাষ করা লেবু কেবল স্বাস্থ্যকর নয়, মানসিক আনন্দও এনে দেয়। তাই শখ পূরণ বা প্রয়োজন—যে কারণেই হোক, ছাদবাগানে লেবু গাছের চাষ একটি দারুণ অভিজ্ঞতা হতে পারে।

No comments:
Post a Comment