বর্তমান সমাজে সম্পর্কের কাঠামো আগের মতো শক্তপোক্ত আর থাকছে না। একসময় বিবাহকে আজীবনের বন্ধন হিসেবে দেখা হলেও, এখন সেই ধারণায় বড় পরিবর্তন এসেছে। বিগত কয়েক বছরে বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বিশেষ করে শহুরে জীবনে। প্রশ্ন উঠছে—এটার আসল কারণ কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক জীবনের দ্রুতগতি, কর্মজীবনের চাপ, মানসিক ক্লান্তি ও সময়ের অভাব সম্পর্কের মধ্যে বড় ফাঁক তৈরি করছে। দম্পতিরা একে অপরের জন্য প্রয়োজনীয় সময় বের করতে পারছেন না, যার ফলে ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝি অনেক সময় বড় সংকটে পরিণত হচ্ছে।
অন্যদিকে, স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতাও সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলছে। অনেকেই মনে করছেন, যদি সম্পর্ক মানসিক শান্তি না দেয়, তবে সেটা বজায় রাখার চেয়ে আলাদা হয়ে যাওয়া ভালো। সমাজেও এখন বিচ্ছেদকে আগের মতো ‘কলঙ্ক’ হিসেবে দেখা হচ্ছে না, বরং এটি হয়ে উঠছে একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।
তবে গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, কেবল ব্যক্তিগত কারণে নয়, অর্থনৈতিক চাপও দাম্পত্য জীবনে অস্থিরতা তৈরি করছে। চাকরির অনিশ্চয়তা, আয়-ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতা এবং জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি সম্পর্কে চাপ ফেলছে।
মনোবিজ্ঞানীরা পরামর্শ দিচ্ছেন, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাইলে খোলামেলা কথা বলা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমঝোতাকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। শুধু একে অপরকে দোষারোপ না করে সমস্যার সমাধান খোঁজার প্রবণতা থাকলে অনেক সম্পর্কই রক্ষা পেতে পারে।
অতএব, বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়ার পেছনে একক কোনো কারণ নেই। আধুনিক জীবনের চাপ, মানসিক দূরত্ব, ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন—সব মিলিয়ে বিষয়টি জটিল হয়ে উঠছে। সমাজে সম্পর্কের টেকসই ভিত্তি গড়তে তাই প্রয়োজন সচেতনতা ও সহনশীলতা।
No comments:
Post a Comment