শিরশ্ছেদ থেকে গ্রেনেড বিস্ফোরণ---কিভাবে একজন কৃষকের ছেলে একজন বিপজ্জনক গ্যাংস্টার হয়ে উঠল! কুখ্যাত মনীশ কুশওয়াহার অপরাধের ডায়েরি - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Saturday, September 27, 2025

শিরশ্ছেদ থেকে গ্রেনেড বিস্ফোরণ---কিভাবে একজন কৃষকের ছেলে একজন বিপজ্জনক গ্যাংস্টার হয়ে উঠল! কুখ্যাত মনীশ কুশওয়াহার অপরাধের ডায়েরি


 উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে আতঙ্কের আরেক নাম ছিল মনীশ কুশওয়াহা। কৃষক পরিবারের সন্তান হয়েও জীবনের শুরুতে পথভ্রষ্ট হয়ে অপরাধ জগতে নাম লেখান তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়ে ওঠেন এক কুখ্যাত গ্যাং লিডার। খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে গ্রেনেড হামলা এবং শিরশ্ছেদ—সব ধরনের নৃশংস অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি।


গোপালগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর থানা এলাকার নিরঞ্জনা গ্রামের বাসিন্দা মনীশ কুশওয়াহা বিরুদ্ধে ২৬টিরও বেশি গুরুতর মামলা রয়েছে। এর মধ্যে খুন, অপহরণ, ডাকাতি, পুলিশের উপর হামলা এবং এনকাউন্টারের অভিযোগও আছে। দিয়ারা অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে তিনি ছিলেন সন্ত্রাসের প্রতীক। তার কাছে ছিল আধুনিক অস্ত্রভাণ্ডার, যেগুলো দিয়ে ডাকাতি, বোমা হামলা এবং ব্যবসায়ীদের চাঁদাবাজি চালাতেন।


অপরাধ সাম্রাজ্যের বিস্তার


২০০০-এর দশকেই মনীশ প্রথম আলোচনায় আসেন। ব্যবসায়ীদের মুক্তিপণের জন্য হুমকি দিয়ে তিনি বিহারের আরা ও ভোজপুরে পুলিশি নথিভুক্ত অপরাধী হন। পরে গঠন করেন “কুশওয়াহা গ্যাং”। উত্তরপ্রদেশ-বিহার সীমান্তের শতাধিক গ্রামে তার ত্রাস ছড়িয়ে পড়ে।


২০১০ সালে গাজীপুরে একজন ব্যবসায়ীকে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার বড় অপরাধের ইতিহাস। এরপর বিহারের এক হাসপাতাল মালিকের উপর গ্রেনেড হামলা ও একে-৪৭ দিয়ে গুলি চালিয়ে তিনি আরও কুখ্যাত হয়ে ওঠেন। প্রতিপক্ষকে খুন করে শিরশ্ছেদ করার মতো ভয়ঙ্কর কাণ্ডও ঘটিয়েছেন তিনি। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করতেন, এমনকি নারী ও শিশুদেরও তার দল টার্গেট বানাত।


পুলিশি অভিযান ও লুকিয়ে থাকা


২০১৫ সালে দিল্লি থেকে স্পেশাল সেল তাকে একবার গ্রেপ্তার করলেও, জামিনে বেরিয়ে ফের অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। তখন তার মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ৫০ হাজার টাকা।


২০২০ সালে গোপালগঞ্জে মাছ ব্যবসায়ী কিষাণ বিন্দকে গুলি করে খুন করার ঘটনায় আবারও আলোচনায় আসেন মনীশ। এ সময় পুলিশ তার বাড়ি ভেঙে দেয় এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। তার সহযোগী ও ঘনিষ্ঠ পাপ্পু কুশওয়াহাকে গ্রেপ্তার করা হলেও, মনীশ আত্মগোপনে চলে যান।


গত সাত বছর ধরে তিনি পুলিশের কাছ থেকে পলাতক ছিলেন। বিভিন্ন সময় এনকাউন্টারে আহত হলেও পালাতে সক্ষম হন। জেলে থাকাকালীনও মোবাইল ফোন ব্যবহার করে গ্যাং পরিচালনা করেছেন বলে প্রমাণ মেলে।


গ্রেপ্তার ও ভয়মুক্তি


অবশেষে উত্তরপ্রদেশ এসটিএফ ও বিহার পুলিশের যৌথ অভিযানে মনীশ কুশওয়াহাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গোপালগঞ্জের এসপি অবধেশ দীক্ষিত তার গ্রেপ্তারের খবর নিশ্চিত করেন। গ্রেপ্তারের পর একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যায় মনীশ হেলমেট পরে এসটিএফের বাইকের মাঝখানে বসে আছেন, তার হাত পিছনে বাঁধা।


তার গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল ও গোপালগঞ্জ পুলিশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। দীর্ঘদিনের আতঙ্কের সাম্রাজ্য ভেঙে পড়লেও মনীশ কুশওয়াহার অপরাধের কালো দাগ উত্তরপ্রদেশ-বিহার সীমান্তে এখনও স্পষ্ট।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad