সালামের হাতে তৈরি দুর্গা পাড়ি দিচ্ছে লণ্ডনে - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Sunday, September 21, 2025

সালামের হাতে তৈরি দুর্গা পাড়ি দিচ্ছে লণ্ডনে


উত্তর ২৪ পরগনা, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫: সালামের হাতে তৈরি দেবী দুর্গার মূর্তি পাড়ি দিচ্ছে লণ্ডনে। উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর থেকে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে ফাইবারে তৈরি এই দেবী মূর্তি। 


সামনেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গা পূজা। তবে, কেবল উৎসব বললে ভুল হবে, দুর্গা পূজা হল শিল্প ও সম্প্রীতিরও এক অনন্য মেলবন্ধন। তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন দত্তপুকুরের শিল্পীরা। এক মুসলিম শিল্পী সালামের হাতে তৈরি দেবী দুর্গার মূর্তি পাড়ি দিচ্ছে লণ্ডনে। প্রতিমাটি তৈরি হয়েছে ফাইবার দিয়ে, যা দত্তপুকুরের ফাইবার শিল্পকে আন্তর্জাতিক স্তরে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল। 


বেহালার শিবরামপুরের বাসিন্দা পর্ণা দে। তাঁর মেয়ে বর্তমানে লণ্ডনে থাকেন, সেখানেই এই প্রথম দুর্গা পূজার আয়োজন করেছেন তিনি। তাই দত্তপুকুরের শিল্পী সালামকে এই প্রতিমা তৈরির বরাত দেন। দুই বাই দেড় ফুটের এই প্রতিমায় স্ব-পরিবারে রয়েছেন দেবী দুর্গা।


পর্ণা দে জানান, মূর্তি দেখে তিনি খুব খুশি। তিনি বলেন, 'আমার মেয়ে লণ্ডনে থাকে, প্রথমবার সেখানে পুজো করছে। আমি এবারে এটা নিয়ে সেখানে পাড়ি দেব ২১ তারিখ।' মাটির প্রতিমা ভেঙ্গে যেতে পারে তাই এই ফাইবারে প্রতিমা তৈরি করিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জানান, দেড় মাস আগে মূর্তি তৈরির বরাত দিয়েছেন, মূল্য ৩৫ হাজার টাকা। 


পর্ণা দে আরও বলেন, 'মানবিকতাই বড়। শিল্পী বোধ সবার মধ্যে থাকে না। হিন্দু-মুসলিম কোনও ব্যাপার না।'


দুর্গা প্রতিমাটি প্রথমে মাটি দিয়ে তৈরি করেন বিশ্বজিৎ বাইন। পুজোর সময় ব্যস্ততা থাকে তবুও এই মূর্তি তৈরি করতে পেরে তিনি আনন্দিত। তিনি বলেন, 'আমি শুনেছি এটা লণ্ডনে যাবে। অনেক ব্যস্ততার মধ্যেই এটা করেছি, অনেক সূক্ষ্ম কাজ থাকে।' 


বিশ্বজিৎ বাইন মাটি দিয়ে প্রতিমার প্রাথমিক রূপ দিলেও মুসলিম শিল্পী সালাম ফাইবার দিয়ে এটিকে সম্পূর্ণ করেন। একজন মুসলিম হয়েও তাঁর এই শিল্পকর্ম ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য বার্তা বহন করেছে। 


এ বিষয়ে জানতে চাইলে সালাম বলেন, 'ধর্ম বিষয় নিয়ে ভাবনা চিন্তা কিছু নেই। সবাই মিলে মিশে এই কাজটা করে চলাই ব্যাপার। কর্মটাই মেনে চলা উচিৎ।' তিনি জানান, এই কাজটা করতে ১৫ দিন মত সময় লেগেছে। 


দত্তপুকুরের ফাইবার লণ্ডনে যাচ্ছে, এ বিষয়ে তিনি বলেন, 'এখন দত্তপুকুরের নাম অনেক ফেমাস হয়েছে। কারণ এখানকার শিল্পীদের কাজ ভালো।' তাঁর কথায়, 'কাজটা করে খুব ভালো লাগছে। আরও সবাই এলে করে দেব। ধর্ম নিয়ে কোনও ভেদাভেদ নেই।'


সালাম ছাড়াও প্রতিমায় রঙের কাজ করেছেন দেবাশীষ কুণ্ড। বিভিন্ন রঙে দেবী দুর্গা সহ অন্যান্য দেবদেবীর মূর্তি ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। রঙয়ের কাজ শেষ হলেই এই প্রতিমা লণ্ডনের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেবে। 

দেবাশীষ কুণ্ড বলেন, দত্তপুকুর থেকে প্রায়ই ঠাকুর যাচ্ছে বিদেশে। এর আগেও একটা ইতালিতে পাঠিয়েছি আমি।' তিনি জানান, পর্তুগাল, আমেরিকাতেও এখান থেকে মূর্তি গিয়েছে। তিনি বলেন, 'গ্ৰাহকের পছন্দ অনুযায়ী কাজটা করতে পেরেছি বলে আমি খুশি।'


দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ধর্ম নিয়ে বিভেদ আর হানাহানির খবর যেখানে প্রায় প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যমের পাতায় উঠে আসছে, সেখানে দত্তপুকুরের শিল্পীরা তাঁদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে প্রমাণ করে দিলেন যে, শিল্পের কাছে ধর্ম তুচ্ছ। তাদের এই শিল্পকর্মে ফুটে উঠেছে মানুষে-মানুষে ভালোবাসার এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন। এই প্রতিমা-ই শুধু লণ্ডনে যাচ্ছে না, সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে বাংলা এবং ভারতীয় সংস্কৃতির এক মহান ঐতিহ্য।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad